মিয়ানমারের সেনাবাহিনীর বিমান হামলায় নিহতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১০০ জনে। নিহতদের মধ্যে অনেক শিশুও রয়েছে। সেনা শাসনের বিরোধীদের আয়োজিত একটি অনুষ্ঠানে যোগ দেওয়া এসব মানুষের ওপর মঙ্গলবার (১১ এপ্রিল) বোমা হামলা চালায় সামরিক বাহিনী।
এর আগে প্রাথমিকভাবে নিহতের সংখ্যা অর্ধশতাধিক বলে জানা গিয়েছিল। প্রত্যক্ষদর্শী, স্থানীয় গণতন্ত্রপন্থি গোষ্ঠীর সদস্য এবং মিয়ানমারের স্বাধীন মিডিয়ার বরাত দিয়ে বুধবার (১২ এপ্রিল) এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে বার্তাসংস্থা এপি।
দুই বছরেরও বেশি সময় আগে সামরিক অভ্যুত্থানে মিয়ানমারে গণতন্ত্রপন্থি নেত্রী অং সান সু চি নেতৃত্বাধীন বেসামরিক সরকারের পতনের পর থেকে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার এই দেশটিতে অস্থিরতা চলছে। মূলত অং সান সুচির নির্বাচিত সরকারের কাছ থেকে সামরিক বাহিনী ক্ষমতা দখল করলে মিয়ানমার অশান্তিতে নিমজ্জিত হয়। আর এর ফলেই দেশটিতে ব্যাপক বিক্ষোভ এবং সশস্ত্র বিদ্রোহের সূচনা হয়।
মিয়ানমারের সামরিক বাহিনী তার বিরোধীদের দমন করতে তাদের বিরুদ্ধে প্রাণঘাতী শক্তি ব্যবহার করেছে বলে অভিযোগ রয়েছে। এমনকি বিরোধীদের সশস্ত্র সংগ্রাম মোকাবিলায় ক্রমবর্ধমানভাবে বিমান হামলা চালিয়ে যাচ্ছে দেশটির জান্তা সরকার। দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার এই দেশটির নিরাপত্তা বাহিনীর হাতে তখন থেকে ৩ হাজার বেসামরিক নাগরিক নিহত হয়েছেন বলে অনুমান করা হয়।
একজন প্রত্যক্ষদর্শী দ্য অ্যাসোসিয়েটেড প্রেসকে বলেছেন, মিয়ানমারের সাগাইং অঞ্চলের কানবালু শহরের পাজিগি গ্রামের বাইরে দেশটির বিরোধী গোষ্ঠীর একটি স্থানীয় কার্যালয় খোলার জন্য মঙ্গলবার সকাল ৮টায় বহু মানুষ জড়ো হয়েছিলেন। উপস্থিত সেই মানুষের ভিড়েই সরাসরি বিমান হামলা চালায় সেনাবাহিনী।
হামলার শিকার এই অঞ্চলটি মিয়ানমারের দ্বিতীয় বৃহত্তম শহর মান্দালয়ের প্রায় ১১০ কিলোমিটার (৭০ মাইল) উত্তরে অবস্থিত।
নামপ্রকাশ না করার শর্তে ওই প্রত্যক্ষদর্শী আরও বলেন, হামলার প্রায় আধা ঘণ্টা পরে একটি হেলিকপ্টার সেখানে উপস্থিত হয় এবং ঘটনাস্থলে উপস্থিত জনতার গুলিবর্ষণ করে।
এপি বলছে, হামলার পর প্রাথমিক রিপোর্টে মৃতের সংখ্যা প্রায় ৫০ বলে জানানো হয়েছিল। কিন্তু পরে দেশটির স্বাধীন মিডিয়ার রিপোর্টে নিহতের সংখ্যা বেড়ে প্রায় ১০০ জনে উন্নীত হয়েছে বলে জানানো হয়। অবশ্য হামলার বিস্তারিত তথ্য স্বাধীনভাবে নিশ্চিত করা অসম্ভব কারণ রিপোর্টিংয়ের বিষয়ে সামরিক সরকারের বিধিনিষেধ রয়েছে।
ওই প্রত্যক্ষদর্শী বলেন, ‘আমি মানুষের ভিড় থেকে অল্প দূরে দাঁড়িয়ে ছিলাম। একপর্যায়ে ঘটনাস্থলে যুদ্ধবিমান এগিয়ে আসার বিষয়ে আমার এক বন্ধু ফোনে আমার সাথে ফোনে যোগাযোগ করে। ফাইটার জেটটি সরাসরি ভিড়ের ওপর বোমাবর্ষণ করে এবং আমি কাছের একটি খাদে ঝাঁপ দিয়ে লুকিয়ে পড়ি।’
তার ভাষায়, ‘কয়েক মুহূর্ত পরে আমি উঠে দাঁড়িয়ে চারপাশে মানুষকে টুকরো টুকরো এবং মৃত অবস্থায় দেখতে পাই। অফিস ভবনটিও আগুনে পুড়ে ছাই হয়ে গেছে। আহত হয়েছেন প্রায় ৩০ জন। আহতদের নিয়ে যাওয়ার সময় একটি হেলিকপ্টার এসে আরও মানুষকে গুলি করে। আমরা এখন দ্রুত মৃতদেহ দাহ করছি।’
এপি বলছে, উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের জন্য ঘটনাস্থলে প্রায় ১৫০ জন লোক জড়ো হয়েছিলেন এবং নিহতদের মধ্যে নারী ও ২০ থেকে ৩০ জন শিশুও রয়েছে। প্রত্যক্ষদর্শী বলেন, স্থানীয়ভাবে গঠিত সরকারবিরোধী সশস্ত্র গোষ্ঠী এবং অন্যান্য বিরোধী সংগঠনের নেতারাও সেনাবাহিনীর এই বিমান হামলায় নিহত হয়েছেন।
জাতিসংঘ, যুক্তরাষ্ট্র ও অন্যান্যরা এই হামলার তীব্র নিন্দা করেছে এবং সামরিক বাহিনীকে জবাবদিহি করার জন্য পদক্ষেপ নেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে।
বিরোধী ন্যাশনাল ইউনিটি গভর্নমেন্ট (এনইউজি) এক বিবৃতিতে বলেছে, ‘সন্ত্রাসী সামরিক বাহিনীর এই জঘন্য হামলা নিরপরাধ বেসামরিক নাগরিকদের বিরুদ্ধে তাদের নির্বিচারে চরম শক্তি প্রয়োগের আরেকটি উদাহরণ, এটি একটি যুদ্ধাপরাধ।’
মূলত এনইউজি সেনাবাহিনীর বিরোধিতা করে নিজেকে মিয়ানমারের বৈধ সরকার বলে থাকে। মঙ্গলবার যে অফিসটি উদ্বোধন করা হচ্ছিল তা ছিল এই গোষ্ঠীটির প্রশাসনিক নেটওয়ার্কের অংশ।