চোখের সামনে আগুনে পুড়ে ছারখার হলো তিলে তিলে গড়ে তোলা স্বপ্নের কারখানা। কান্না আর আহাজারিতে ভারি হয়ে উঠেছে ঢাকার বঙ্গবাজার। ব্যবসায়ীদের চিৎকারে কাঁপুনি দিয়ে উঠেছে পুরো ঢাকা শহর। পুরো বঙ্গবাজার যেন আগুনের লেলিহান শিখায় পরিণত হয়েছে। ফায়ার সার্ভিসের অর্ধশতাধিক ইউনিট কাজ করেছে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনার জন্য। আগুন নিয়ন্ত্রণে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী, নৌবাহিনী ও বিমানবাহিনীর সাহায্যকারী দলও যোগ দেয়। ভোর ৬টা নাগাদ আগুন লাগলেও সবশেষ দুপুর সাড়ে ১২টায় আগুন নিয়ন্ত্রণে আসে বলে জানায় ফায়ার সার্ভিস কর্তৃপক্ষ। তবে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনার আগেই সব পুড়ে ভস্মস্তূপে পরিণত হয় রাজধানীর কাপড়ের অন্যতম এই বঙ্গবাজার। কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্য দেশের যে কোনো স্থানে আগুন লাগলে সব পরিস্থিতি উপেক্ষা করে সে আগুন নেভাতে সর্বস্বটা দিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়েন ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা। কিন্তু বঙ্গবাজারে আগুন নেভানোর কাজে নিয়োজিত ফায়ার সার্ভিসের এসব কর্মীর ওপর অতর্কিত হামলা করল স্থানীয় বাজারের ব্যবসায়ীরা। একদিকে আগুন দাউ দাউ করে জ্বলে। অন্যদিকে ক্ষুব্ধ ব্যবসায়ীরা ইটপাটকেল নিক্ষেপ করতে থাকে আগুন নিয়ন্ত্রণে নিয়োজিত ফায়ার সার্ভিস কর্মী এবং পুলিশের ওপর।
প্রাথমিকভাবে দুই পক্ষের এমন পাল্টাপাল্টি অবস্থান দেখে কিছুটা রাজনৈতিক পরিস্থিতি মনে হলেও বাস্তবে তা নয়। মিডিয়ার মাধ্যমে দেখা যায়, একদিকে উৎসুক জনতা লাঠিসোটা নিয়ে ফায়ার সার্ভিসের গাড়ি ভাঙচুর করছে, কর্মীদের ওপর ক্ষিপ্ত হয়ে মারধর করছে অন্যদিকে ফায়ার সার্ভিস কর্মীরা আগুন নিয়ন্ত্রণে প্রাণপণ চেষ্টা করে চলেছে। বিষয়টি একেবারে অমানবিক বলে মনে হয়েছে। যদিও ব্যবসায়ীদের পক্ষ থেকে বিভিন্নভাবে তাদের দায়িত্ব অবহেলাকে দায়ী করে এমন আচার-আচরণ করা হয়েছে বলে গণমাধ্যমে উঠে এসেছে। তবুও দেশের মানুষের কল্যাণে প্রতিষ্ঠিত এ প্রতিষ্ঠানের সব কার্যক্রম জনগণের সেবায় নিবেদিত থাকার ঘোষণা রয়েছে। এ বিভাগে কর্মরত কর্মীরা অগ্নিনির্বাপণ, অগ্নি প্রতিরোধ, উদ্ধার, আহতদের প্রাথমিক চিকিৎসা প্রদানসহ নানা বিষয়ে কাজ করে থাকেন। নিজেদের নিরাপত্তার কথা চিন্তা করায় পুরো বঙ্গবাজারের আগুন নিয়ন্ত্রণে আনতে দেরি হয়েছে। যদি এমনটিও ঘটে থাকে তবে সেটিও দায়িত্বশীল আচরণে তারা গাফিলতি করেছে। কেননা তাদের কাজই হলো যে কোনো পরিস্থিতিতে ফায়ার ফাইটার হয়ে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনা, জীবনবাজি রেখে আগুনের মধ্যে পড়ে থাকা সাধারণ মানুষকে উদ্ধার করা।
তবে আমাদের দেশে বেশিরভাগ প্রতিষ্ঠান নিয়মবহির্ভূতভাবে গড়ে ওঠার একটা প্রবণতা দেখা যায়। বিশেষ করে বড় বড় ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে আগুন লাগার পর তদন্ত কমিটির প্রতিবেদনে জানা যায়, প্রতিষ্ঠানটিতে অগ্নিনিরাপত্তা সদন ছিল না কিংবা আগুন থেকে রক্ষা পেতে ফায়ার সার্ভিসের নির্দেশ মোতাবেক ওই ভবনগুলোয় যথাযথ ব্যবস্থা নেয়া হয়নি। এজন্য শুধু আগুন লাগার পরই এমন ঘটনার উদ্ঘাটন আমাদের কাম্য নয়। এ জন্য নিয়মতান্ত্রিকভাবে সব ব্যবসা প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠতে অবশ্যই সরকারের ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের পাশাপাশি, সিটি করপোরেশন এবং আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর নিয়মিত মনিটরিং অতি জরুরি হয়ে দাঁড়িয়েছে।
এতবড় একটি অগ্নিকাণ্ডে পানির সংকট পড়াটাও কিন্তু অস্বাভাবিক বলে মনে হয়নি। পরে দেখা গেছে হাতিরঝিল থেকে হেলিকপ্টারে করে পানি আনা হয়েছে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পুকুরগুলো থেকে পানি এনে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনা হয়েছে। সুতরাং শুধু ফায়ার সার্ভিসের কর্মীদের ওপর ক্ষিপ্ত না হয়ে, তাদের ইটপাটকেল ছুড়ে কোনো সমাধান হবে না। বরং সেখানে বৈরী পরিস্থিতি তৈরি হবে। তাই সবকিছু মাথায় নিয়ে আমাদের সীমাবদ্ধতার জায়গাটিও ভাবতে হবে।
লেখক : শিক্ষার্থী, সরকারি বিএল কলেজ, খুলনা।