রোজা শুরুর আগমুহূর্তে নিত্যপণ্যের বাজারে রীতিমতো আগুন লেগেছে। গতকাল বুধবার রাজধানীর বিভিন্ন বাজারে সবজিসহ কয়েকটি পণ্য চড়া দামে বিক্রি হয়েছে। এর মধ্যে কিছু পণ্যের দাম কারণ ছাড়াই এক লাফে দ্বিগুণ হয়েছে। আবার কিছু পণ্য কেজিতে ২০ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে।
ব্যবসায়ীরা দাম বৃদ্ধির জন্য আমদানি বন্ধকে ঢাল বানাচ্ছেন, দাঁড় করাচ্ছেন নানা যুক্তি। তবে তেতে থাকা নিত্যপণ্যের আরেক দফা বৃদ্ধিতে চরম বিপাকে পড়েছেন সাধারণ ক্রেতারা। তাদের কেউ কেউ নির্দিষ্ট টাকায় বাজার করতে গিয়ে গৃহিণীর দেওয়া ফর্দে করছেন কাটছাঁট। এতে খুচরা পর্যায়ে অন্যান্য রমজান শুরুর আগের তুলনায় এবার প্রায় ২০ শতাংশ বিক্রি কমে গেছে বলে জানিয়েছেন বিক্রেতারা।
ভোক্তা অধিকার-সংশ্লিষ্টরা বলছেন, আমদানি নির্ভরতা বলা হলেও রমজান উপলক্ষে দেশে উৎপাদিত পণ্যের দামও অস্বাভাবিক বেড়েছে। দাম বাড়ানোর অপকৌশল ব্যবসায়ীরা বরাবরের মতোই অতি মুনাফার লোভে নিয়েছেন।
কারওয়ান বাজারের তুহিন জেনারেল স্টোরের স্বত্বাধিকারী মো. রায়হান বলেন, রমজানের আগে নাক চুলকানোর সময় থাকত না। এবার বসে মশা মারছি। ক্রেতার ভিড় নেই, ব্যস্ততা কম। একই সুরে মহাখালীর মাসুমা স্টোরের বিক্রয়কর্মী আল-আমীন বলেন, বেচা-বিক্রি একদম ঠান্ডা। করোনার সময়ের চেয়েও বিক্রি কম বলে জানান কারওয়ান বাজারের শাহ মিরান জেনারেল স্টোরের বিক্রয়কর্মী মো. মামুন।
৩০ টাকার শিম হয়ে গেছে ৬৫। লেবুর গায়ে হাত দিতেই ভয় পাচ্ছেন ক্রেতারা। মাঝারি আকারের এক হালি লেবু কিনতেও গুনতে হচ্ছে ৭০-৮০ টাকা। এ দেশে রোজায় বেগুনের চাহিদা বেড়ে যায়। বিশেষ করে ইফতারির অন্যতম অনুষঙ্গ হিসেবে লম্বা বেগুনের চাহিদা থাকে তুঙ্গে। ব্যবসায়ীরাও এরই সুযোগ নিয়েছেন। ৬০ টাকার থেকে লম্বা বেগুন ৯০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। যদিও গোল বেগুন মিলছে ৬০-৭০ টাকায়।
আগের মতোই করলা ১০০ থেকে ১২০, বরবটি ৮০-১০০, পটোল ও ঢ্যাঁড়শ ৭০-৯০ ও কাঁচামরিচের কেজি ৮০ থেকে ১২০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। যদিও বাজারে এসব পণ্যের জোগানে কোনো ঘাটতি দেখা যায়নি। তবে বড় বাজারগুলোতে তুলনামূলক এসব পণ্য ৫-১০ টাকা কমে বিক্রি হতে দেখা গেছে।
বাজারে পেঁয়াজের সংকট না থাকলেও পণ্যটির দাম কেজিতে ৫-১০ টাকা বেড়েছে। দেশি ৩৫-৪০ এবং আমদানি পেঁয়াজ ৪০ থেকে ৪৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। তিন-চার দিন আগেও দেশি পেঁয়াজ ২৫-৩৫ এবং আমদানি পেঁয়াজ ছিল ৩০ থেকে ৪০ টাকা কেজি।
জাতীয় ভোক্তা অধিদপ্তরের নানা পদক্ষেপের পরও ক্রেতার জন্য সুখবর নেই মাছ-মাংসের বাজারে। দেড় মাস ধরে বাড়তে থাকা ব্রয়লার মুরগি এখন বিক্রি হচ্ছে ২৬০ থেকে ২৮০ টাকায়। সোনালি জাতের মুরগির দামও বেড়ে প্রতি কেজি বিক্রি হচ্ছে ৩৫০-৩৬০ টাকা। বেশ কয়েক দিন ডিমের ডজন ১৩০ টাকায় স্থির ছিল। কিন্তু বুধবার তা বিক্রি হয় ১৪০ টাকায়।
মাংসের মতোই নিম্নআয়ের মানুষের নাগালের বাইরে চলে যাচ্ছে মাছ। গরিবের মাছ বলে পরিচিত তেলাপিয়া-পাঙাশও মিলছে না ২৫০ টাকার নিচে। আর রুই-কাতলার কেজি কিনতে গুনতে হবে ৩৫০ থেকে ৪৫০ টাকা।
কনজ্যুমার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) সহসভাপতি এস এম নাজের হোসাইন বলেন, নীতি-নৈতিকতার বালাই নেই, এ দেশে ব্যবসায়ীরা সব সময় সুযোগ খোঁজেন। আর রোজা তাদের জন্য আশীর্বাদ হয়ে আসে। ব্যবসায়ীরা দাম বাড়ানোর সময় বলে থাকেন, চাহিদা ও জোগান ঠিক থাকলে দাম বাড়বে না। কিন্তু শসা, পেঁয়াজ, ব্রয়লার মুরগি এসব তো দেশীয় পণ্য। এরপরও অতি মুনাফার লোভে দাম বাড়িয়ে জনজীবন অতিষ্ঠ করে তুলেছেন। দাম বাড়াতে ব্যবসায়ীরা নানা যুক্তি দাঁড় করালেও এর সত্যতা পাওয়া যায় না।
তিনি আরও বলেন, পণ্যের দাম নাগালে রাখতে বাজারে তদারকি বাড়ানোর পাশাপাশি দোকানে ক্রয়-বিক্রয়ের রসিদ রাখা ও মূল্যতালিকা ঝোলানো নিশ্চিত করতে হবে।