শুধু ওএমএস নয়, ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) পণ্য বিক্রিতেও কিছু অনিয়ম চলছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। দুটি পণ্য বিক্রিতেই ক্ষমতা দেখাচ্ছেন সিটি করপোরেশনের কাউন্সিলরসহ প্রভাবশালীরা। কার্ড বিতরণে অনিয়ম, এক স্থান থেকে পণ্যের ট্রাক আরেক স্থানে নিয়ে যাওয়া, নির্দিষ্ট সময়ে পণ্য বিক্রি না করা, পণ্য গায়েব করে দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে।
সরকারের কঠোর বার্তা, গ্রেপ্তার, তদন্ত কমিটিসহ নানা শাস্তিমূলক ব্যবস্থায়ও বন্ধ হয়নি অনিয়ম। ফলে নিম্ন আয়ের মানুষের অনেকে সরকারের এ সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। তবে দ্রব্যমূল্যের উর্দ্ধগতির বাজারে সরকারের দেওয়া স্বল্পমূল্যে পণ্য কিনে স্বস্তি প্রকাশ করছেন অনেকেই। তারা সরকারের এসব কর্মসূচির প্রশংসা করছেন।
টিসিবির মাধ্যমে নিম্ন আয়ের এক কোটি পরিবারকে সাশ্রয়ী দামে তেল, চিনি, ডালসহ কয়েকটি নিত্যপণ্য বিক্রির উদ্যোগ নেয় সরকার। অনিয়ম ঠেকাতে চালু হয় ‘ফ্যামিলি কার্ড’। সেই কার্ড বিতরণেও নানা অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে। যে স্থানে পণ্য বিক্রির কথা, সেখানে না করে অন্য জায়গায় ট্রাক দাঁড় করাচ্ছেন ডিলাররা। দুপুরে বিক্রি শুরুর কথা থাকলেও সম্প্রতি বেশিরভাগ ডিলার বিকেলে বিক্রি করছেন। কেউ কেউ বিক্রি করেন সন্ধ্যায়।
ফলে অনেক ক্রেতা নির্দিষ্ট স্থানে পণ্য কিনতে গিয়ে খালি হাতে ফিরছেন। আবার কোনো কোনো ডিলার সব পণ্য বিক্রি না করে অন্যত্র বেচে দেন। অভিযোগ রয়েছে কার্ড বিতরণের ক্ষেত্রেও। অনেকের অভিযোগ কাউন্সিলররা মুখ দেখে কার্ড বিতরণ করেছেন। কোনো কোনো পরিবার চার-পাঁচটি করে কার্ড পেয়েছে। আবার কেউ কেউ এনআইডি কার্ড নিয়ে কাউন্সিলরের অফিসে মাসের পর মাস ঘুরেও কার্ড পাননি। গত সোমবার রাজধানীর বনানী ও মহাখালীর কয়েকটি এলাকায় টিসিবির পণ্য বিক্রির সময় ক্রেতাদের সঙ্গে কথা বলে এসব তথ্য জানা গেছে।
ডিলারের মাধ্যমে টিসিবির পণ্য সরাসরি ভোক্তাদের কাছে বিক্রির কথা থাকলেও বরিশাল নগরে তা নিয়ন্ত্রণ করছেন মহানগর আওয়ামী লীগের এক নেতা। এ নিয়ে টিসিবি কর্মকর্তা ও ডিলারদের মধ্যে অস্বস্তি থাকলেও ভয়ে মুখ খুলতে পারছেন না কেউ।
তবে টিসিবির বরিশাল আঞ্চলিক অফিসের সহকারী পরিচালক শতদল মণ্ডল পণ্য বিক্রিতে সিটি করপোরেশনের নিয়ন্ত্রণ পুরোপুরি অস্বীকার করেন।
ওএমএসের চাল বিক্রিতেও অনিয়ম চলছে। ডিলার ও সরকার নিযুক্ত খাদ্য পরিদর্শকদের যোগসাজশে একশ্রেণির দালাল নানা কৌশলে নামে-বেনামে উঠিয়ে নিয়ে যাচ্ছে চাল। পরে তা বিক্রি করা হচ্ছে রাজধানীর বিভিন্ন বাজারে। গ্রিন রোড, বাংলামোটর, পলাশীবাজার, আজিমপুর ছাপড়া মসজিদ এলাকায় ওএমএস ডিলারের দোকানে গিয়ে দেখা গেছে, প্রকাশ্যেই তারা ইচ্ছেমতো নাম লিখে ও তার নিচে নিজেদের আঙুলের টিপ বসিয়ে চাল আত্মসাৎ করছেন।
রাজধানীর বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, জনপ্রতি ৫ কেজি চাল ও ২ কেজি আটা বিক্রির কথা থাকলেও ডিলাররা বাড়তি টাকা নিয়ে ১০ থেকে ৩০ কেজি পর্যন্ত চাল বিক্রি করছেন।
রাজধানী ছাড়া ঢাকার বাইরেও ওএমএস কার্যক্রমে নানা অনিয়ম হচ্ছে। সম্প্রতি দরিদ্রদের কেনার সুযোগ না দিয়ে ওএমএস ট্রাকের সব চাল কিনে নেন নারায়ণগঞ্জ মহানগর আওয়ামী লীগের সদস্য ও সিটি করপোরেশনের ১৭ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর (প্যানেল মেয়র-১) আবদুল করিম বাবু।
খাদ্য অধিদপ্তরের ঢাকা রেশনিংয়ের প্রধান নিয়ন্ত্রক সুরাইয়া খাতুন বলেন, কোনো তত্ত্বাবধায়ক বা বিক্রয়কর্মী যদি টাকার বিনিময়ে অনিয়ম করেন, তাহলে তার বিরুদ্ধে ধারা অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এ ছাড়া অভিযোগের বিষয়টি খোঁজখবর নেব।
এ ব্যাপারে টিসিবির চেয়ারম্যান ব্রিগেডিয়ার জেনারেল আরিফুল হাসান বলেন, সংকটেও সরকার নিম্ন আয়ের মানুষের জন্য শত শত কোটি টাকা ভর্তুকি দিয়ে পণ্য বিক্রি করছে। এতে কোনো অনিয়ম হলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। তবে অনিয়মের অভিযোগ সুনির্দিষ্ট হতে হবে।
তিনি বলেন, কার্ড করার দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে সিটি করপোরেশনকে। তবে সিটি করপোরেশনের কোনো কোনো কাউন্সিলর বলেছেন, কার্ড নেওয়ার মতো লোক পাচ্ছেন না তারা। টিসিবি দ্রুত সব কার্ড বিতরণের আহ্বান জানিয়েছে।