গত মাসে যুক্তরাজ্যে বৃদ্ধি পেয়েছে রুটি, চকলেট, সিরিয়ালসহ (গম, চাল, ভুট্টা, ওটস, বার্লি ইত্যাদি) বিভিন্ন খাদ্যপণ্যের দাম। অর্থাৎ, মার্চ মাসে দেশটিতে জীবনযাত্রার ব্যয় প্রত্যাশার চেয়ে বেশি বেড়েছে।
মার্চ মাসে যুক্তরাজ্যে সার্বিকভাবে মূল্যস্ফীতি সামান্য কমেছে বটে। তবে খাদ্যপণ্যের দাম বেড়েছে। মার্চে সার্বিক মূল্যস্ফীতি কমে ১০ দশমিক ১ শতাংশে নেমে এসেছে, যা আগের মাস ফেব্রুয়ারিতে ছিল ১০ দশমিক ৪ শতাংশ। আশা করা হয়েছিল, সার্বিক মূল্যসূচক ১০ শতাংশের নিচে আসবে। কিন্তু খাদ্যের দাম বাড়তে থাকায় তা হয়নি। বরং দেশটিতে খাদ্যপণ্যের দাম মার্চ মাসে গত ৪৫ বছরের মধ্যে দ্রুততম হারে বৃদ্ধি পেয়েছে। খবর বিবিসির।
মূল্যস্ফীতি হচ্ছে কোনো একটি পণ্যের দাম শতকরা হিসাবে কত বাড়ল বা কমল। যেমন একটি পণ্যের দাম এক বছর আগে এই সময়ে ছিল ১০০ টাকা, যা এখন বিক্রি হচ্ছে ১০৫ টাকায়। এই যে পাঁচ টাকা দাম বাড়ল, সেটাই হলো মূল্যস্ফীতি। আর মূল্যস্ফীতি পতনের অর্থ এই নয় যে দাম কমছে, তবে মূল্যবৃদ্ধির হার কমছে।
যুক্তরাজ্য সরকারের অফিস ফর ন্যাশনাল স্ট্যাটিস্টিকসের প্রধান অর্থনীতিবিদ গ্র্যান্ট ফিটজনার বলেছেন, বিশ্বব্যাপী খাদ্যের দাম কমছে, কিন্তু তা বাজারে এখনো তেমন দাম কমাতে পারেনি। বিবিসি রেডিও ফোর–এর টুডে প্রোগ্রামে তিনি বলেন, ‘খাদ্যের দাম বেশ জোরেশোরেই ঊর্ধ্বমুখী হয়েছে। আপনি হয়তো সুপারমার্কেটগুলোতে দাম কমার প্রভাব আশা করবেন। কিন্তু আমরা এখনো সেখানে নেই।’
‘খাদ্যের দাম যেমন আছে, তেমনই চলতে থাকলে আমরা কি দুই অঙ্কের মূল্যস্ফীতি অন্তত আরও এক মাস টিকে থাকতে দেখব কি না’, জানতে চাইলে গ্র্যান্ট ফিটজনার আরও বলেন, ‘এটি অবশ্যই সম্ভাবনার সীমার মধ্যে রয়েছে, তবে আমরা এটির পূর্বাভাস দিই না।’
এদিকে ব্রিটিশ অর্থমন্ত্রী জেরেমি হান্ট জানিয়েছেন, তিনি এখনো নিশ্চিত যে বছরের শেষ নাগাদ মূল্যস্ফীতি দ্রুত হ্রাস পাবে। তিনি বলেন, ‘আমাদের একটি পরিকল্পনা আছে। যদি আমরা পরিবারগুলোর ওপর থেকে সেই চাপ কমাতে চাই, তাহলে আমাদের সেই পরিকল্পনায় লেগে থাকা দরকার। আমরা প্রধানমন্ত্রীর প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী এই বছর মূল্যস্ফীতিকে অর্ধেকে নামিয়ে আনতে পারি।’
অন্যদিকে বিরোধী দল লেবার পার্টির ‘ছায়া অর্থমন্ত্রী’ র্যাচেল রিভস বলেছেন, ‘বাস্তবতা হলো ক্ষমতাসীন টোরি তথা রক্ষণশীল দলের অধীনে আমাদের অর্থনীতি এখন দুর্বল, পণ্যের দাম নিয়ন্ত্রণের বাইরে।’
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, জার্মানি, ফ্রান্স, ইতালিসহ অন্যান্য পশ্চিমা দেশগুলোর তুলনায় যুক্তরাজ্যে মূল্যস্ফীতি বেশি রয়েছে। এর মধ্যে মার্চে ইতালিতে ৮ দশমিক ২ শতাংশ, জার্মানিতে ৭ দশমিক ৮ শতাংশ, ফ্রান্সে ৬ দশমিক ৬ শতাংশ ও যুক্তরাষ্ট্রে ৫ দশমিক ৩ শতাংশ মূল্যস্ফীতি ছিল। যুক্তরাজ্যে পাইকারি গ্যাসের মূল্যবৃদ্ধি, নির্দিষ্ট কিছু খাবারের জন্য আমদানির ওপর নির্ভরতা এবং শ্রমিকের ঘাটতি ও মজুরি বৃদ্ধির কারণে মূল্যস্ফীতি বেশি রয়েছে।
মার্চ মাসে মূল্যস্ফীতি প্রত্যাশার চেয়ে বেশি হওয়ার একটি প্রধান কারণ হলো খাদ্যের মূল্য ক্রমাগত বৃদ্ধি পাওয়া। রাশিয়া–ইউক্রেনের মধ্যকার যুদ্ধ শস্য ও উদ্ভিজ্জ তেলের দাম বাড়িয়ে দিয়েছে। এতে খাদ্যের দাম বেড়েছে। ক্রমবর্ধমান পরিবহন ব্যয় ও পণ্য প্যাকেজিংয়ের খরচও আমদানিকে আরও ব্যয়বহুল করে তুলছে। এর মধ্যে মার্চ মাসে অলিভ অয়েল বা জলপাইয়ের তেলের দাম ৪৯ শতাংশ, দুধের দাম ৩৮ শতাংশ ও প্রস্তুত খাবারের দাম ২১ শতাংশ বেড়েছে। পণ্যগুলোর জন্য মার্চ মাসে সবচেয়ে বেশি বৃদ্ধি দেখা গেছে। অবশ্য পেট্রোলের দাম কমেছে। এটি গাড়িচালকদের জন্য কিছুটা স্বস্তি এনেছে।
দ্য মডার্ন মিল্কম্যান নামের একটি দুগ্ধ বিতরণ পরিষেবার প্রতিষ্ঠাতা ও প্রধান নির্বাহী সাইমন মেলিন বলেন, খাদ্যশিল্প সাম্প্রতিক মাসগুলোতে ক্রমবর্ধমান খরচের মুখোমুখি রয়েছে। দুধ–ডিমের দাম ও প্যাকেজিংয়ের খরচ—সবই বেড়েছে।
সাইমন মেলিন বিশ্বাস করেন যে খাদ্যের দাম স্থিতিশীল হতে শুরু করবে। তারপরও দাম গত বছরের তুলনায় অনেক বেশি ওপরে থাকবে। তিনি বিবিসিকে বলেন, ‘আমি সত্যিই নিশ্চিত নই যে খাবারের দাম সবার প্রত্যাশা অনুযায়ী কমবে কি না। আমি কিছু কমবে বলে আশা করি। তবে আমি ব্যক্তিগতভাবে পরবর্তী ১২ মাসে বিশাল হ্রাস আশা করব না।’