জাতীয় সংসদের সুবর্ণজয়ন্তী: অগ্রযাত্রার শপথে বলীয়ান হই

সম্পাদকীয়

আজ ৭ এপ্রিল, ৫০ বছর পূর্ণ করল বাংলাদেশ জাতীয় সংসদ। স্বাধীনতার পর জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে ১৯৭৩ সালের ৭ এপ্রিল বাংলাদেশ জাতীয় সংসদের যাত্রা শুরু হয়। জাতির পিতা ছিলেন প্রথম সংসদের সংসদ নেতা। জাতীয় সংসদের প্রথম অধিবেশন শুরু হয়েছিল ঢাকার তেজগাঁওয়ে তৎকালীন জাতীয় সংসদ ভবনে। সেই হিসাবে বাংলাদেশ জাতীয় সংসদ আজ অর্ধশত বছর পূর্ণ করল। বয়সের হিসেবে পঞ্চাশ বড় কোনো পরিমাপ না হলেও, কিংবা, জাতিরাষ্ট্র বাংলাদেশের ইতিহাসেও পঞ্চাশ কোনো বড় পরিমাপ না হলেও আমাদের রাষ্ট্রীয় কর্মযজ্ঞের কেন্দ্রবিন্দু বাংলাদেশ জাতীয় সংসদের সুবর্ণজয়ন্তী কোনো সাধারণ বিষয় নয়। বাঙালির জাতিরাষ্ট্র বাংলাদেশের অভ্যুদয় ও অগ্রযাত্রার পথে পঞ্চাশ বছরের পথচলা নিঃসন্দেহে শ্লাঘার বিষয়। স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশের আইন প্রণয়ন ও রাষ্ট্রীয় কর্মযজ্ঞের কেন্দ্রবিন্দু হিসেবে জাতির পিতার নেতৃত্বে যে অভিযাত্রা শুরু হয়েছিল, তা কোনো আলোচনার টেবিলের ফলশ্রুতিতে জন্ম নেয়নি। এই সংসদের জন্ম ত্রিশ লক্ষ মানুষের রক্তের বিনিময়ে অর্জিত। এ অর্জনে আমাদের মায়েদের রয়েছে অবিস্মরণীয় আত্মত্যাগের অবদান।

জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ৭ মার্চের ঐতিহাসিক ও কালজয়ী আহ্বানের পথ ধরে ১৯৭১ এর ২৬ মার্চ অন্ধকার থেকে আলোর পথের যাত্রার সূচনা। বাঙালির একমাত্র রাষ্ট্র বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঘোষণার মধ্য দিয়ে পাকিস্তানের ধ্বংসস্তুপের উপর দাঁড়িয়ে বাংলাদেশের রক্তক্ষয়ী এই যে পথচলা তা কিন্তু কুসুমাস্তীর্ণ নয়। বহুবন্ধুর পথ অতিক্রম করে আমরা আজ সুবর্ণজয়ন্তী উদ্যাপন করতে যাচ্ছি আমাদের নিজস্ব আইন প্রণয়ন সংস্থার। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট কাল রাত্রির নৃশংস হত্যাযজ্ঞের দ্বারা বাঙালির একমাত্র রাষ্ট্র বাংলাদেশের আদর্শের ভিত্তিভূমি ধ্বংস করে দেওয়ার উদ্যত উদ্যোগ নিয়েছিল পাকিস্তানের কায়েমী স্বার্থের বাংলাদেশের উচ্ছিষ্ট ভোগীরা। মোশতাক-জিয়া এবং পরবর্তীতে খালেদা-এরশাদের হাত ধরে বাংলাদেশের পথ চলা উল্টো পথ ধরে চলতে থাকে।

universel cardiac hospital

সংগ্রাম, আন্দোলন আর জনগণের ভালোবাসাকে সম্বল করে ২১ বছর পর ১৯৯৬ এর জুনে আমরা আবার পথ খুঁজে পাই। কিন্তু ষড়যন্ত্র আর প্রতারণার কারণে আমাদের এই খুঁজে পাওয়া পথ অচিরেই হারিয়ে যায়। আমরা যে তিমিরে ছিলাম সেখানেই পুনরায় ফিরে যাই। এবার ফখরুদ্দিন-মঈনউদ্দিনের বেশ ধরে এগিয়ে আসে আরেক দল। বাংলার নবযাত্রার আন্দোলনকে নি:শেষ করে দেয়ার চক্রান্ত হয়। আবার জনতার ভালোবাসার জয় হয়। অত্যাচার নিপীড়ন আর হত্যা প্রচেষ্টার সকল ষড়যন্ত্র ব্যর্থ করে দিয়ে ২০০৮ সালে আমরা আবার ফিরে পাই আমাদের কাঙ্ক্ষিত পথ। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুরর হমানের প্রদর্শিত পথে অগ্রসর হওয়ার সুবর্ণ সুযোগ পাই আমরা। আমাদের সংসদ আবার যথার্থ সংসদে পরিণত হয়।

একদিন বঙ্গবন্ধু যে সংসদে আইন পাশ করিয়েছিলেন যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের, আমরা বাংলাদেশর সবচেয়ে জনপ্রিয় ও বিচক্ষণ নেতা, জননেত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বঙ্গবন্ধুর খুনিদের বিচারের পথ সুগম করতে আইন পাশ করিয়েছি। ফলশ্রুতিতে বঙ্গবন্ধু হত্যাকারীদের বিচারের কাজ সম্পন্ন করে, যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের কাজ সম্পন্ন করে আমরা জাতিকে কলঙ্কমুক্ত করতে পেরেছি, করতে পেরেছি আইনের শাসনপ্রতিষ্ঠা। পুনরায় আমাদের সংসদ আজ আমাদের রাষ্ট্রীয়কর্মকাণ্ডের কেন্দ্রবিন্দু। তাই তো আন্তর্জাতিক সংসদীয় কর্মকাণ্ডেও আমাদের মর্যাদা আজ সুদৃঢ়। আমাদের সংসদের মাননীয় স্পীকার ড. শিরিন শারমিন চৌধুরী কমনওয়েলথ পার্লামেন্টারি ইউনিয়নের সভাপতি পদে বৃত হন। আমাদের একজন সদস্য আন্তর্জাতিকপার্লামেন্টারি ইউনিয়নের সভাপতি পদে বৃত হন। আমাদের এই অর্জন, পঞ্চাশ বছরের এই অর্জন যে কোনো মানদণ্ডেই গৌরবের ও গর্বের। আজ মহান জাতীয় সংসদের পথ চলার পঞ্চাশ বছর পূর্তিতে, সুবর্ণজয়ন্তীতে আসুন আমরা আমাদের সামনের দিনগুলির অগ্রযাত্রায় শপথে বলীয়ান হই।

শেয়ার করুন