জোরালো হচ্ছে ভোটের আলাপ, কূটনীতিকরা সরব

নিজস্ব প্রতিবেদক

ভোটের আলাপ জোরালো হচ্ছে কূটনীতিক পাড়ায়। জাতীয় নির্বাচন ঘিরে সরকার বিরোধী দল বিএনপির দৌড়ঝাঁপের প্রেক্ষিতে বাংলাদেশে অবস্থানরত পশ্চিমা কূটনীতিকরা এই দেশের অভ্যন্তরীণ নির্বাচন নিয়ে সরব। তারা দফায় দফায় সরকারি দল আওয়ামী লীগ ও বিএনপির সঙ্গে বৈঠক করছেন। কূটনীতিকরা চাচ্ছেন, গ্রহণযোগ্য, সুষ্ঠু ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন। সরকার ও আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে সংবিধান অনুসারে নিরপেক্ষ ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের আশ্বাস দেওয়ার পরও থেমে নেই তাদের তৎপরতা।

এ ব্যাপারে তারা বিএনপির দাবি-দাওয়ার ব্যাপারে সরকারি দলের মনোভাব বুঝতে চাচ্ছেন। জাতীয় নির্বাচনের ব্যাপারে ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ বারবারই তাদের অবস্থান স্পষ্ট করছে। আওয়ামী লীগ বলে দিয়েছে, সংবিধানের বাইরে যাওয়া তাদের পক্ষে সম্ভব নয়। এক্ষেত্রে বিএনপির দাবিকৃত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রসঙ্গে আওয়ামী লীগের বক্তব্য হচ্ছে, ‘না’। কোনোভাবেই আওয়ামী লীগ নির্বাচন আয়োজনে তত্ত্ববধায়কে ফিরে যাবে না।

universel cardiac hospital

জাতীয় সংসদ নির্বাচনের সময় যতো ঘনিয়ে আসছে, বিদেশি
কূটনীতিকদের দৌড়ঝাঁপ ততো বাড়ছে। ভারত, চীনের মতো প্রভাবশালী রাষ্ট্র দুটি নির্বাচন নিয়ে প্রকাশ্যে কথা না বললেও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, অস্ট্রেলিয়া, কানাডা ও ইউরোপীয় ইউনিয়নের দেশগুলোর কূটনীতিকরা সরব রয়েছেন। গত ২২ মার্চ মার্কিন রাষ্ট্রদূত পিটার হাস নির্বাচন প্রশ্নে বৈঠক করেছেন আওয়ামী লীগের সঙ্গে। মার্কিন রাষ্ট্রদূত এদিন আওয়ামী লীগকে তার বাসায় মধ্যাহ্ন ভোজে আমন্ত্রণ জানান।

এতে শুভেচ্ছা বিনিময়ের পাশাপাশি সমসাময়িক বিষয়, নির্বাচন ও বাণিজ্য থেকে শুরু করে নিরাপত্তা সহযোগিতা নিয়ে আলোচনা করেছেন। তবে রাষ্ট্রদূতের সঙ্গে বেশিরভাগ আলোচনাই ছিল নির্বাচন ও সংলাপ বিষয়ে। বিশেষ করে গ্রহণযোগ্য সুষ্ঠু ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন নিয়েই বেশি আলোচনা হয়েছে। তত্ত্বাবধায়ক প্রশ্নে আওয়ামী লীগ জানিয়েছে, সরকার আর তত্ত্বাবধায়ক সরকারে ফিরে যাবে না।

গত ১৬ মার্চ বিএনপি নেতারা ঢাকাস্থ ভারতীয় হাইকমিশনারের সঙ্গে বৈঠক করেন। বিএনপির সঙ্গে ভারতের এই খোলামেলা আলোচনা কূটনৈতিক ও রাজনৈতিক মহলে বিশেষ আগ্রহের জন্ম দিয়েছে। হাইকমিশনার প্রণয় ভার্মার বাসভবনে ওই নৈশভোজে অংশ নিয়েছিলেন বিএনপির পাঁচ নেতা।

