রমজানকে সামনে রেখে সরকার চিনি আমদানিতে শুল্কছাড় দিয়েছিল। তাতেও রোজার মধ্যে বাজারে চিনির দাম কমেনি। সরকার নির্ধারিত দামের চেয়ে বাড়তি দামেই চিনি কিনতে হয়েছে ভোক্তাদের। সব মিলিয়ে গত ৭ মাসে পাঁচবার চিনির দাম বেঁধে দেওয়া হয়। সবশেষ চলতি মাসের প্রথম সপ্তাহে চিনির দাম বেঁধে দেয় সরকার। তাতেও বাজারে সুফল নেই। উল্টো ঈদের আগে চিনির দাম আরেক দফা বাড়তি। ভোক্তাদের এখন ১২০ থেকে ১২৫ টাকায় প্রতি কেজি চিনি কিনতে হচ্ছে।
গতকাল মঙ্গলবার পাইকারি ও খুচরা চিনি ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ঈদ সামনে রেখে বাজারে চিনির চাহিদা বেড়েছে। আর এই সময়ে একশ্রেণির ব্যবসায়ী চিনির দাম বাড়িয়ে দিচ্ছেন। এক সপ্তাহ আগে খোলা চিনির যে বস্তা (৫০ কেজি) ছিল ৫ হাজার ৪০০ টাকার আশপাশে, সেই একই চিনির বস্তার দাম পড়ছে ৫ হাজার ৮০০ থেকে ৫ হাজার ৮৫০ টাকা। সেই হিসাবে এক সপ্তাহের ব্যবধানে চিনির দাম বেড়েছে বস্তায় ৪০০ থেকে ৪৫০ টাকা। তাতে কেজিপ্রতি পাইকারিতেই চিনির দাম ৮ থেকে ৯ টাকা বাড়তি পড়ছে, যার প্রভাব পড়েছে খুচরা বাজারে।
সরকার চলতি মাসের প্রথম সপ্তাহে পরিশোধিত খোলা চিনির সর্বোচ্চ খুচরা মূল্য নির্ধারণ করে কেজিতে ১০৪ টাকা আর পরিশোধিত প্যাকেটজাত চিনির দাম বেঁধে দেয় কেজিতে ১০৯ টাকা। আগের দরের তুলনায় কেজিতে ৩ টাকা কমিয়ে নতুন দাম নির্ধারণ করেছিল সরকার। তবে এর সপ্তাহখানেক পরেই বাজারে চিনির দাম আরেক দফা বেড়েছে।
ব্যবসায়ীরা জানান, চিনির বাজারে বেশ কয়েক মাস ধরে ওঠানামার মধ্যে আছে। এখন ঈদের আগে পাইকারিতে দামটা আরেকটু বেড়েছে। তাতে খুচরা বিক্রেতারা বেশ বিপদের মধ্যে আছি। দাম বাড়তি থাকায় ক্রেতাদের বারবার জবাব দিতে হচ্ছে।
রাজধানীর মৌলভীবাজারের ব্যবসায়ীরা বলছেন, বাজারে চিনির বড় কোনো সংকট নেই। এরপরও দাম বেশ কিছুটা বেড়েছে। তবে বাড়তি দামের বিষয়টি নতুন নয়। সরকার কয়েক দফা চিনির দাম বেঁধে দিলেও সেই দামে কোনোভাবেই বাজারে চিনি পাওয়া যায়নি। এমনও অভিযোগ আছে, সরকার খুচরা যে দাম বেঁধে দিয়েছে, সেই দামে পরিশোধন কোম্পানির কারখানা ফটক থেকে পাইকারি বিক্রেতারাও চিনি কিনতে পারেন না।
তবে কারখানা থেকে চিনি সরবরাহ ঠিক আছে, এমনকি পরিশোধিত ও অপরিশোধিত চিনির কোনো সংকট নেই উল্লেখ করে মেঘনা গ্রুপ অব ইন্ডাস্ট্রিজের (এমজিআই) জ্যেষ্ঠ মহাব্যবস্থাপক এস এম মুজিবুর রহমান বলেন, আমাদের কারখানা চালু আছে। কোম্পানি থেকে নিয়মিত চিনি সরবরাহও করা হচ্ছে।
সরকারি সংস্থা ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) হিসাবেও দেখা যাচ্ছে সরকার নির্ধারিত দামে চিনি পাওয়া যাচ্ছে না। টিসিবির হিসাবে কেজি প্রতি চিনির দাম ১১২ থেকে ১১৫ টাকা। গত এক বছরের ব্যবধানে বাজারে চিনির দাম বেড়েছে ৪৪ শতাংশ। এক বছর আগে এই সময়ে চিনির কেজি ছিল ৭৮ থেকে ৮০ টাকা।
রোজার মাসে বাজারের অস্থিরতা কমাতে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সুপারিশে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) চিনি আমদানিতে নিয়ন্ত্রণ শুল্ক ৩০ শতাংশ থেকে কমিয়ে ২৫ শতাংশ করে। এই সুবিধা আগামী ৩০ মে পর্যন্ত থাকবে। তারপরও চিনির মূল্যবৃদ্ধিকে অযৌক্তিক মনে করছেন অনেকে।
দেশে চিনির বাজারে আছে মাত্র পাঁচটি প্রতিষ্ঠান। যেমন সিটি, মেঘনা, এস আলম, দেশবন্ধু ও আবদুল মোনেম লিমিটেড। এসব প্রতিষ্ঠান অপরিশোধিত চিনি আমদানি করে কারখানায় পরিশোধনের পর বাজারজাত করে। সরাসরি পরিশোধিত চিনি আমদানি করে খাদ্যপণ্য প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠানগুলো। বছরে ২০ লাখ টনের মতো চিনি আমদানি হয়। দেশে উৎপাদিত হয় ২৫ থেকে ৩০ হাজার টন। অর্থাৎ চিনির বাজার পুরোপুরি আমদানির ওপর নির্ভরশীল।