পেনশনের বয়সসীমা দুই বছর বাড়িয়ে ৬৪ বছর করায় সংসদে অনাস্থা ভোটের মুখোমুখি হয়েছিল ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ইমানুলেল ম্যাক্রোঁর সরকার। তবে খুবই অল্প ব্যবধানে টিকে গেছে বর্তমান সরকার। গতকাল সোমবার (২০ মার্চ) দু’টি অনাস্থা ভোটের মুখোমুখি হতে হয় ম্যাক্রোঁকে।
মঙ্গলবার (২১ মার্চ) এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানিয়েছে ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি।
পেনশনের বয়সসীমা বৃদ্ধি নিয়ে ফ্রান্সের রাজপথে গত এক সপ্তাহ যাবত বিক্ষোভ হচ্ছে। পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে জড়ানোয় এখন পর্যন্ত ১০১ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
বিবিসি জানিয়েছে, ম্যাক্রোঁর সরকারের বিরুদ্ধে প্রথম অনাস্থা ভোটটি উত্থাপন করেন মধ্যপন্থী এমপিরা। এই ভোটে ম্যাক্রোঁর প্রতি অনাস্থা জানান ২৭৮ জন এমপি। তার সরকারের পতনের জন্য প্রয়োজন ছিল ২৮৭টি ভোট।
যদি অনাস্থা ভোটে হেরে যেতেন তাহলে প্রেসিডেন্ট ম্যাক্রোঁকে নতুন সরকার গঠন করতে হতো অথবা নতুন নির্বাচনের তারিখ ঘোষণা করতে হতো।
এছাড়া মেরিন লঁ পেন্সের উগ্রডানপন্থি ন্যাশনাল র্যালি পার্টির উত্থাপিত দ্বিতীয় অনাস্থা ভোটও সফল হয়নি। এখন যেহেতু অনাস্থা ভোট ব্যর্থ হয়েছে, ফলে ম্যাক্রোঁর পেনশন বয়সসীমা বৃদ্ধির বিষয়টি দ্রুত সময়ে আইনে রূপ নেবে।
সংসদকে পাশ কাটিয়ে পেনশনের বয়সসীমা বৃদ্ধির কারণে ক্ষীপ্ত হন দেশটির বেশিরভাগ আইনপ্রণেতা। প্রধানমন্ত্রী সংবিধানের ৪৯:৩ ধারার ক্ষমতাবলে কোনো ভোট ছাড়াই এ বয়সসীমা বৃদ্ধি করেন।
সরকারের এ সিদ্ধান্ত সাধারণ মানুষকেও ক্ষীপ্ত করে তোলে। রাজধানী প্যারিসসহ ফ্রান্সের বিভিন্ন শহরে অবস্থান নেন তারা। এ সময় পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়েন অনেকে। এছাড়া রাস্তায় ব্যারিকেড দেন বিক্ষোভকারীরা। সোমবার অনাস্থা ভোট ব্যর্থ হলে আবারও বিক্ষোভ শুরু করেন তারা।
তবে অনাস্থা ভোট ব্যর্থ হলেও যারা এর পক্ষে ভোট দিয়েছিলেন তারা সংসদের ভেতর ক্ষোভ প্রকাশ করেন। তারা দাবি করেন, পেনশনের বয়সসীমা বৃদ্ধির সিদ্ধান্ত বাতিল করতে হবে। সংসদের ভেতর একজন এমপি একটি প্ল্যাকার্ তুলে ধরেন। সেখানে লেখা ছিল ‘আমরা রাস্তায় মিলিত হব।’
এদিকে ফ্রান্সে আগে ৬২ বছর বয়স পর্যন্ত কাজ করলেই পেনশন মিলত। কিন্তু নতুন নিয়ম অনুযায়ী, এখন ৬৪ বছর বয়স পর্যন্ত কাজ করতে হবে। এ বিষয়টি তরুণদের মধ্যে তীব্র প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করেছে।
বার্তাসংস্থা এএফপিকে সোলা নামের একজন শিক্ষার্থী রাজধানী প্যারিস থেকে বলেছেন, ‘মানুষ মনে করে এ বিষয়টি আমাদের চিন্তার উদ্রেগ করে না, কিন্তু আসলে এটি করে। যদি আমাদের দাদা-দাদী বা নানা-নানীদের আরও দুই বছর কাজ করতে হয়। আমরা জানি পরিস্থিতি আরও ঘোলাটে হবে।’
ম্যারি নামের অপর এক শিক্ষার্থী এএফপিকে বলেছেন, ‘আমরা আন্দোলন করছি, কারণ আমাদের পরিত্যক্ত করা হয়েছে, আমাদের উপেক্ষা করা হয়েছে। কারণ এ সরকার আমাদের নিয়ে ভাবে না।’
সংসদে প্রথম অনাস্থা ভোট উত্থাপনকারী চার্লস দে কার্সন বলেছেন, ‘বর্তমান সরকারকে উৎখাতের মাধ্যমে চলমান সামাজিক ও রাজনৈতিক সংকট বন্ধ করা সম্ভব।’
অপরদিকে প্রেসিডেন্ট ম্যাক্রোঁ দাবি করেছেন, পূর্বে যে পেনশন ব্যবস্থা ছিল, সেটি ফ্রান্সের বর্তমান বার্ধক্যগ্রস্ত জনগণ অসাধ্য করে দিচ্ছে।
সূত্র: বিবিসি