দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে রাজনীতিতে ফের আলোচনায় সংলাপ। নির্বাচন সুষ্ঠু করার বিষয়ে সরকার ও নির্বাচন কমিশনের ওপর দেশি-বিদেশি চাপ বাড়ছে। আর এ পরিস্থিতিতে নির্বাচনের আগে রাজনৈতিক সমঝোতার জন্য সংলাপের বিষয়টিও বেশি প্রাধান্য পাচ্ছে। বড় দুই দলের মধ্যে সংলাপ হবে কি হবে না, এ নিয়ে জনমনে কৌতূহলের শেষ নেই। তবে বড় দুই রাজনৈতিক দল- আওয়ামী লীগ ও বিএনপিকে সংলাপে বসাতে দেশি-বিদেশি বিভিন্ন মহলের দৌড়ঝাঁপ অব্যাহত।
ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ ও বিএনপি এখন বিপরীতমুখী অবস্থানে থাকাতে বিভিন্ন মহল থেকে নির্বাচন কমিশনকে (ইসি) নতুন উদ্যমে সংলাপের তাগিদ দেওয়া হচ্ছে। এ কারণেই বিএনপিসহ আগে যেসব দল সংলাপে অংশ নেয়নি, তাদেরকে নতুন করে সংলাপের আমন্ত্রণ জানিয়েছে ইসি। বিএনপি এখনো সংলাপের বিষয়ে নেতিবাচক অবস্থানে। তাই ইসির দেওয়া সংলাপের প্রস্তাব নাকচ করে দিয়েছে। ইসি মনে করছে, বিএনপি হয়তো তাদের অবস্থান পরিবর্তন করবে এবং কোনো এক সময় সংলাপে যাবে।
জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আর মাত্র ৯ মাস বাকি। তত্ত্বাবধায়ক সরকার ছাড়া এ নির্বাচনে অংশ নেবে না বলে বিএনপি বলে আসছে। যদিও বিএনপি তলে তলে নির্বাচনের প্রস্তুতি চালিয়ে যাচ্ছে। দেশের বুদ্ধিজীবীরাও চাচ্ছেন, দ্বাদশ সংসদে নির্বাচনে বিএনপির অংশগ্রহণ নিশ্চিত করা হোক।
ইসি বলছে, বিএনপির অংশগ্রহণ ছাড়া জাতীয় নির্বাচন তেমন গ্রহণযোগ্য হবে না। তাই ইসি বিএনপিকে নির্বাচনে আনতে আবারও নতুন করে সংলাপের উদ্যোগ নিয়েছে। ২৩ মার্চ বিএনপিকে সংলাপের জন্য চিঠিও দিয়েছে ইসি। বর্তমান নির্বাচন কমিশন সব সময়ই অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের কথা বলছে। বিএনপিকে নির্বাচন কমিশনের হঠাৎ দেওয়া চিঠি রাজনৈতিক অঙ্গনে নতুন করে আলোচনার খোরাক যুগিয়েছে।
কাজী হাবিবুল আউয়ালের নেতৃত্বাধীন নির্বাচন কমিশন দায়িত্ব নেওয়ার কিছুদিন পর দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে ইসিতে নিবন্ধিত ৩৯টি রাজনৈতিক দলকে সংলাপের জন্য আমন্ত্রণ জানায়। এর মধ্যে আওয়ামী লীগসহ ২৭টি দল সংলাপে অংশ নিলেও বিএনপিসহ ১২টি দল অংশ নেয়নি। তবে সুষ্ঠু ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের স্বার্থে আগে সংলাপে অংশ না নেওয়া ১২টি দলকে এবার নতুন করে চিঠি দিয়ে সংলাপের আমন্ত্রণ জানায় ইসি।
বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর জানান, বর্তমান সরকারের অধীনে কোনো নির্বাচন সুষ্ঠু হবে না। তাই এ সরকারের অধীনে নির্বাচনে যাবে না বিএনপি। বিএনপিকে আবারও ইসির সংলাপে ডাকা সরকারের নতুন কূটকৌশল বলে তিনি মন্তব্য করেন।
স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবস উপলক্ষে বঙ্গভবনে সংবর্ধনা অনুষ্ঠানের আয়োজন করেন রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ। সেখানে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে কুশল বিনিময়কালে দেশের চলমান রাজনৈতিক পরিস্থিতি ও দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন ইস্যুতে সৃষ্ট সংকট নিরসনে বিএনপির সঙ্গে সংলাপে বসতে প্রধানমন্ত্রীকে অনুরোধ করেন গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী। তবে বিএনপির সঙ্গে সংলাপের বিষয়ে প্রধানমন্ত্রীর দিক থেকে ইতিবাচক সাড়া মেলেনি।
প্রধানমন্ত্রী ওই সময় ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলার ঘটনা এবং খালেদা জিয়ার ছোট ছেলে আরাফাত রহমান কোকো মারা যাওয়ার পর সমবেদনা জানাতে গুলশানের বাড়িতে গেলে প্রবেশ করতে না দেওয়া এবং ওই সময় সংলাপের আহ্বান জানিয়ে টেলিফোন করলেও তাতে সাড়া না দেওয়ার কথা জানিয়ে ২০১৮ সালের নির্বাচনের আগে সংলাপ করেও তাতে কোনো সুফল না আসার কথা জানালে ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী তার পরও সংলাপ করার অনুরোধ করেন।
এ পরিস্থিতিতে সরকারের সঙ্গে বিএনপির সংলাপ হওয়া অনেকটাই অনিশ্চিত। তবে নির্বাচন কমিশন বিএনপির সঙ্গে সংলাপ করে কোনো ইতিবাচক সিদ্ধান্তে পৌঁছতে পারলে সরকারের তরফ থেকে কোনো আপত্তি থাকবে না বলে অভিজ্ঞ মহল মনে করছেন।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, সংলাপ করে রাজনৈতিক সমঝোতায় পৌঁছতে না পারলে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে দেশে সঙ্কট সৃষ্টি হতে পারে। নির্বাচন কমিশনও মনে করছে নির্বাচনের আগে বড় দলগুলোর মধ্যে সমঝোতা না হলে সংকট হতে পারে।