এই বৈঠক নিয়ে প্রকাশ্যে কোনো পক্ষ থেকেই কোনো বক্তব্য-বিবৃতি দেওয়া হয়নি। এ বৈঠকে তাদের মধ্যে আগামী নির্বাচন, আন্দোলনসহ সার্বিক বিষয়ে আলোচনা হয়। আলোচনায় গুরুত্ব পায় ভারত ও বিএনপির মধ্যে সম্পর্ক উন্নয়নের বিষয়টিও। নৈশভোজে মূলত আগামী নির্বাচন ও আন্দোলন সম্পর্কে বিএনপির অবস্থান জানতে চান ভারতীয় হাইকমিশনার। নির্বাচনে বিএনপি যাবে কি না জানতে চাইলে দলটির জানিয়ে দেন- দলীয় সরকারের অধীনে তারা কোনো নির্বাচনে যাবেন না।

ঢাকায় ইউরোপীয় ইউনিয়নের দেশগুলোও পাল্টাপাল্টি বৈঠক করেছে আওয়ামী লীগ ও বিএনপির দলীয় প্রতিনিধিদের সঙ্গে। তারা আগামী নির্বাচন নিয়ে অবস্থান তৈরির জন্যই এই বৈঠক করেছে। গত ১২ মার্চ ঢাকায় নিযুক্ত ইইউ রাষ্ট্রদূত চার্লস হোয়াইটলির বাসভবনে বৈঠক করেন বিএনপির নেতারা। এর আগে ১৬ ফেব্রুয়ারি ঢাকায় ইইউ কূটনীতিকরা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের নেতৃত্বে দলের একটি প্রতিনিধির সঙ্গে বৈঠক করেন।

১৫ ফেব্রুয়ারি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর উপদেষ্টা এবং স্টেট ডিপার্টমেন্টের কাউন্সিলর ডেরেক এইচ শোলের নেতৃত্বে একটি প্রতিনিধি দল ঢাকায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করেন। সেখানেও আসে আসন্ন নির্বাচন প্রসঙ্গ। গণভবনে অনুষ্ঠিত সাক্ষাতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, আগামী নির্বাচন অবাধ ও নিরপেক্ষ হবে। নির্বাচন কমিশন সম্পূর্ণভাবে স্বাধীন। স্বাধীন নির্বাচন কমিশনের অধীনেই হবে নির্বাচন।

একইদিন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন ভারতের পররাষ্ট্র সচিব বিনয় মোহন কোয়াত্রা। ভারতের পররাষ্ট্র সচিবের বরাত দিয়ে বাসস জানায়, শেখ হাসিনার নেতৃত্বে পূর্ণাঙ্গ সমর্থনের কথা জানিয়েছে ভারত।

যুক্তরাজ্যের পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী (ইন্দো-প্যাসিফিক) অ্যান-মারি ট্রিভেলিয়ান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করেন। সাক্ষাৎকালে প্রধানমন্ত্রী আগামী নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষভাবে অনুষ্ঠিত হবে বলে জানালে তিনি সাধুবাদ জানান। একইদিনে নির্বাচন নিয়ে নির্বাচন কমিশনের (ইসি) সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন অস্ট্রেলিয়া হাইকমিশনার জেরেমি ব্রুয়ের।

তবে চীন রাজনৈতিক বিষয়ে পশ্চিমা কূটনীতিকদের তৎপরতাকে বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপ বলে মনে করছে। চীনের নতুন রাষ্ট্রদূত ইয়ান ওয়েন বলেছেন, চীন কোনো দলের পক্ষে নয়, রাষ্ট্রের সঙ্গে কাজ করে যায়। তাই কোন দল ক্ষমতায় থাকল, না থাকল সেটি তাদের বিষয় নয়। ঠিক একই কথা খাটে ভারতের হাইকমিশনারের বিষয়েও। এখন পর্যন্ত হাইকমিশনারের মুখ থেকে নির্বাচন পদ্ধতি নিয়ে কোনো মন্তব্য বা পরামর্শ আলোচনায় আসেনি।

শেয়ার করুন