নিউ ইয়র্কের ম্যানহাটানের অপরাধ আদালতে মঙ্গলবার (৪ এপ্রিল) আত্মসমর্পণ করেছেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। যুক্তরাষ্ট্রে কোনো বর্তমান বা সাবেক প্রেসিডেন্টের ফৌজদারি অপরাধে কাঠগড়ায় ওঠার নজির এটাই প্রথম। নির্ধারিত সময়ের কিছু আগে (বাংলাদেশ সময় মঙ্গলবার রাত ১১টা ২৫ মিনিট) আদালত ভবনে পা রাখেন ট্রাম্প। আদালতে পৌঁছার পর তাঁকে আনুষ্ঠানিকভাবে গ্রেফতার করা হয়। এরপর অভিযুক্তকরণসহ কিছু প্রক্রিয়া শেষে ট্রাম্পকে জামিনে মুক্তি দেওয়ার কথা।
এর আগে ট্রাম্প বাংলাদেশ সময় মঙ্গলবার রাত ১২টা ৫০ মিনিটের দিকে বাণিজ্যিক দলিল জালিয়াতিসহ ৩৪টি অভিযোগের বিষয়ে নিজেকে নির্দোষ দাবি করেন।
বাংলাদেশ সময় গতকাল দিবাগত রাত সাড়ে ১২টায় ট্রাম্প আদালত ভবনের ১৫ তলার এজলাসে প্রবেশ করেন। তখন সেখানে অবস্থান করছিলেন সিক্রেট সার্ভিস, পুলিশ ও মিডিয়ার হাতে গোনা কয়েকজন প্রতিনিধি। বিচারক হুয়ান ম্যানুয়েল মারচেনের উপস্থিতিতে তাঁকে অভিযুক্ত করার প্রক্রিয়া এর কিছুক্ষণের মধ্যেই শুরু হওয়ার কথা ছিল। আদালতকক্ষে প্রবেশের আগে সাংবাদিকদের দেখলেও ট্রাম্প কিছু বলেননি।
আদালতে আত্মসমর্পণ ও অভিযুক্ত করার পর গতকালই ট্রাম্পের স্থানীয় সময় সন্ধ্যার পর ফ্লোরিডায় ফিরে যাওয়ার কথা।
যুক্তরাষ্ট্রের রাজনৈতিক ইতিহাসের মাইলফলক এই দিনে নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে আদালত এলাকাসহ নিউ ইয়র্ক শহরজুড়ে অবস্থান নেন আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা ও গোয়েন্দা বাহিনীর বহু সদস্য। ম্যানহাটানের অপরাধ আদালত ও ট্রাম্প টাওয়ারের আশপাশের ফুটপাতে ব্যারিকেড বসানো হয়। পুলিশ রাস্তা অনেকটা খালি করে রাখায় ‘ট্রাম্প টাওয়ার’ থেকে রওনা হয়ে ছয় মাইল দূরের আদালতে প্রত্যাশিত সময়ের কিছু আগেই পৌঁছেন সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট।
মিডিয়া ও ভিড় এড়াতে গোপন একটি দরজা দিয়ে আদালতের ভেতরে যান ট্রাম্প। এ সময় আদালতের সামনের গেটে একদল পুলিশ মোতায়েন ছিল। আগে সমর্থকদের উদ্দেশে সংক্ষিপ্ত কিছু বলার কথা শোনা গেলেও ট্রাম্প আদালতে প্রবেশের আগে সমর্থক বা মিডিয়া কাউকে কিছুই বলেননি। তবে আদালতে পৌঁছার কিছু আগে নিজের সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ট্রুথ সোশ্যালে লেখেন, ‘লোয়ার ম্যানহাটানের আদালতে যাচ্ছি। সব কিছু কেমন পরাবাস্তব লাগছে। ওয়াও, ওরা আমাদের গ্রেফতার করতে যাচ্ছে। বিশ্বাস হচ্ছে না, আমেরিকায় এটা হচ্ছে। এমএজিএ (মেক আমেরিকা গ্রেট এগেইন)।’
প্রেসিডেন্টসহ শীর্ষ ব্যক্তিদের নিরাপত্তার দায়িত্ব পালন করা কেন্দ্রীয় নিরাপত্তা সংস্থা সিক্রেট সার্ভিস ও পুলিশ ট্রাম্পের আদালতে যাওয়ার নিরাপত্তাব্যবস্থার দায়িত্বে ছিল। আদালতের বাইরে ট্রাম্পের সমর্থক ও বিরোধীরা তাঁর পক্ষে-বিপক্ষে বক্তব্য দেয় এবং নানা রকম স্লোগান লেখা প্ল্যাকার্ড বহন করে।
আদালতকক্ষে উপস্থিত হওয়ার আগে ট্রাম্পের আঙুলের ছাপ এবং কাছ থেকে মুখাবয়বের ছবি (মাগশট) নেওয়ার কথা। তবে মাগশট নামের বিশেষ ছবিটি শেষ পর্যন্ত না-ও নেওয়া হতে পারে। ট্রাম্পের খুটিনাটি তথ্য, আগের কোনো গ্রেপ্তারি পরোয়ানা বা অভিযোগ রয়ে গেছে কি না তা-ও খতিয়ে দেখা হবে। এরপর আদালতে পাঠ করা হবে তাঁর বিরুদ্ধে অভিযোগগুলো।
অভিযুক্তকে নিজেকে নির্দোষ দাবি বা দোষ স্বীকার করতে হয়। ট্রাম্পের আইনজীবীরা আগেই জানিয়েছিলেন, সাবেক প্রেসিডেন্ট নিজেকে নির্দোষ দাবি করে আইনি লড়াই চালিয়ে যাবেন। এরপর তিনি জামিনে মুক্তি পাবেন। ফ্লোরিডায় ফিরে স্থানীয় সময় রাত সাড়ে ৮টার দিকে সমর্থকদের সামনে বক্তব্য দেবেন ট্রাম্প।
যে ঘটনা থেকে অভিযুক্ত হলেন ট্রাম্প : ২০০৬ সালে একবার স্টর্মি ড্যানিয়েলসের সঙ্গে শারীরিক সম্পর্কে জড়ান ডোনাল্ড ট্রাম্প। ২০১৬ সালে ট্রাম্পের প্রথমবার প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে দাঁড়ানোর আগে সেই তথ্য প্রকাশে গণমাধ্যমের সঙ্গে যোগাযোগ শুরু করেন এ পর্নো তারকা। এ তথ্য জানতে পেরে তাঁর মুখ বন্ধ রাখতে আইনজীবী মাইকেল কোহেনের মাধ্যমে স্টর্মিকে এক লাখ ৩০ হাজার ডলার দেন ট্রাম্প। এ কাজটি যুক্তরাষ্ট্রে বেআইনি নয়। তবে ট্রাম্প কোহেনকে এ অর্থ দেওয়ার সময় ব্যাবসায়িক নথিতে তা আইনি ফি হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছিল। প্রসিকিউটররা বলছেন, এটি একটি ব্যাবসায়িক জালিয়াতি, যা ঘটনাস্থল নিউ ইয়র্ক অঙ্গরাজ্যে একটি ফৌজদারি অপরাধ।
এর জের ধরেই প্রসিকিউটরদের আনা আরেকটি অভিযোগ হতে পারে নির্বাচনী আইন ভঙ্গ করা। স্টর্মিকে অর্থ দেওয়ার সম্ভাব্য কারণ ছিল যে ট্রাম্প চাননি নির্বাচনের আগে ভোটাররা এই তথ্য জানুক। নথি জালিয়াতির মাধ্যমে অপরাধ গোপন করাও একটি অপরাধ, যা আরো গুরুতর অভিযোগ।
স্টর্মি ড্যানিয়েলসকে অর্থ দেওয়ার ধামাচাপার ঘটনার জেরে ট্রাম্পের বিরুদ্ধে জালিয়াতিসহ ৩০ দফা অভিযোগ আনা হচ্ছে বলে জানিয়েছে সিএনএন। নিউ ইয়র্ক টাইমসসহ কয়েকটি গণমাধ্যম প্রতিষ্ঠান বলেছে, অভিযোগের সংখ্যা ‘দুই ডজন’।
সূত্র : এএফপি ও বিবিসি