রাজধানী ঝুঁকিপূর্ণ মার্কেটে ছেয়ে আছে

নিজস্ব প্রতিবেদক

কোনো কারণে আগুন লাগলে মুহূর্তের মধ্যে চারপাশে ছড়িয়ে পড়ার মতো যাবতীয় অনুকূল পরিবেশ থাকা মার্কেটের অভাব নেই রাজধানীতে। সরকারি ও স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানের মালিকানাধীন ছাড়াও ব্যক্তিগত মালিকানাধীন অসংখ্য মার্কেট রয়েছে এর মধ্যে। এগুলোর ভেতরে ভয়াবহ ঘিঞ্জি অবস্থা ও নকশাবহির্ভূত অসংখ্য অবৈধ দোকানপাটে ঠাসা।

কখনও আগুন লাগলে দ্রুত ছড়িয়ে পড়ার পাশাপাশি মার্কেট থেকে মানুষের সহজে বের হওয়ারও তেমন সহজ পথ নেই। দ্রুত অগ্নিনির্বাপণের সুযোগও এসব মার্কেটে সীমিত। এসব মার্কেটে শৃঙ্খলা ফেরানোর ব্যাপারে দায়িত্বশীল সংস্থা বা ব্যক্তিদেরও এ নিয়ে তেমন ভাবাবেগ নেই। ফলে চুড়িহাট্টা, সিদ্দিকবাজার, বঙ্গবাজারের মতো একের পর এক বড় দুর্ঘটনা রাজধানীতে ঘটেই চলছে।

রাজউক উত্তরা শপিং কমপ্লেক্সের মালিক রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (রাজউক) রাজউক কর্মচারী বহুমুখী সমবায় সমিতি। নকশা অনুযায়ী মার্কেটে ৩৪৬টি দোকান থাকার কথা। কিন্তু দেখা গেছে, বেজমেন্টের পার্কিংস্থলেই অবৈধ দোকান আছে ৭১টি। পুরো পার্কিং স্পেসে দোকান আর দোকান। পাওয়ার স্টেশন এমন জায়গায় স্থাপন করা হয়েছে যে, বাতাস ঢুকতেও পারে না, বের হতেও পারে না। দুই সিঁড়ির পাশে থাকা এক-আধটু ফাঁকা জায়গাতেও বসানো হয়েছে দোকান।

বাবুবাজারে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) মালিকানাধীন নওয়াব ইউসুফ মার্কেটটি ঝুঁকিপূর্ণের তালিকায় থাকা মার্কেটগুলোর একটি। ঢাকার দুই সিটি করপোরেশনের মালিকানাধীন বেশ কয়েকটি মার্কেটের পরিবেশও একই রকম। অবৈধ দোকানপাট বসিয়ে মার্কেটগুলোর ভেতরের পরিবেশ এমন করা হয়েছে, যা আগুন দ্রুত ছড়িয়ে পড়ার জন্য যথেষ্ট।

ডিএসসিসি বলছে, তারা ফুলবাড়িয়ার সুন্দরবন মার্কেট, নগর প্লাজা, সিটি প্লাজাসহ কয়েকটি মার্কেট থেকে দুই হাজারের মতো অবৈধ দোকান উচ্ছেদ করেছে। এরপরও অনেক অবৈধ দোকানপাট রয়ে গেছে। বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউ হকার্স মার্কেট অবৈধভাবে দোতলা তৈরি করা হয়েছে। সেখানে অবৈধ দোকান রয়েছে ২৫০টি।

কাপ্তানবাজার কমপ্লেক্সে ৪৫১টি, কাপ্তানবাজার কমপ্লেক্স-২ এ ৪৪৭টি, আহসান মঞ্জিল নবাববাড়ি সুপার মার্কেটে ৩৮টি, লক্ষ্মীবাজার মার্কেটে ৩৫টি, সূত্রাপুর কমিউনিটি সেন্টারে ৪৭টি, নিউ সুপার মার্কেটে (দক্ষিণ) ২০টি, নিউ সুপার মার্কেট ডি ব্লকে (উত্তর) ৪১টি, নীলক্ষেত রোড সাইড মার্কেটে ১১২টিসহ প্রায় সব মার্কেটেই রয়েছে অবৈধ দোকান। চন্দ্রিমা সুপার মার্কেটে বাতাস যাতায়াতের কোনো জায়গা এখন আর খালি নেই।

এ প্রসঙ্গে ডিএসসিসির প্রধান সম্পত্তি কর্মকর্তা রাসেল সাবরিন বলেন, আমরা যখনই খবর পাচ্ছি, তখনই ব্যবস্থা নিচ্ছি। কিছু দুষ্ট লোক আছে, তারা এটা বানাচ্ছে। আবার এ নিয়ে মামলাও হচ্ছে। তখন আমাদের আইনিভাবে মোকাবিলা করতে হচ্ছে।

মুক্তিযোদ্ধা কল্যাণ ট্রাস্টের মালিকানাধীন ওয়ারীর রাজধানী সুপার মার্কেটের ভেতরের পরিবেশ বঙ্গবাজার কমপ্লেক্সের চেয়ে কোনো অংশে কম নয়। সেখানেও দ্রুত আগুন ছড়িয়ে পড়ার মতো পর্যাপ্ত অনুকূল পরিবেশ বিদ্যমান। গুলশান-২ এর মতো ভিআইপি এলাকায় অবস্থিত পিংক সিটি মার্কেটের ভেতরের উন্মুক্ত স্থানগুলোতে দোকানপাট ও রেস্টুরেন্ট বসানো হয়েছে নকশাবহির্ভূতভাবে।

বাংলাবাজারের বইয়ের মার্কেটগুলোতে আগুন লাগলে পুড়ে ছাই হতে সময় লাগবে না। ইসলামপুরের অনেক মার্কেটের অবস্থাও একই রকম। মিরপুর রোডের চাঁদনী চক, গাউছিয়া, বলাকা, ধানমন্ডি হকার্স মার্কেটসহ বিভিন্ন মার্কেটে একবার আগুন লাগলে নেভানোই কঠিন হয়ে যাবে।

শেয়ার করুন