নির্বাচনে সব দলের অংশগ্রহণে যুক্তরাষ্ট্রের সহযোগিতা চেয়েছে সরকার: পররাষ্ট্রমন্ত্রী

নিজস্ব প্রতিবেদক

এ কে আবদুল মোমেন
পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আবদুল মোমেন। ফাইল ছবি

সুষ্ঠু নির্বাচন শুধু সরকার ও নির্বাচন কমিশনের একার চেষ্টায় সম্ভব নয়। এ জন্য সব দল ও মতের লোকের ঐকান্তিকতা, আন্তরিকতা, অঙ্গীকার থাকতে হবে বলে মন্তব্য করেছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন। তিনি বলেছেন, এ জন্য সরকার যুক্তরাষ্ট্রের সহযোগিতা চেয়েছে।

ওয়াশিংটনে মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিঙ্কেনের সঙ্গে বৈঠকে নির্বাচন নিয়ে আলোচনার বিষয়ে আজ রোববার দুপুরে জানতে চাইলে পররাষ্ট্রমন্ত্রী এসব মন্তব্য করেন। ওয়াশিংটনের স্থানীয় সময় গত ১০ এপ্রিল আব্দুল মোমেন বৈঠক করেন অ্যান্টনি ব্লিঙ্কেনের সঙ্গে। ওই বৈঠকের পর ঢাকায় ফিরে তিনি আজ পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে প্রথমবারের মতো সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন।

universel cardiac hospital

মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী আলোচনায় কয়েকটি বিষয় নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন বলে জানান পররাষ্ট্রমন্ত্রী আব্দুল মোমেন। তিনি বলেন, কয়েকটি বিষয়ে তাদের প্রশ্ন আছে। সেগুলোতে আমরা উত্তর দিয়েছি। ডিএসএ (ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন) সম্পর্কে একটা প্রশ্ন হয়েছে। আমরা বলেছি যে আমরা মনে করি, ডিএসএতে কোনো কোনো ক্ষেত্রে প্রয়োগটা ঠিকমতো হয়নি। সেগুলো আমরা বিচার করছি। আর এখানে যদি কোনো দুর্বলতা থাকে উই উইল টেক কেয়ার অফ ইট (আমরা সেগুলোর সুরাহা করব)।

ডিজিটাল নিরাপত্তা নিয়ে মার্কিন সরকারের প্রশ্ন রয়েছে উল্লেখ করে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ডিএসএ মতপ্রকাশের স্বাধীনতা ক্ষুণ্ন করার জন্য করা হয়নি। দুই কারণে এটি করা হয়েছে। একটি হচ্ছে, কেউ যাতে ধর্মীয় উন্মাদনা সৃষ্টি করে দাঙ্গা-টাঙ্গা করতে না পারে। আরেকটি হলো, কোনো ব্যক্তিবিশেষকে কোনো কারণ ছাড়াই, মিথ্যা তথ্য দিয়ে প্রচারণার মাধ্যমে যাতে অসম্মান করা না হয়। কখনো কখনো প্রয়োগের ক্ষেত্রে (ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন) একটু বেশি হয়ে যাচ্ছে, সেটা আমরা শুধরে নেব।

নির্বাচন নিয়ে মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী প্রশ্ন করেছেন উল্লেখ করে আব্দুল মোমেন বলেন, কেউ কেউ তাদের বলেছে আমাদের বিরোধী দল সভা করতে পারে না। করতে গেলে তাদের জেলে নিয়ে যায়। আমরা তো রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডের কারণে কাউকে জেলে নিই না। কেউ অপরাধমূলক কাজ করলে জেলে নিয়ে যাই। আগুন দিয়ে কিছু পোড়ালে। ওদের তো কোথাও আমরা আটকাই না। মিটিং করতে চাইলে, করো। টিভিতে বক্তব্য দিতে চাইলে, দাও। এগুলো তো আমরা কখনো আটকাই না। কেউ যদি কখনো রাস্তা বন্ধ করে দিতে চায়, তোমার দেশেও রাস্তা বন্ধ করলে অ্যালাউ করবে না। দে আর ফ্রি টু মিটিং।

আব্দুল মোমেন জানান, যুক্তরাষ্ট্র অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের কথা বলেছে। নির্বাচন অবাধ ও সুষ্ঠু করতে সরকার যে বিভিন্ন পদক্ষেপ নিয়েছে, তা জানানো হয়েছে। প্রাতিষ্ঠানিক উন্নয়নের কথা বলা হয়েছে। ভুয়া ভোট যাতে না হয়, সে জন্য ফটো আইডি করা হয়েছে। রাতের অন্ধকারে যাতে ভোট না হয়, সে জন্য স্বচ্ছ ব্যালট বাক্স তৈরি করা হয়েছে। একটি স্বাধীন ও শক্তিশালী কমিশন গঠন করা হয়েছে। এটা করা হয়েছে একটি প্রক্রিয়ার মাধ্যমে, প্রধানমন্ত্রী এই কমিশন গঠন করেননি।

অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন নিয়ে সরকারের ব্যাখ্যায় যুক্তরাষ্ট্র সন্তুষ্ট কি না, জানতে চাইলে আব্দুল মোমেন বলেন, তারা সন্তুষ্ট বলেই মনে হয়েছে। একমাত্র যেটা তারা চায় তা হলো, কাউকে যাতে হয়রানি করা না হয়। তোমরা তো মিরাকল। নির্বাচন এমন ভালো করবা যে গোটা দুনিয়ার কাছে বলতে পারি দেখো ম্যাজিক দেখাব। লুক এট বাংলাদেশ।

মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনসহ যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন স্তর থেকে বারবার অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের কথা বলা হচ্ছে। এ জন্য সরকার বিরক্ত কি না, কিংবা কোনো চাপ বোধ করছে কি না, জানতে চাইলে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, আমরা এখন খুব হ্যাপি। কোনো প্রেশার ফিল (চাপ অনুভব) করছি না। আমরা নিজেরাই একটা সুষ্ঠু নির্বাচন করতে চাই। আমরা নিজেরাই যখন সুষ্ঠু নির্বাচন চাই, তখন তাদের এই বলাটা একদিকে ভালো, আমাদের চাঙা রাখছে। আমরা চাই করতে, তারা বললে আরও ভালো।

শেয়ার করুন