নতুন কোচ ও অধিনায়কের অধীনে বাজে সময় পার করছে পাকিস্তান। তাদের বিপক্ষে প্রথমবারের মতো ঐতিহাসিক ম্যাচ জিতে আফগানিস্তান সিরিজ শুরু করে। এরপরই শাদাব খানের অধিনায়কত্ব নিয়ে সাবেক ক্রিকেটাররা তুমুল সমালোচনায় নামেন। এবার টানা দ্বিতীয় ম্যাচ হেরে সিরিজই খুইয়েছে পাকিস্তানিরা।
তবে শারজায় অনুষ্ঠিত রোববারের (২৬ মার্চ) ম্যাচটি পেন্ডুলামের মতো দুলছিল। একবার মনে হচ্ছিল পাকিস্তান জিতবে তো আরেকবার আফগানিস্তান। আগের ম্যাচের মতো দ্বিতীয় টি-টোয়েন্টিও লো-স্কোরিং হয়েছে। তবে আগে ব্যাট করা পাকিস্তানের ব্যাটে কিছুটা উন্নতি হয়েছে। সে বার মাত্র ৯২ রানে গুটিয়ে যাওয়া পাকিস্তান এই ম্যাচে করে ১৩০ রান। তবে আফগানদের হারানোর জন্য এই পুঁজি মোটেও যথেষ্ট ছিল না।
এদিন প্রথমে টস জিতে ব্যাটে নামে পাকিস্তান। তবে তাদের শুরুটাই ছিল বেশ বেখাপ্পা। ইনিংসের দ্বিতীয় ও তৃতীয় বলেই সিয়াম আইয়ুব ও আবদুল্লাহ শফিক আউট হয়ে ফেরেন। এর মধ্য দিয়ে আফগান পেসার ফজলহক ফারুকি হ্যাটট্রিকের সম্ভাবনাও জাগান। তবে সেটি না হলেও ওভারটি মেইডেন নেন তিনি। ওপেনার সিয়াম দ্বিতীয় বলে অফ স্টাম্পের বাইরের বল খোঁচা দিয়ে কিপার রহমানুল্লাহ গুরবাজের তালুবন্দী হন। পরের বলেই এলবিডব্লিউ’র ফাঁদে পড়েন শফিক। টি-টোয়েন্টি ইতিহাসের প্রথম ব্যাটসম্যান হিসেবে এই ব্যাটার টানা চার ম্যাচে শূন্য রানে আউট হলেন।
নড়বড়ে শুরুর পর দ্বিতীয় ওভারে ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টা চালান মোহাম্মদ হারিস। তার ২ চার ও ১ ছক্কার পাশাপাশি ওই ওভারে পাকিস্তানিরা ১৮ রান তোলে। এরপরই তারা আবার পথ হারায়। তৃতীয় ওভারে মারমুখী হারিসকে (১৫) ফেরান নাভিন উল হক। পরবর্তীতে দলকে বিপর্যয় থেকে টেনে তোলার দায়িত্ব নেন তায়েব তাহির ও ইমাদ ওয়াসিম। ইমাদ সাবলীলভাবে ব্যাট করে গেলেও সংগ্রাম করছিলেন তায়েব। দলীয় ৬০ রানে তায়েবকে ফেরান করিম জানাত। ২৩ বলে ১৩ রান করেন তায়েব। এরপর দুর্দান্ত এক গুগলিতে দ্রুত আজম খানকে (১) ফেরান রশিদ খান।
মূলত ইমাদের ব্যাটেই লড়াই করার মতো পুঁজির দিকে এগোতে থাকে পাকিস্তান। এর মাঝে ছক্কা মেরে ফিফটি করেন ইমাদ। তবে অন্য প্রান্ত থেকে সঙ্গ না পাওয়ায় পাকিস্তানের রানের গতি মন্থরই থেকে যায়। অধিনায়ক শাদাব খানকে সঙ্গে নিয়ে দলকে টেনে নেন ইমাদ ওয়াসিম। একশ রানে পৌঁছাতে ১৮ ওভার লাগলেও শেষ ২ ওভারে ২৪ রান তোলে পাকিস্তান। ইমাদ-শাদাব মিলে দলকে ১৩০ রানের মাঝারি সংগ্রহ এনে দেন। ইমাদ ৫৭ বলে ৬৪ রানে অপরাজিত এবং শাদাব করেন ২৫ কলে ৩২ রান।
জবাবে ব্যাট করতে নেমে শুরু থেকেই আক্রমণাত্মক খেলতে থাকে আফগানিস্তান। ২ ওভারেই ১৮ রান তুলে তারা উড়ন্ত সূচনা পায়। চতুর্থ ওভারে গিয়ে আফগানদের প্রথম ধাক্কা দেয় পাকিস্তান। নাভিন-উল-হককে ফেরান ইমাদ। উইকেট হারালেও রানের গতি শ্লথ করেনি আফগানিস্তান। পাওয়ার-প্লেতে তারা ৪৫ রান করে। গুরবাজ ও ইব্রাহিম জারদানের জুটিতে ১০ ওভারে ৬৬ রান করে তারা।এভাবে ম্যাচের নিয়ন্ত্রণ আফগানদের দিকে ঝুঁকতে থাকে।
এরপর অবশ্য পাকিস্তানের নিয়ন্ত্রিত বোলিংয়ে রান ও বলের ব্যবধান বেড়ে যাওয়ায় চাপে পড়ে আফগানিস্তান। ৭.৪ ওভার থেকে ১৫.৩ ওভার পর্যন্ত কোনো বাউন্ডারি পায়নি আফগানরা। এর মাঝেই রানআউট হয়ে ফেরেন ৪৪ রান করা গুরবাজ। দলীয় ১০২ রানে ৩৮ করা ইব্রাহিমও ফিরে যান। তাকে ফেরান ইহসানউল্লাহ। তবে ১৯তম ওভারে চাপের মুখে ১৭ রান নিয়ে ম্যাচের রূপ বদলে দেয় আফগানিস্তান। আর রুদ্ধশ্বাস শেষ ওভারের ৫ম বলে চার মেরে দলের জয় নিশ্চিত করেন জাদরান।
১ বল ও ৭ উইকেট হাতে রেখে আফগানিস্তান দুর্দান্ত জয় তুলে নেয়। এতে এক ম্যাচ বাকি হাতে রেখেই টি-টোয়েন্টি সিরিজ হেরে বসে পাকিস্তান। এখন শেষ ম্যাচে জিতে পাকিস্তানকে হোয়াইটওয়াশ করার সুযোগও রয়েছে আফগানদের।