পেনশনের বয়স বাড়ানোয় তীব্র আন্দোলন ফ্রান্সে, জনতা-পুলিশ সংঘর্ষ

মত ও পথ ডেস্ক

ছবি : ইন্টারনেট

ফ্রান্সে সরকারি-আধাসরকারি ও বেসরকারি চাকরি থেকে অবসর গ্রহণের বয়স সংস্কারের যে উদ্যোগ নিয়েছে সরকার, তার বিরুদ্ধে তীব্র আন্দোলন শুরু হয়েছে দেশটিতে। শুক্রবার রাজধানী প্যারিসের প্লাসে দে লা কনকর্ড থেকে কয়েক ডজন বিক্ষোভকারীকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।

প্লাসে দে লা কনকর্ড ফ্রান্সের পার্লামেন্ট ভবনের কাছাকাছি। রাজধানী ছাড়াও দেশটির বোর্দো, তৌলন এবং স্ট্রাসবার্গ শহরে বিক্ষোভ চলছে বলে জানা গেছে।

ফ্রান্সে চাকরি থেকে অবসর গ্রহণের বয়সসীমা সংস্কারের ব্যাপারটি নিয়ে আলোচনা চলছে গত দু’মাস ধরে। ইতোমধ্যে এই প্রস্তাবের পক্ষে ও বিপক্ষে জনমতও গঠিত হয়েছে। সরকারপন্থীদের দাবি— পেনশনের বয়সসীমা বাড়ালে তা দেশের সার্বিক কর্মসংস্থানে কোনো চাপ ফেলবে না এবং প্রশাসনসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে যে অচলাবস্থা শুরু হয়েছে, সেটি ঠেকাবে।

তবে পার্লামেন্টের বিরোধী দলগুলো, কয়েকটি ট্রেড ইউনিয়ন এবং জনসাধারণের একাংশ সরকারের এই প্রস্তাব নিয়ে একমত হতে পারেনি। গত দু’মাস এ নিয়ে পার্লামেন্টে তুমুল তর্ক-বিতর্ক হয়েছে, একাধিক ধর্মঘটও হয়েছে দেশটিতে।

তবে বিক্ষোভের সূত্রপাত হয়েছে গত বৃহস্পতিবার পেনশনের বয়সসীমা বর্ধিতকরণের সিদ্ধান্ত কার্যকর করার পর। ওই দিন প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রোঁর নেতৃত্বাধীন সরকার অবসরগ্রহণের বয়সসীমা ৬২ বছর থেকে বাড়িয়ে ৬৪ করার ঘোষণা দেয়। তবে এই সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে এ সংক্রান্ত বিল পার্লামেন্টে উত্থাপন ও তার ওপর আইনপ্রণেতাদের ভোট প্রদানের ব্যাপারটি ঘটেনি, যা একটি গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় অবাশ্যক।

মূলত এই ব্যাপারটিই বিক্ষোভের কারন। বুধবার এই ঘোষণার পর বৃহস্পতিবার ফ্রান্সের বামপন্থী রাজনৈতিক দলগুলোর জোট নুপেসের পার্লামেন্ট সদস্যরা ও স্বতন্ত্র আইনপ্রণেতারা সরকারের এই পদক্ষেপের বিরুদ্ধে অনাস্থা প্রস্তাব উত্থাপন করেন। পরের দিন বৃহস্পতিবার একই পথে হাঁটে দেশটির প্রধান বিরোধী দল ন্যাশনাল র‌্যালি পার্টিও। এই দলটি ফ্রান্সের উগ্র ডানপন্থী দল হিসেবে পরিচিত।

ন্যাশনাল র‌্যালি পার্টির প্রেসিডেন্ট মেরিন লে পেন বৃহস্পতিবার পার্লামেন্ট ভবনে সাংবাদিকদের বলেন, ‘পার্লামেন্টে ভোটের জন্য বিল না এনে হুট করে কোনো সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন করা ফ্রান্সের গণতন্ত্রের ঐতিহ্যের সঙ্গে একেবারেই সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়। এট প্রমাণ করছে যে এই সরকার সম্পূর্ণ ব্যর্থ এবং নিজের ক্ষমতা ধরে রাখতে মরিয়া।’ ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ও প্রধানমন্ত্রীর পদত্যাগও দাবি করেন তিনি।

এদিকে, সরকারি ঘোষণার পর অল্প কিছুক্ষণের মধ্যে রাজধানীসহ বিভিন্ন শহরে সড়কে নেমে আসেন শত শত বিক্ষোভকারী। এসময় তারা সড়কের আশ-পাশে ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করেন, পুলিশের সঙ্গে সংঘাতেও জড়ান।

বার্তাসংস্থা এএফপিকে এক বিক্ষোভকারী বলেন, ‘আমরা একদম ছাড় দেব না। এখনও সময় আছে, সরকারকে এই সিদ্ধান্ত বাতিল করতে হবে।’

আরেক বিক্ষোভকারী বলেন, ‘সরকারের এই পদক্ষেপ পরিষ্কারভাবে গণতন্ত্রের লঙ্ঘণ… গত কয়েক সপ্তাহ ধরে ফ্রান্সে যে আলোচনা চলছে— তাকে পরিপূর্ণভাবে উপেক্ষা করা।’

তবে ফ্রান্সের মধ্যপন্থী ট্রেড ইউনিয়ন সিএফডিটির শীর্ষ নেতা লরেন্ট বের্গার বিবিসিকে বলেন, তারা মূলত  চাইছেন সরকারি সিদ্ধান্ত প্রত্যাহার। এই আন্দোলনকে সরকারবিরোধী আন্দোলনে রূপ দেওয়ার পরিকল্পনা আপাতত তাদের নেই।

‘প্রেসিডেন্ট কিংবা প্রধানমন্ত্রীকে পদত্যাগে বাধ্য করা কোনো সমাধান নয়। আমরা চাই পেনশনের বয়স সংস্কারের সিদ্ধান্ত প্রত্যাহার।’

সূত্র : বিবিসি

শেয়ার করুন