ধর্মীয় পরিচয়ের দ্বন্দ্বে আটকে থাকা ‘রতন দাশের’ লাশ অবশেষে দাফন

চট্টগ্রাম প্রতিনিধি

আত্মহত্যা

হিন্দু নাকি মুসলিম- ধর্মীয় পরিচয়ের এই দ্বন্দ্বে প্রায় তিন মাস হাসপাতালের হিমঘরে পড়েছিল আহমাদের লাশ। ‘ধমান্তরিত’ হওয়ার আগে যিনি ছিলেন ‘রতন দাশ’। গত ২৯ জানুয়ারি সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত হওয়ার পর বাধে বিপত্তি। ২৬ বছর বয়সী এই তরুণের লাশ চিতায় উঠবে নাকি দাফন হবে তা নিয়ে শুরু হয় দ্বন্দ্ব। যা গড়ায় আদালত পর্যন্ত। তবে শেষ পর্যন্ত আদালতের নির্দেশে ‘রতন দাশের’ লাশ মুসলিম রীতিতে দাফন করা হয়েছে।

গতকাল সোমবার চট্টগ্রামের পটিয়া সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালত ‘রতন দাশের’ লাশ তার ধর্মীয় শিক্ষক মাওলানা কারি মোহাম্মদ আকরাম হোসাইনের জিম্মায় দাফনের নির্দেশ দেন। উভয়পক্ষের আইনজীবীদের শুনানি শেষে পটিয়া সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের বিচারক বিশ্বেশ্বর সিংহ এ আদেশ দেন।

এরপর গতকাল রাতে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের হিমঘর থেকে তার লাশ বুঝে নিয়ে পটিয়া হাইওয়ে থানার এসআই রুহুল আমিনের নেতৃত্বে চৈতান্যগলি (২২ মহল্লা) কবরস্থানে দাফন করা হয়।

রতন দাশের মা সন্ধ্যারানীর দাবি, তার ছেলে হিন্দু ছিলেন, ধর্মান্তরিত হননি। তাই হিন্দু ধর্মের নিয়ম মেনেই শেষকৃত্য সম্পন্ন করতে চান তিনি। কিন্তু সহপাঠীদের দাবি, রতন ২০২০ সালের ১৭ নভেম্বর চট্টগ্রামের লালখান বাজার এলাকার একটি মাদ্রাসায় মাওলানা হারুন এজাহারের কাছে ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করেন।

এরপর থেকে তিনি পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ পড়তেন ও ইসলাম ধর্মের নিয়ম-কানুন মেনে চলতেন। তাই তারা মুসলিম হিসেবে তার লাশ দাফন করতে আগ্রহী। এ জন্য তারা সব ডকুমেন্ট সংগ্রহ করে হাইওয়ে থানার তদন্তকারী কর্মকর্তার কাছে জমাও দেন বলে জানান হাফেজ কারি আকরাম হোসাইন।

এ পরিপ্রেক্ষিতে লাশের ধর্মীয় পরিচয় নিশ্চিত করে গত ২০ এপ্রিলের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দিতে পুলিশকে নির্দেশ দিয়েছিলেন আদালত। কিন্তু ঈদুল ফিতর উপলক্ষে সরকারের নির্বাহী আদেশে ওইদিন ছুটি ঘোষণা করা হয়, যে কারণে আদালত বন্ধ ছিল। পরে গতকাল সোমবার এ বিষয়ে আদেশ দেন আদালত।

এ বিষয়ে সন্ধ্যারানী দাশ বলেন, এ রায়ের বিপক্ষে তিনি উচ্চ আদালতে যাবেন।

বন্ধুদের দাবি, একমাত্র সন্তান হওয়ায় ইসলাম ধর্ম গ্রহণের পরও মাকে নিয়ে নগরীর একটি ভাড়া বাসায় থাকতেন ‘রতন দাশ’। আগ্রাবাদ এলাকায় একটি মোবাইল এক্সেসরিজ প্রতিষ্ঠানে চাকরি করতেন।

এদিকে হলফনামা সূত্রে জানা গেছে, ওই তরুণের নাম রতন দাশ। তার বাড়ি মিরসরাই উপজেলার পূর্ব মায়ানী গ্রামে। তার বাবার নাম মনোরঞ্জন দাশ ও মায়ের নাম সন্ধ্যারানী দাশ। দুই বছর আগে ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করার জন্য জুডিশিয়াল স্ট্যাম্পে নাম পরিবর্তন করে আহমাদ নাম নেন। যার নোটারি নম্বর-১১০৫৪৪।

হাইওয়ে থানার ওসি স্নেহাংশু বিকাশ সরকার বলেন, চাঞ্চল্যকর এ মামলাটির তদন্ত শেষে গত ২৮ মার্চ আদালতে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেওয়া হয়। ধর্ম পরিচয় নিশ্চিত করতে তার গ্রামের বাড়ি ও শহরে যে এলাকায় অবস্থান করতেন, সেখানে গিয়ে সবার সঙ্গে কথা বলে নানা তথ্য সংগ্রহ করা হয়েছে। সেসবের ওপর ভিত্তি করে আদালত আদেশ দিয়েছেন।

এদিকে, সড়ক দুর্ঘটনার পর সন্ধ্যারানী দাশের দায়ের করা মামলায় প্রধান আসামি ট্রাকচালক শাহাদাত হোসেন সিকদার বাবুল বর্তমানে কারাগারে রয়েছেন।

শেয়ার করুন