বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি এবং ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর-৩ আসনের সংসদ সদস্য যুদ্ধাহত বীর মুক্তিযোদ্ধা র আ ম উবায়দুল মোকতাদির চৌধুরী বলেছেন, আজকের যে বাংলাদেশ এই বাংলাদেশ কখনোই স্বাধীন ছিল না। এই ভূখণ্ড নিয়ে স্বাধীনতার স্বপ্ন সকলে দেখেননি। পাকিস্তান হওয়ার আগে শুধু এই ভূখণ্ড নিয়ে স্বাধীনতার স্বপ্নও কেউ দেখননি। পাকিস্তান হওয়ার আগে শহীদ সোহরাওয়ার্দী, আবুল হাশিম এবং শরৎচন্দ্র ভোস, তাদের একটা প্রস্তাবনা ছিল সমাজতান্ত্রিক বাংলাদেশ গঠন করার জন্য, সেটি হয়নি। কংগ্রেসের নেতারাও এটা চাননি এবং কার্যত মুসলিম লীগের নেতারাও এটা চাননি। তার কারণ ১৯৪৭ সালে যখন দেশভাগ হয়, তখন মুসলিম লীগের নেতারা তড়িঘড়ি করে কোলকাতা ছেড়ে যেভাবে ঢাকায় আসলেন সেটি দেখলেই বুঝা যায়।
‘তখন সোহরাওয়ার্দী বাংলার প্রধানমন্ত্রী ছিলেন এবং তিনি স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশ চেয়েছিলেন কিন্তু তিনি পারেননি। বঙ্গবন্ধু এই কথাটি জানতেন। কারণ তিনি এই আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন।’
শুক্রবার (১৭ মার্চ) জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর ১০৩তম জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা প্রশাসনের আয়োজিত আলোচনা সভা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে তিনি এসব কথা বলেন।
উবায়দুল মোকতাদির বলেন, বাংলার পক্ষে বিভিন্ন সময়ে অনেকে অনেক কথা বলেছেন, কিন্তু বঙ্গবন্ধুর মতো জোড়ালোভাবে কেউ কখনো কথা বলেননি। বঙ্গবন্ধু কেমন ছিলেন? শুধু কী বাংলার পক্ষে কথা বলা একমাত্র ব্যক্তি? না। আপনারা একটু চিন্তা করুন তো, আমাদের যারা মন্ত্রী আছেন, তাদেরকে যদি আজকে বলা হয়- আপনি মন্ত্রিত্ব ছেড়ে দিয়ে পার্টির কাজ করেন, তারা মন্ত্রিত্ব ছাড়বেন নাকি পার্টি ছেড়ে দিবেন, কোনটা ছেড়ে দিবেন আপনাদের মনে হয়? আমার তো মনে হয়, পার্টি ছেড়ে দিবেন, মন্ত্রিত্ব ছাড়বেন না। বঙ্গবন্ধু কিন্তু মন্ত্রিত্ব ছেড়ে দিয়ে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক হয়েছিলেন এবং এদেশের মানুষকে স্বাধীন সার্বভৌম রাষ্ট্র উপহার দেওয়ার জন্য কাজ করেছিলেন
মোকতাদির চৌধুরী বলেন, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়ার অজপাড়া গ্রামে জন্মগ্রহণ করে পুরো জাতিকে নেতৃত্ব দিয়েছিলেন। জনগণের সঙ্গে তার একটি আত্মিক সম্পর্ক ছিল। বাংলার জনগণকে কখনোই তিনি ছেড়ে যাননি। বাঙালিকে তাদের কাঙ্ক্ষিত স্বাধীনতা এনে দিয়েছিলেন। ফলে তিনি বাঙালির হৃদয়ে সদা অমর হয়ে থাকবেন।
জন্মদিনে বঙ্গবন্ধুর বর্ণাঢ্য রাজনৈতিক জীবনের স্মৃতিচারণা করে বলেন, বঙ্গবন্ধু যে ক্ষুধা ও দারিদ্র্যমুক্ত দেশ গড়তে চেয়েছিলেন, এ দেশকে একটি ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্র হিসেবে দেখতে চেয়েছিলেন, তার সে আদর্শ ধারণ করে আমাদেরকে এগিয়ে যেতে হবে।
এর আগে শুক্রবার সকালে শহরের লোকনাথ ট্যাংকের পাড় ময়দান থেকে জেলা প্রশাসক মো. শাহগীর আলম ও পুলিশ সুপার মোহাম্মদ শাখাওয়াত হোসেনের নেতৃত্বে বর্ণাঢ্য র্যালি বের হয়। এতে বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থী, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠনের নেতাকর্মীরা অংশগ্রহণ করেন। পরে র্যালিটি শহরের প্রধান প্রধান সড়ক প্রদক্ষিণ করে শহরের বঙ্গবন্ধু স্কয়ারে গিয়ে শেষ হয়।
পরে বঙ্গবন্ধু স্কয়ারে জাতির পিতার প্রতিকৃতিতে পুষ্পস্তবক অর্পণ করেন উবায়দুল মোকতাদির চৌধুরী। এ ছাড়া জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে জেলা প্রশাসক মো. শাহগীর আলম ও জেলা পুলিশের পক্ষে পুলিশ সুপার মোহাম্মদ শাখাওয়াত হোসেন জাতির পিতার প্রতিকৃতিতে পুষ্পস্তবক অর্পণ করেন। পরে সর্বস্তরের মানুষের শ্রদ্ধা নিবেদনের পর প্রতিকৃতিস্থলটি উন্মুক্ত করে দেয়া হয়।