ভোট পর্যবেক্ষণে এবার ২১০টি সংস্থা আবেদন করেছে নির্বাচন কমিশনে (ইসি)। দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে আগ্রহী স্থানীয় সংস্থাগুলো নিবন্ধন পেতে চায়। যাচাই-বাছাইয়ে যোগ্য বিবেচিত হলে নিবন্ধিত সংস্থাগুলো আগামী পাঁচ বছরের জন্য সংসদ ও স্থানীয় সরকারের সব নির্বাচন পর্যবেক্ষণের সুযোগ পাবে। নির্বাচন কমিশনের জনসংযোগ শাখা থেকে এ তথ্য পাওয়া গেছে।
ইসির সহকারী পরিচালক (জনসংযোগ) মো. আশাদুল হক জানান, এবার ২ ফেব্রুয়ারি নির্ধারিত সময়ের মধ্যে ১৯৯টি এবং নির্ধারিত সময়ের পরে আরও ১১টি সংস্থার আবেদন জমা পড়েছে। ইসির আইন শাখার যুগ্মসচিবের নেতৃত্বে সাত সদস্যের পর্যবেক্ষক সংস্থার নিবন্ধন আবেদন যাচাই-বাছাই কমিটির সভা হয়েছে বৃহস্পতিবার।
তিনি জানান, আগামী ১৫ থেকে ২০ দিনের মধ্যে এসব আবেদনের প্রাথমিক যাচাই-বাছাই হবে। এরপর প্রতিবেদন নির্বাচন কমিশনে উপস্থাপন করা হবে। প্রাথমিক বাছাইয়ে যাদের আবেদন টিকবে তাদের বিরুদ্ধে কোনও ধরনের দাবি-আপত্তি আছে কিনা জানতে ১৫ দিনের মধ্যে সময় দিয়ে একটি গণবিজ্ঞপ্তি জারি করা হবে। যদি কোনও সংস্থার বিরুদ্ধে অভিযোগ আসে তাহলে কমিশন উভয় পক্ষকে ডেকে শুনানি করে সিদ্ধান্ত নেবেন।
ইসির জনসংযোগ সহকারী পরিচালক জানান, বিদ্যমান নিবন্ধিত সংস্থাগুলোর মেয়াদ শেষ হতে যাচ্ছে ১১ জুলাই। সেক্ষেত্রে ইসির কর্মপরিকল্পনা অনুযায়ী জুনের মধ্যে চূড়ান্ত কাযক্রম শেষ হবে আশা করা যায়।
কাজী হাবিবুল আউয়াল কমিশন এ বছরের শেষে বা আগামী বছরের শুরুতে যে কোনও দিন দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন করবে।
সবশেষ একাদশ সংসদ নির্বাচনের আগে ২০১৮ সালে ১১৯টি সংস্থাকে পাঁচ বছরের জন্য নিবন্ধন দিয়েছিল তৎকালীন কে এম নূরুল হুদা কমিশন।
ইসি কর্মকর্তা জানান, নিবন্ধন চেয়ে আবেদনের নির্ধারিত যোগ্যতার পাশাপাশি গত পাঁচ বছর (২০১৮ থেকে ২০২২ ডিসেম্বর) ধরে যারা নিবন্ধিত হয়েও কোনও নির্বাচন পর্যবেক্ষণ করেনি তাদের আবেদন বাতিল হবে। তবে যেসব দল ২০১৮ সালে নিবন্ধিত হতে পারেনি, কিন্তু মেয়াদ থাকাকালীন কোনও সংসদ ও স্থানীয় সরকারের সাধারণ বা উপনির্বাচন পর্যবেক্ষণ করে থাকলে আবেদন যোগ্য বিবেচিত হবে।
নবম সংসদ নির্বাচনের আগে প্রথমবারের মতো পর্যবেক্ষক সংস্থার নিবন্ধন চালু হয়। এক বছর করে মেয়াদ নির্ধারণ করা হলেও পরে এ মেয়াদ পাঁচ বছর করে নীতিমালা প্রণয়ন করা হয়। ২০০৮ সালে ১৩৮টি সংস্থাকে নিবন্ধন দেয় তৎকালীন এটিএম শামসুল হুদা কমিশন। তখন নিবন্ধনের মেয়াদ ছিল একবছর। ২০১১ সালে ১২০টি পর্যবেক্ষক সংস্থাকে নিবন্ধন দেওয়া হয়। এসব সংস্থার নিবন্ধনের মেয়াদ ২০১৬ সালের জানুয়ারিতে শেষ হওয়ার পর কাজী রকিবউদ্দিন আহমদ কমিশন তা আরও এক বছর বাড়ায়। নবম সংসদ নির্বাচনে দেশীয় ৭৫টি সংস্থা ভোট পর্যবেক্ষণে থাকলেও দশম সংসদে তা কমে ৩৫টিতে দাঁড়ায়। ২০১৮ সালে আবেদন করে ১৯৯টি সংস্থা, নিবন্ধন পায় ১১৯টি।একাদশ সংসদ নির্বাচনে পর্যবেক্ষণ করে ৮১টি দেশি পর্যবেক্ষক সংস্থার ২৫ হাজার ৯০০ জন প্রতিনিধি। এছাড়া ৩৮ জন (ফেমবোসা, এএইএ, ওআইসি ও কমনওয়েল্থ থেকে আমন্ত্রিত) বিদেশি পর্যবেক্ষক, বিভিন্ন বিদেশি মিশনের ৬৪ জন কর্মকর্তা এবং দূতাবাস ও বিদেশি সংস্থায় কর্মরত ৬১ জন বাংলাদেশি ভোট পর্যবেক্ষণ করে।
খসড়া সমন্বিত সাংবাদিক নীতিমালা চায় ইসি
ভোটের দিন সাংবাদিক ও পর্যবেক্ষকরা নির্বাচন কমিশনের অনুমোদিত ও অনুমোদন সূচক স্টিকারযুক্ত যানবাহন ব্যবহার করেন। নির্বাচন পর্যবেক্ষণ নীতিমালার আওতায় এতোদিন তা করা হলেও একাদশ সংসদ নির্বাচনের আগে এক ডজন নির্দেশনা সম্বলিত নীতিমালা দেওয়া হয় সাংবাদিকদের জন্য।
ইসি কর্মকর্তারা জানান, দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে নির্বাচনি সংবাদ সংগ্রহে একটি সমন্বিত সাংবাদিক নীতিমালা খসড়া প্রস্তুতির কাজ চলছে। প্রস্তাবিত নীতিমালা নিয়ে গণমাধ্যকর্মীদের সঙ্গে মতবিনিময় করার পরিকল্পনাও রয়েছে।