পবিত্র রমজান মাসের শেষের দিকে এসে ভয়ংকর হয়ে উঠেছে পশ্চিমবঙ্গের তাপমাত্রা। এখনো গ্রীষ্মকাল শুরু হতে কয়েকদিন বাকি। কিন্তু এরই মধ্যে রাজ্যের বেশিরভাগ স্থানে উষ্ণতার রেকর্ড গড়েছে। কলকাতা ও আশপাশের জেলাতে তাপমাত্রার পারদ ৪০ ডিগ্ৰি সেলসিয়াসের কাছাকাছি চলে গেছে।
এমন দাবদাহে হাঁসফাঁস অবস্থা মানুষের। রাস্তায় বের হলেই রোদের তেজ যেন শরীর পুড়িয়ে দিচ্ছে। আলিপুর আবহাওয়া দপ্তর আগেই সতর্ক করেছে, এমন আবহাওয়ায় ভরদুপুরে রাস্তায় বের হবেন না। এতে হিট স্ট্রোকের আশঙ্কা রয়েছে। হতে পারে ডিহাইড্রেশনের সমস্যাও।
সকালের দিকে তাপমাত্রা কিছুটা কম থাকলেও বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে রোদের চোখরাঙানি বাড়ছে। রোদের এতটাই তেজ যে, ঘরের বাইরে পা ফেলা দায়।
তাপমাত্রা অস্বাভাবিকভাবে বেড়ে যাওয়ার বিষয়ে শ্যামনগরের এক গৃহবধু মনিষা ডুগজ্ঞার বলেন, কষ্ট হচ্ছে খুব। এত গরম যে বাচ্চাদের পায়ের নিচে ফোস্কা পড়ে যাচ্ছে। ঘরে বসেও শান্তি নেই। ছাদের ওপর জামা-কাপড় শুকাতে গেলে কষ্ট হচ্ছে। এয়ারকন্ডিশনার (এসি) চালিয়ে কিছুক্ষণের জন্য মুক্তি পাওয়া। কিন্তু সেটি তো শরীর খারাপের ঘর। তার চেয়ে ভালো প্রকৃতির সঙ্গে থাকা।
কলকাতা আলিপুর আবহাওয়া দফতর জানিয়েছে, মঙ্গলবার (১১ এপ্রিল) কলকাতায় সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল ৩৯ দশমিক ৮ ডিগ্ৰি সেলসিয়াস এবং সর্বনিম্ন ২৮ দশমিক ৬ ডিগ্ৰি সেলসিয়াস, যা স্বাভাবিকের চেয়ে তিন ডিগ্রি বেশি। বুধবার কলকাতা ও আশপাশের জেলাগুলোতে তাপমাত্রা আরও বাড়তে পারে। সকালেই তাপমাত্রার পারদ ৩৮ ডিগ্ৰি ছুঁয়েছে। বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে তা ৪০ ডিগ্ৰি ছুঁতে পারে বলে সতর্ক করেছে আবহাওয়া অফিস। এসব এলাকায় আপাতত বৃষ্টিপাতের কোনো সম্ভাবনা নেই বলে জানিয়েছে কর্তৃপক্ষ।
কলকাতার বাসিন্দা পম্পা দে বলেন, প্রচণ্ড গরম। রাস্তাঘাটে গরম বাতাস বইছে। মনে হচ্ছে, এই গরম আরও অনেক দিন থাকবে। এ পরিস্থিতিতে যতটা সম্ভব ঘরের বাইরে না বেরোনোই ভালো।
পশ্চিমবঙ্গে এই সময়ে এত গরম পড়ার কারণ হিসেবে সাবেক শিক্ষক ও পরিবেশবিদ লাল বিহারী চট্টরাজ বলেন, দিন দিন আবহাওয়ার পরিবর্তন হচ্ছে। পাশাপাশি, জলবায়ুর পরিবর্তনে স্বাভাবিকভাবেই গরম বাড়ছে। আমাদের দেশে ও রাজ্যে গাছ-জলাশয় ক্রমশ কমছে। বেশি গাছপালা থাকলে তা তাপমাত্রাকে কিছুটা সহনীয় করে তোলে। কিন্তু কলকাতা শহরে সেসব নেই, অথচ অন্য শহর থেকে কলকাতার জনঘনত্ব বেশি। স্বাভাবিকভাবেই এ শহরে তাপমাত্রাও বেশি।
তিনি বলেন, শহরের উন্নয়নের জন্য বিভিন্ন ধরনের নির্মাণকাজ হচ্ছে। ফলে কংক্রিট বাড়ছে। তার সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে দূষণ। সেই কারণেই গরম বাড়ছে।