‘বিএনপির সঙ্গে সংলাপ নয়, নির্বাচন ইস্যুতে কারো চাপে কিছু যায় আসে না’

নিজস্ব প্রতিবেদক

ফাইল ছবি

বিএনপি ভদ্রতা জানে না বলে মন্তব্য করেছেন আওয়ামী লীগের সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। আগামী নির্বাচনের আগে তাদের সঙ্গে কোনো সংলাপের সম্ভাবনাও নাকচ করেছেন তিনি। নির্বাচন ইস্যুতে কারোর চাপে কিছু যায় আসে না বলেও সাফ জানিয়ে দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী।

সদ্য সমাপ্ত কাতার সফর নিয়ে সোমবার বিকালে সাড়ে ৪টায় তার সরকারি বাসভবন গণভবনে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রী এসব কথা বলেন। সংবাদ সম্মেলনে লিখিত ভাষণ ছাড়াও সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তরে তিনি কথা বলেন।

universel cardiac hospital

আগামী নির্বাচন ঘিরে আন্তর্জাতিক কোনো চাপ আছে কি না, এক সাংবাদিকের প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘এমন কোনো চাপ নেই যা শেখ হাসিনাকে দিতে (টলাতে) পারে।’

শেখ হাসিনা বলেন, এমন কোনো চাপ নেই যেটা শেখ হাসিনাকে দিতে পারে, এটা মাথায় রাখতে হবে। কারণ আমার সাহস একমাত্র আমার জনগণ। আর আমার আল্লাহ আছে এবং আমার বাবা-মার আশীর্বাদ ও দোয়া আছে। কে কী চাপ দিলো, না দিলো এটাতে কিছু আসে যায় না। আমি আল্লাহ ছাড়া কাউকে ভয় পাই না। জনগণের স্বার্থে কাজ করি। জনগণ যা বলবে আমি তাই করব। বিদেশি চাপ আমাকে কিছুই করতে পারবে না। জনগণের কল্যাণে কাজ করে যাচ্ছি। জনগণের কল্যাণে যা করার দরকার আমরা তাই করব।

তিনি বলেন, বহু চাপই ছিল। পদ্মা সেতুর করার সময়ও কম দেওয়া হয়নি। পৃথিবীর বিভিন্ন দেশ থেকে একের পর এক ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে ফোন দিয়েছিল। ফোন দেওয়ার একটি কারণ; একজন ব্যক্তিকে একটি ব্যাংকের এমডি বানাতে হবে। একটা এমডি পদের মধ্যে কী মধু আছে সেটা আমি জানি না। একজন বিশেষ ব্যক্তিকে এমডি পদে রাখতে হবে। তারপর পদ্মা সেতুর অর্থয়ান বন্ধ করেছিল। পরে নিজেদের পয়সায় পদ্মা সেতু করেও তাদেরকে দেখিয়েছি। সুতরাং ওই চাপে আমাদের কিছু আসে যায় না।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘যারা অভিযোগ করছে করুক। বিদেশি দূতাবাসে যাচ্ছে, বিদেশি কূটনীতিকদের ডেকে এনে বৈঠক করছে, বহির্বিশ্বে চিঠি পাঠাচ্ছে। এতে আমার কিছু যায় আসে না।’

‘কত ফোন এসেছে, কত হুমকি এসেছে, আমাদের উন্নয়ন থেমে গেছে? আমাদের অগ্রযাত্রায় প্রতিবন্ধকতা এসেছে, তাই বলে আমাদের উন্নয়ন কাজ থেমে গেছে?’

বিএনপির সঙ্গে সংলাপ নয়

দ্বাদশ জাতীয় নির্বাচনের উপলক্ষে বিএনপির সঙ্গে কোনো সংলাপ হবে কিনা—এক সাংবাদিকের এমন প্রশ্নে শেখ হাসিনা বলেন, কাদের সঙ্গ সংলাপ করব, যারা আমার বাবা-মার হত্যাকারী এবং আইভি রহমানের হত্যাকারী। আমাকে হত্যার চেষ্টা করেছিল। তারপরও তাদেরকে সহ্য করে করেছি। এমনকি খালেদা জিয়ার ছেলে যখন মারা গেল তখন তার বাড়ি গিয়েছিলাম। কিন্তু কী করেছে, আমাকে তার বাড়িতে ঢুকতে দেয়নি। বাড়ির দরজার বন্ধ করে দিয়েছিল। আমি বাইরে দাঁড়িয়ে ছিলাম। তারপর তাদের অনেক কিছু সহ্য করেছি। তাদের সঙ্গে কীসের সংলাপ। কেউ পারত যার বাবা-মাকে হত্যা করেছে তাদের সঙ্গে সংলাপ করতে। যারা এতোটুক ভদ্রতা জানে না তাদের সঙ্গে কীসের সংলাপ। যতটুকু সহ্য করেছি ততটুকু দেশের স্বার্থে, নিজের স্বার্থে নয়।

