দোকানের কর্মচারী রিয়ন প্রতি গজ ছিটকাপড়ের দাম চেয়েছিলেন ৮৫ টাকা। ক্রেতা ছামেনা বেগম দিতে চেয়েছিলেন ৮০ টাকা। দরদাম করায় ছামেনা বেগমকে অপমান করে দোকান থেকে বের করে দেন ওই কর্মচারী। আর বন্ধুর মায়ের এমন অপমানের প্রতিশোধ নিতে গিয়েই খুন হন সজল আহমেদ ও মামুন অর রশিদ নামের দুই তরুণ।
চুয়াডাঙ্গা সদর উপজেলার ভালাইপুর বাজারে গতকাল মঙ্গলবার দিবাগত রাতে এই জোড়া খুনের ঘটনা ঘটে। সরেজমিন অনুসন্ধান ও পুলিশের প্রাথমিক তদন্তে জোড়া খুনের পেছনে প্রধান কারণ হিসেবে এমন তথ্য পাওয়া গেছে।
জোড়া খুনের পর কারণ হিসেবে সর্বত্রই আলোচিত হচ্ছে ভালাইপুর বাজারের আশরাফুল বস্ত্রালয় অ্যান্ড গার্মেন্টসে গৃহবধূ ছামেনা খাতুনের ছিটকাপড় কিনতে যাওয়া ও দরদাম করায় অপমান করে বের করে দেওয়ার বিষয়টি। আজ সকালে ভালাইপুর গ্রামের বাড়িতে কথা হয় ছামেনা খাতুনের সঙ্গে। ছামেনা জানান, গতকাল বিকেলে দোকানটিতে তিনি ছিটকাপড় কিনতে যান। একটি ছিটকাপড় পছন্দ হলে দোকানের কর্মচারী রিয়ন প্রতি গজ ৮৫ টাকা করে দাম চান।
ছামেনা ৮০ টাকা করে দিতে চাইলে ওই কর্মচারী মারমুখী আচরণ করেন এবং তাকে (ছামেনা) অপমান করে দোকান থেকে বের করে দেন। সে সময় দোকানমালিক আশরাফুল দোকানে ছিলেন না। এরপর ছামেনা খাতুন বাড়িতে যান এবং ছেলে টিপু সুলতানকে বিষয়টি জানান। এ ঘটনা শুনে টিপু সুলতান সন্ধ্যায় ওই দোকানে যান এবং দোকানের মালিকের উপস্থিতিতে কর্মচারী রিয়ন ওই ঘটনায় মাফ চাইলে তা মীমাংসা হয়ে যায়।
ছামেনা খাতুনের অপমানের বিষয়টি জানতে পেরে টিপু সুলতানের বন্ধু সজল ও মামুন তাদের বাড়িতে ছুটে আসেন। এরপর তারা আরও কয়েকজনকে নিয়ে রাতেই সদর উপজেলার হুচুকপাড়া গ্রামে গিয়ে ওই দোকানের কর্মচারী রিয়নকে মোটরসাইকেলে করে তুলে নিয়ে আসেন। ভালাইপুর বাজারে পৌঁছালে হুচুকপাড়ার আলাউদ্দিনের ছেলে আকাশ, মুছা করিমের ছেলে শান্তি মিয়া, ওসমান গনির ছেলে সানোয়ার হোসেন, জাহাঙ্গীরসহ একদল লোক তাদের গতিরোধ করেন। এ সময় কথা–কাটাকাটির একপর্যায়ে তারা ধারালো অস্ত্র নিয়ে সজল ও মামুনের ওপর হামলা চালান। ধারালো অস্ত্রের এলোপাতাড়ি কোপে সজলের পেট ও মামুনের বুক ক্ষতবিক্ষত হয়ে যায়।
স্থানীয় লোকজন ও চুয়াডাঙ্গা ফায়ার সার্ভিসের কর্মীদের সহযোগিতায় আহত ব্যক্তিদেরকে মুমূর্ষু অবস্থায় উদ্ধার করে চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালে নেওয়া হয়। জরুরি বিভাগে কর্মরত চিকিৎসক হাসানুর রহমান পরীক্ষা-নিরীক্ষা শেষে সজল আহমেদকে তাৎক্ষণিক মৃত ঘোষণা করেন। পরে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মামুন অর রশিদ মারা যান।