ইউক্রেনে রাশিয়ার সামরিক অভিযান শুরুর পর পশ্চিমা দেশগুলো মস্কোর সঙ্গে তাদের বাণিজ্যিক সম্পর্ক গুটিয়ে ফেললেও, ভারতের সঙ্গে মস্কোর বাণিজ্যিক কার্যক্রম ক্রমান্বয়ে বেড়েছে। এতে বর্তমানে রাশিয়া ভারতের পঞ্চম শীর্ষ বাণিজ্যিক অংশীদারে পরিণত হয়েছে।
শনিবার (১১ মার্চ) ভারতের বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের বরাত দিয়ে রাশিয়ার রাষ্ট্র নিয়ন্ত্রিত সংবাদমাধ্যম আরটি এ তথ্য জানিয়েছে।
ভারত সবচেয়ে বেশি বাণিজ্যিক লেনদেন করে থাকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে। এর পরে দেশটির বাণিজ্যিক অংশীদার হচ্ছে চীন, সংযুক্ত আরব আমিরাত ও সৌদি আরব।
দেশটির বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের পরিসংখ্যান বলছে, বিগত ১০ মাসে দুই দেশের মধ্যকার বাণিজ্যিক লেনদেন তিনগুণ বেড়েছে। এতে মস্কো ভারতের পঞ্চম শীর্ষ বাণিজ্যিক অংশীদারে পরিণত হয়েছে।
১৯৯০ দশকের শেষ দিকে থেকে ভারত তাদের বাণিজ্যিক পরিসংখ্যান গণনা করে আসছে। সে সময় থেকে এবারই প্রথম রাশিয়া দেশটির পঞ্চম শীর্ষ বাণিজ্যিক অংশীদারের জায়গা দখল করেছে।
এর আগে ২০২১-২২ অর্থবছরে মস্কো বাণিজ্যিক অংশীদার হিসেবে ২৫তম স্থানে ছিল। তার আগে কোনো সময়েই মস্কো ভারতে শীর্ষ ১০ বাণিজ্যিক অংশীদারের তালিকায় জায়গা করতে পারেনি। শুধু মাত্র ১৯৯৭-৯৮ অর্থবছরের রাশিয়া বাণিজ্যিক অংশীদার হিসেবে ১৬তম স্থানে ছিল।
যেখানে ২০২১-২২ অর্থবছরে (এপ্রিল-মার্চ) মস্কো ও নয়াদিল্লির বাণিজ্যিক লেনদেনের আকার মাত্র ১৩ দশমিক ১ বিলিয়ন ডলার ছিল, সেখানে চলতি ২০২২-২৩ অর্থবছরের জানুয়ারি পর্যন্ত সময়ে দেশ দুইটির মধ্যকার লেনদেন ৩৯ দশমিক ৭ বিলিয়ন ডলার ছাড়িয়েছে। এর মধ্যে ৩৭ দশমিক ৩ বিলিয়ন ডলারের পণ্যেই মস্কো থেকে আমদানি করেছে নয়াদিল্লি।
এ বাণিজ্যিক লেনদেনের একটি বড় অংশ জুড়েই রয়েছে জ্বালানি আমদানি। ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধ শুরুর পর পশ্চিমারা রাশিয়ার বাজার ছেড়ে গেলে মস্কো থেকে জ্বালানি তেল আমদানি বাড়িয়ে দেয় বিশ্বের তৃতীয় বৃহত্তম অপরিশোধিত তেল আমদানিকারক ভারত। কেননা, পশ্চিমা ক্রেতা হারিয়ে হন্য হয়ে একটি বিকল্প বাজার খুঁজতে মরিয়া রাশিয়া তেল বিক্রিতে ব্যাপক আকারে ছাড় দিতে বাধ্য হয়। যার ফায়দা লুটেছে ভারত।
ফলে রাশিয়া থেকে রেকর্ড আকারে জ্বালানি তেল আমদানি করেছে ভারত। এরই ধারাবাহিকতায় টানা পাঁচ মাস ধরে ভারতের শীর্ষ অপরিশোধিত তেল সরবরাহকারী হয়ে দাঁড়িয়েছে মস্কো।
গত ফেব্রুয়ারি মাসেও দেশটি থেকে দৈনিক ১ দশমিক ৬২ মিলিয়ন ব্যারেল তেল আমদানি করেছে ভারত। বর্তমানে ভারতের অপরিশোধিত তেলের বাজারের ৩৫ শতাংশ রাশিয়ার দখলে রয়েছে। যেখানে যুদ্ধ শুরুর আগে ২০২১ সালে ভারতের বাজারে রাশিয়ার অস্তিত্ব ১ শতাংশেরও কম ছিল।