বগুড়ার সেই বিচারকের বিবৃতির সঙ্গে ‘ফাঁস হওয়া অডিও’র মিল নেই!

বগুড়া প্রতিনিধি

বগুড়া সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের শ্রেণিকক্ষ ঝাড়ু দেয়া নিয়ে শিক্ষার্থীদের দ্বন্দ্বের জেরে দুই অভিভাবককে বিচারকের পা ধরতে বাধ্য করার ঘটনার একটি অডিও ক্লিপ ফাঁস হয়েছে। ওই ক্লিপটি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে ভাইরাল হয়েছে। সেদিন ঘটনার সময় কি ঘটেছিল অডিও ক্লিপটিতে উঠে এসেছে। অডিও ক্লিপটিতে বিচারক রুবাইয়া ইয়াসমিনকে উচ্চস্বরে ধমক দিয়ে শিক্ষার্থীদের শাসাতে শোনা যায়। তিনি এক শিক্ষার্থীকে থাপড়ে সব দাঁত ফেলে দেয়ার কথা বলেন।

এছাড়া তিনি বলেন, ‘জজ মানে জানিস তুই, জজ শব্দ বানান করতে পারবি তুই? বানান করে লিখে দেখা!’ এ সময় এক অভিভাবক বিষয়টি ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টিতে দেখতে অনুরোধ করলে শিশুদের বিরুদ্ধে মামলার হুমকি দেন জজ রুবাইয়া ইয়াসমিন। সরকারি স্কুল সম্পর্কেও বিতর্কিত মন্তব্য করতে শোনা যায় বিচারককে। সে সময় তার সঙ্গে থাকা পুলিশের এক কর্মকর্তা এ বিষয়টির পরিণাম সম্পর্কে উপস্থিত ছাত্রী ও অভিভাবকদের সতর্ক করতে থাকেন। স্কুলের প্রধান শিক্ষক ও অন্য কয়েকজন শিক্ষক শিক্ষার্থীর কথা শোনা যায় অডিওতে। জজের মেয়ের সঙ্গে বন্ধুত্ব রেখে বাড়তি সুবিধা নেওয়ার বদলে এমন ঘটনায় আক্ষেপ প্রকাশ করেন প্রধান শিক্ষিকা।

universel cardiac hospital

সম্প্রতি বিদ্যালয়ের শ্রেণিকক্ষ ঝাড়ু দেওয়া নিয়ে সহপাঠীদের সাথে দ্বন্দ্ব হয় বগুড়ার অতিরিক্ত দায়রা জজ রুবাইয়া ইয়াসমিনের মেয়ের। এর জেরে, ২১ মার্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষিকার মাধ্যমে মেয়ের সহপাঠীদের অভিভাবকদের ডেকে এনে পা ধরে ক্ষমা চেয়ে অপদস্থ করার অভিযোগ উঠে অতিরিক্ত দায়রা জজ রুবাইয়া ইয়াসমিনের বিরুদ্ধে। এ ঘটনার পরে শিক্ষার্থী এবং অভিভাবকরা বিদ্যালয়ের সামনের সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করেন। পরে রাত ৯টার দিকে বগুড়া জেলা ও দায়রা জজ একেএম মোজাম্মেল হক চৌধুরী ফোনে জেলা প্রশাসক সাইফুল ইসলামকে জানান, অতিরিক্ত জেলা জজ রুবাইয়া ইয়াসমিনের বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে। জেলা প্রশাসক বিষয়টি অভিভাবক ও শিক্ষার্থীদের জানালে তারা শান্ত হন এবং স্কুল ত্যাগ করেন। পরে গত ২৩ মার্চ দুই শিক্ষার্থীর অভিভাবককে পা ধরতে বাধ্য করার অভিযোগে অতিরিক্ত জেলা জজ রুবাইয়া ইয়াসমিনকে প্রত্যাহার করে আইন মন্ত্রণালয় সংযুক্ত করা হয়। সুপ্রিম কোর্টের ডেপুটি রেজিস্ট্রার (প্রশাসন ও বিচার) মো. মিজানুর রহমান স্বাক্ষরিত এ সংক্রান্ত সার্কুলার জারি করা হয়। এ ঘটনার কয়েকদিন পর রুবাইয়া ইয়াসমিন তিন পাতার সইবিহীন একটি বিবৃতি সাংবাদিকদের কাছে পাঠান। সেখানে তিনি তার বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগ অস্বীকার করার পাশাপাশি তার মেয়েকে র‌্যাগিং ও বুলিং করা হয়েছে বলে পাল্টা অভিযোগ করেন।

বিবৃতিতে বিচারক বলেন, আমার মেয়েকে জানুয়ারি মাসে ভিএম স্কুলে ভর্তি করি। সে অত্যন্ত মেধাবী ও শান্ত প্রকৃতির ছিল বিধায় ওই স্কুলের স্থানীয় শিক্ষার্থী ও তার কয়েকজন বান্ধবীর সমন্বয়ে গঠিত একটি গ্রুপ তাকে (জজের মেয়ে) সবসময় নতুন শিক্ষার্থী হিসেবে র‌্যাগিং ও বুলিং করে আসছিল। তারা তাকে বলত- ভাব ধরে চুপ করে থাকে। তাদের মধ্যকার Clash Mitigate করার জন্য ২০ মার্চ আমার মেয়ের জন্মদিনে একটি কেক কিনে পাঠাই। আমার মেয়ে ক্লাসের সকল শিক্ষার্থীকে নিয়ে কেকটি কেটে খায়। তাছাড়া ২০ মার্চ বিভিন্ন ক্লাসের আরও দুজন ছাত্রীর জন্মদিন ছিল, বিধায় তাদের ডেকে এনে তার কেকটি শেয়ার করে। কিন্তু মরিয়ম মাহি ও তার গ্রুপের মেয়েরা আমার মেয়ের সকলের সঙ্গে মিলেমিশে চলার বিষয়টি মেনে নিতে পারছিল না। তার পরিপ্রেক্ষিতে ২০ মার্চ তাদের ক্লাসরুমের দরজা লাগিয়ে বলা হয় যে, ৫৩ থেকে ৫৭ রোল ক্লাসরুম ঝাড়ু দেবে। আমার মেয়ের ক্লাসের বান্ধবী যার রোল ৭ (মানসুরা) তাকে সহযোগিতার জন্য চেষ্টা করলে ওই গ্রুপের মেয়েরা তাকে সহযোগিতা করতে নিষেধ করে।

তবে তার বিবৃতির সাথে ফাঁস হওয়া অডিও ক্লিপের মধ্যে মিল না থাকায় নতুন বিতর্কের সৃষ্টি করেছে। এরই মধ্যে প্রধান শিক্ষকসহ বিদ্যালয়ের অভিযুক্ত শিক্ষকদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ারও দাবি উঠেছে।

এ বিষয়ে বগুড়ার জেলা প্রশাসক সাইফুল ইসলাম বলেন, ঘটনা নিয়ে তদন্ত চলছে। তদন্তে অনিয়ম বা প্রভাব বিস্তারের কোন সুযোগ নেই। তথ্য-প্রমাণের ভিত্তিতে অভিযোগ প্রমাণিত অভিযুক্তদের বিচারের মুখোমুখি হতে হবে।

শেয়ার করুন