ঢাকা সিটি করপোরেশনের সঙ্গে যুক্ত হতে চলেছে এর পার্শ্ববর্তী শহর টঙ্গী, সাভার ও কেরানীগঞ্জ। অত্যাধুনিক বাসযোগ্য শহর হিসেবে ঢাকাকে গড়ে তুলতে এটি সহায়ক হবে বলে জানিয়েছেন সার্ভেয়ার জেনারেল অব বাংলাদেশ ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. হাবিবুল হক।
২০ মার্চ (সোমবার) রাজধানীর বিজয় সরণিতে বঙ্গবন্ধু সামরিক জাদুঘরের মাল্টিপারপাস হলে এক সেমিনারে সভাপতির বক্তব্যে এ কথা বলেন তিনি।
প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের অধীন বাংলাদেশ জরিপ অধিদপ্তরের নেওয়া ‘আকাশ আলোকচিত্র ধারণের মাধ্যমে ঢাকা শহর ও এর পার্শ্ববর্তী এলাকার বৃহৎ স্কেলের টপোগ্রাফিক্যাল মানচিত্র প্রণয়ন (দ্বিতীয় সংশোধিত)’ শীর্ষক প্রকল্পের অবহিতকরণ সেমিনার ছিল এটি। আন্তঃবাহিনী জনসংযোগ পরিদপ্তরের (আইএসপিআর) পাঠানো এক বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়েছে।
ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. হাবিবুল হক বলেন, আকাশ আলোকচিত্র ধারণের মাধ্যমে ঢাকা শহর ও পার্শ্ববর্তী এলাকার বৃহৎ স্কেলের টপোগ্রাফিক্যাল মানচিত্র প্রণয়ন করার জন্য জরিপ অধিদপ্তর থেকে একটি প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়েছে। কারণ টঙ্গী, সাভার ও কেরানীগঞ্জ বাইরে হলেও ঢাকা সিটি করপোরেশনের সঙ্গে যুক্ত হতে চলেছে।
তিনি বলেন, এ প্রকল্পের মাধ্যমে উন্নয়ন পরিকল্পনা প্রণয়ন কাজে নিয়োজিত সরকারি, বেসরকারি, স্বায়ত্তশাসিত ও গবেষণা সংস্থাকে ঢাকা শহরের সর্বশেষ ভূ-স্থানিক তথ্য উপাত্ত সমৃদ্ধ বৃহৎ স্কেলের (১:২, ৫০০) জিওগ্রাফিক ইনফরমেশন সিস্টেম (জিআইএস) ডাটাবেজসহ ডিজিটাল মানচিত্র সরবরাহ করা সম্ভব হবে। এর মাধ্যমে ঢাকাকে অত্যাধুনিক বাসযোগ্য শহর হিসেবে গড়ে তোলার জন্য সহায়ক হবে। ঢাকা নগরীকে আধুনিক, দৃষ্টিনন্দন ও বাসযোগ্য করতে এবং সবধরনের নাগরিক সেবা নিশ্চিত করতে বর্তমান সরকার কাজ করছে। এ যাত্রায় বাংলাদেশ জরিপ অধিদপ্তরের ভূ-স্থানিক তথ্য-উপাত্ত এক নতুন মাত্রা যোগ করবে।
তিনি বলেন, ড্যাপ অনুযায়ী ঢাকা শহর ও পার্শ্ববর্তী এলাকার আয়তন আনুমানিক ১৫২৮ বর্গ কিলোমিটার। ২০০৩ সালে বাংলাদেশ জরিপ অধিদপ্তর কর্তৃক ধারণকৃত আকাশ আলোকচিত্রের মাধ্যমে ঢাকা শহর ও পার্শ্ববর্তী এলাকার ১২২টি ১:৫,০০০ স্কেলের মানচিত্র প্রণয়ন হয়েছে। ওই মানচিত্র ব্যবহার করে বিভিন্ন অবকাঠামো উন্নয়ন পরিকল্পনা বাস্তবায়নাধীন আছে। এ মানচিত্রগুলো পুরোনো বিধায় এর সাহায্যে পরিকল্পনাবিদদের চাহিদা পূরণ করা যাচ্ছে না। ইতোমধ্যে শহরের জনসংখ্যা ও অবয়ব অনেক বেড়েছে। ফলে ঢাকা শহরের পাশের শহর নারায়ণগঞ্জ, টঙ্গী, সাভার ও কেরানীগঞ্জ ঢাকা সিটি করপোরেশনের বাইরে হলেও এই নগরের সঙ্গে যুক্ত হতে চলেছে। ঢাকা শহর ও তৎপার্শ্ববর্তী শহরগুলোতে শিল্পায়ন দ্রুত বৃদ্ধি পাচ্ছে। দেশের প্রত্যন্ত এলাকা হতে বিপুল সংখ্যক লোক কর্মসংস্থানের জন্য ঢাকায় ছুটে আসছে।
ড্যাপের সফল বাস্তবায়নের জন্য নগরীর উন্নয়নের সঙ্গে জড়িত সব সংস্থা ও সর্বোপরি জনসাধারণের সমন্বিত প্রচেষ্টা এবং উদ্যোগ একান্তভাবে প্রয়োজন। বর্তমানে ঢাকাবাসী নানা সমস্যায় জর্জরিত। যানজট, জলাবদ্ধতাসহ অন্যান্য নাগরিক সমস্যায় প্রতিনিয়ত নাকাল হচ্ছে মানুষ। যত্রতত্র কলকারখানা স্থাপনের কারণে পরিবেশ দূষণ হচ্ছে। নদী, খাল, জলাশয় ভরাট ও নির্বিচারে কৃষিভূমি ধ্বংস করে আবাসিক এলাকায় পরিণত করা হচ্ছে। ডিটেইল্ড এরিয়া প্লান বা ড্যাপ মূলত সমাজের সব স্তরের মানুষের চাহিদা এবং চিন্তাভাবনার একটি মিশ্র প্রতিফলন। এটি বাস্তবায়িত হলে ঢাকা শহরের সামগ্রিক উন্নয়নে একটি সাম্যাবস্থা তৈরি হবে বলে আশা করা যায়। আর ড্যাপের সফল বাস্তবায়নের জন্য ‘আকাশ আলোকচিত্র ধারণের মাধ্যমে ঢাকা শহর ও পার্শ্ববর্তী এলাকার বৃহৎ স্কেলের টপোগ্রাফিক্যাল মানচিত্র প্রণয়ন’ প্রকল্প থেকে প্রাপ্ত ডাটা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে বলে আমি বিশ্বাস করি।
সেমিনারে প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তা, জরিপ অধিদপ্তরের বিভিন্ন স্তরের কর্মকর্তা এবং ভূ-স্থানিক তথ্য-উপাত্ত ব্যবহারকারী বিভিন্ন সরকারি ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন।