আগুন নেভাতে প্রয়োজনীয় পানির উৎস ক্রমেই হারিয়ে যাচ্ছে রাজধানী থেকে। এরপরও এ বিষয়ে যেন সংশ্লিষ্টদের টনক নড়ছে না। দিনে দিনে হারিয়ে গেছে রাজধানীর প্রায় দুই হাজার জলাধার। রাজধানীতে আগুন লাগলেই এখন জলাধারের অভাব অনুভব করেন সংশ্লিষ্টরা। বিশেষ করে ফায়ার সার্ভিস হাড়ে হাড়ে টের পাচ্ছে জলাশয়ের অভাব।
গত মঙ্গলবার রাজধানীর বঙ্গবাজারে আগুন নিয়ন্ত্রণ করতে গিয়ে পানির সংকটে পড়েন ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা। এ কারণে আগুন নিয়ন্ত্রণে বেগ পেতে হয়। পরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফজলুল হক মুসলিম হলের পুকুর থেকে ৭টি পাইপ দিয়ে পানি সংগ্রহ করে ফায়ার সার্ভিস।
জলাধার রক্ষায় ২০০০ সালে পৃথক আইন করা হয়।
আইনে বলা আছে, কোনো অবস্থায় খাল-বিল, নদী-নালা, পুকুর ও প্রাকৃতিক জলাশয়ের স্বাভাবিক গতি ও প্রকৃতি পরিবর্তন করা যাবে না। এমনকি সড়ক-মহাসড়ক, ব্রিজ-কালভার্ট নির্মাণকালেও প্রাকৃতিক জলাশয়, জলাধার, খাল-নদী ইত্যাদির স্বাভাবিকতা নষ্ট করা যাবে না। জনস্বার্থে ও একান্ত প্রয়োজনে তা ভরাট করতে হলে, সেক্ষেত্রে সরকারের কাছ থেকে অনুমতি নিতে হবে।
তবে আইনের ব্যত্যয় ঘটিয়ে একের পর এক জলাধার ভরাট করে গড়ে তোলা হচ্ছে আবাসন ও স্থাপনা। নানাভাবে প্রভাব খাটিয়ে, আইনকে পাশ কাটিয়ে, যে যার ইচ্ছামতো এসব কাজ করে চলেছেন। গ্লোবাল ল থিংকার্স সোসাইটির ফাউন্ডার ও সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী রাওমান স্মিতা বলেন, জলাশয়, খাল এসবের তত্ত্বাবধায়ক হলো ঢাকা জেলা প্রশাসক। ঢাকা জেলা প্রশাসকের অনুমতি ও রাজউকের ছাড়পত্র ছাড়া জলাশয় ভরাট করা সম্ভব নয়।
মৎস্য বিভাগের পরিসংখ্যান অনুযায়ী, ১৯৮৫ সালে ঢাকায় প্রায় দুই হাজার পুকুর ছিল। এখন তা এসে ঠেকেছে মাত্র একশতে। ঢাকার পুকুর নিয়ে কয়েক বছর আগে করা একটি সমীক্ষা রয়েছে ইনস্টিটিউট অব ওয়াটার মডেলিংয়ের (আইডব্লিউএম)
এতে দেখানো হয়, গত সাড়ে তিন দশকে হারিয়ে গেছে ঢাকার ১০ হাজার হেক্টরের বেশি জলাভূমি, খাল ও নিম্নাঞ্চল। জলাশয় ভরাটের এ প্রবণতা অব্যাহত থাকলে ২০৩১ সাল নাগাদ ঢাকায় জলাশয় ও নিচুভূমির পরিমাণ মোট আয়তনের ১০ শতাংশের নিচে নেমে যাবে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।