বিএনপির প্রতি ইঙ্গিত করে প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, যে দল বেশি লাফায় সে দলের দুই নেতাই হচ্ছে সাজাপ্রাপ্ত আসামি। সাজাপ্রাপ্ত আসামিরা না পারবে ইলেকশন করতে, না পারবে ক্ষমতায় আসতে।

তিনি বলেন, বিএনপি নিজের গঠনতন্ত্র নিজেরা ভঙ্গ করছে। কারণ, তাদের গঠনতন্ত্রে আছে সাজাপ্রাপ্ত আসামি দলের নেতা হতে পারে না। এখন সেই সাজাপ্রাপ্ত আসামিকেই দলের নেতা বানিয়ে রেখে দিয়েছে। এখন এই দলের কাছে কী আশা করবেন।

জনগণের ভোটের অধিকার বাস্তবায়ন করেছি

আওয়ামী লীগের আমলে ভোট চুরির সুযোগ নেই বলে মন্তব্য করেন প্রধানমন্ত্রী। বলেন, ‘নির্বাচন কমিশনকে অবাধ ও নিরপেক্ষ করে গড়ে তোলা হয়েছে। জনগণ যাকে খুশি তাকে ভোট দেবে। জনগণের ভাতের অধিকার এবং ভোটের অধিকার আমরা বাস্তবায়ন করেছি।’

এক প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা থাকলে উন্নয়ন হয় আওয়ামী লীগ তা প্রমাণ করেছে। এর জন্য ধৈর্য দরকার। আওয়ামী লীগ সবসময় দায়িত্ববোধ নিয়ে কাজ করে। বর্তমান সরকার টানা ক্ষমতায় থাকায় উন্নয়নের ধারা অব্যাহত আছে।’

জনগলই আওয়ামী লীগের মুল শক্তি উল্লেখ করে ক্ষমতাসীন দলটির সভাপতি শেখ হাসিনা বলেন, ‘জনগণের কথা মাথায় রেখেই কাজ করে যাচ্ছে সরকার। নির্বাচন উপলক্ষে স্থিতিশীলতা বজায় রাখতে কাজ করা হচ্ছে। আওয়ামী লীগ সবসময় জনগণের প্রতি দায়িত্ববোধ থেকে কাজ করে।’

রোহিঙ্গাদের তাদের দেশে ফেরত যেতে হবে

এক সাংবাদিক প্রশ্ন রাখেন রোহিঙ্গারা বাংলাদেশের জন্য বোঝা হয়ে যাচ্ছে কি না? উত্তরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘রোহিঙ্গাদের তাদের দেশে ফেরত যেতে হবে, কিন্তু তাই বলে মিয়নমারের সঙ্গে আমরা ঝগড়া করতে চাই না।

‘যদিও রাশিয়া ইউক্রন যুদ্ধের কারণে রোহিঙ্গদের তাদের দেশে ফেরত পাঠানোর বিষয়টি একটু অন্য দিকে চলে গেছে। মানুষের পাশে আমাদের থাকতে হবে। যুদ্ধের সময় আমরাও শরনার্থী ছিলাম সেটাও মনে রাখতে হবে।’

ড. ইউনূসের পক্ষে বিশ্বের ৪০ নেতার চিঠি নিয়ে প্রশ্ন

অপর এক প্রশ্নের জবাবে সম্প্রতি নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে নিয়ে বিভিন্ন দেশের ৪০ নেতার চিঠির প্রাসঙ্গিকতা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন প্রধানমন্ত্রী। বলেন, ‘তিনি (ইউনূস) একজন নামিদামি ব্যক্তি, কিন্তু এত নামিদামি ব্যক্তি তারপরও তাকে ৪০ জন ব্যক্তির নাম ভিক্ষা করে বিজ্ঞাপন দিতে হয়? এটাই আমার প্রশ্ন।’

মুহাম্মদ ইউনূস প্রতিষ্ঠিত গ্রামীণ টেলিকমের প্রায় দুইশ শ্রমিক-কর্মচারী তাদের কোম্পানির লভ্যাংশ হিসেবে পাওনা ৪৩৭ কোটি টাকা আদায়ে আদালতে ১১০টি মামলা করেছিলেন। সে বিষয়ের দিকে ইঙ্গিত করে সরকারপ্রধান বলেন, দেশে আইন আছে এবং আইন অনুযায়ী সব চলবে। আমাদের বিচার বিভাগ সম্পূর্ণ স্বাধীন। আমরা শ্রমিকদের অধিকার সংরক্ষণ করি। যারা ট্যাক্স ঠিকমত দেয় সেটা আলাদা বিভাগ আছে ট্যাক্স আদায় করে।’

‘এই সমস্ত বিষয়ে কেউ যদি কোনো রকম আইন ভঙ্গ করে, শ্রমিকদের অধিকার শ্রম আদালত সেটা দেখে। সরকারপ্রধান হিসেবে এখানে তো আমার কিছু করার নেই। এর বাইরে আমি বাকি বলব? পদ্মাসেতু কিন্তু করে ফেলেছি খালি এটুকু সবাইকে স্মরণ করিয়ে দিলাম।’

জ্বালানি চাহিদা পূরণে পাশে থাকবে কাতার

বাংলাদেশের ক্রমবর্ধমান জ্বালানি চাহিদা পূরণে কাতার পাশে থাকবে বলেও জানান প্রধানমন্ত্রী। কাতার সফরকালে দেশটির আমির শেখ তামিম বিন হামাদ বিন খলিফা আল থানির সঙ্গে বৈঠকে পাওয়া আশ্বাসের কথাও তিনি উল্লেখ করেন।

গত ৮ মার্চ প্রধানমন্ত্রী কাতার সফর শেষে দেশে ফেরেন। কাতারের আমির শেখ তামিম বিন হামাদ বিন খলিফা আল থানি ও জাতিসংঘের মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেসের আমন্ত্রণে এলডিসি সম্মেলনে যোগ দিতে ৪ মার্চ কাতার সফরে যান প্রধানমন্ত্রী।

স্বল্পোন্নত দেশগুলো তাদের ন্যায্য পাওনা চায়

লিখিত বক্তব্যে প্রধানমন্ত্রী বলেন, স্বল্পোন্নত দেশগুলো করুণা বা দাক্ষিণ্য চায় না বরং আন্তর্জাতিক প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী তাদের ন্যায্য পাওনা চায়। সফরে করোনা মহামারি ও চলমান ইউক্রেন যুদ্ধের ফলে সৃষ্ট বিশ্বব্যাপী খাদ্য, জ্বালানি ও আর্থিক সংকটের পরিপ্রেক্ষিতে স্বল্পোন্নত দেশগুলোর জন্য নেওয়া বিভিন্ন আন্তর্জাতিক অঙ্গীকার অগ্রাধিকার ভিত্তিতে বাস্তবায়নের দাবি জানিয়েছি।

এ ক্ষেত্রে আমি আন্তর্জাতিক বাণিজ্য, বিনিয়োগ, আর্থিক সহায়তা, বৈদেশিক ঋণ পরিশোধ, প্রযুক্তি হস্তান্তর, নিরাপদ অভিবাসন, জলবায়ু অর্থায়ন প্রাপ্তি ইত্যাদি বিষয়ে স্বল্পোন্নত দেশগুলোর বিশেষ প্রয়োজনের কথা তুলে ধরি।

এছাড়া বাংলাদেশসহ উত্তরণের পথে থাকা দেশগুলোর উন্নয়ন অর্জনকে গতিশীল রাখতে বর্ধিত সময়ের জন্য এলডিসিদের জন্য প্রযোজ্য অগ্রাধিকারমূলক বাণিজ্য সুবিধাসহ অন্যান্য সুবিধা অব্যাহত রাখার আহ্বান জানান প্রধানমন্ত্রী।

শেয়ার করুন