ভূমধ্যসাগরের লিবীয় উপকূলে অভিবাসীদের বহনকারী দু’টি নৌকা ডুবে গেছে। এতে কমপক্ষে ৫৭ জনের মৃত্যু হয়েছে। নৌকাডুবির পর লিবিয়ার পশ্চিমাঞ্চলীয় বিভিন্ন শহরের উপকূলে এসব মৃতদেহ ভেসে আসে।
পরে এসব মৃতদেহ উদ্ধার করা হয়। মৃতদের মধ্যে শিশুও রয়েছে। একাধিক সূত্রের বরাত দিয়ে বুধবার (২৬ এপ্রিল) পৃথক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে বার্তাসংস্থা রয়টার্স এবং সংবাদমাধ্যম আল জাজিরা।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ভূমধ্যসাগরে অভিবাসীবাহী দু’টি নৌকা ডুবে যাওয়ার পর পশ্চিম লিবিয়ার বিভিন্ন শহরের কাছে অন্তত ৫৭টি মৃতদেহ উপকূলে ভেসে এসেছে বলে একজন উপকূলরক্ষী কর্মকর্তা এবং একজন সাহায্যকর্মী জানিয়েছেন।
ডুবে যাওয়া নৌকায় থাকা একজন জীবিত ব্যক্তি জানিয়েছেন, মঙ্গলবার স্থানীয় সময় রাত ২ টায় ইউরোপের উদ্দেশ্যে রওনা হওয়া একটি নৌকায় প্রায় ৮০ জন আরোহী ছিলেন।
বাসসাম মাহমুদ নামে ওই ব্যক্তি আরও বলেছেন, নৌকা ডুবে যেতে থাকলে, তর্ক-বিতর্ক শুরু হয়। তা সত্ত্বেও নৌকা পরিচালনার দায়িত্বে থাকা ব্যক্তিটি নৌকা থামাতে রাজি হননি।
উপকূলরক্ষী কর্মকর্তা ফাথি আল-জায়ানি জানিয়েছেন, পূর্ব ত্রিপোলির কারাবুল্লি থেকে এক শিশুসহ ১১টি মৃতদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। তিনি বলেন, মৃত এসব শরণার্থীরা পাকিস্তান, সিরিয়া, তিউনিসিয়া ও মিসরের নাগরিক।
পশ্চিম ত্রিপোলির সাবরাথায় অবস্থানরত রেড ক্রিসেন্টের এক ত্রাণকর্মী জানান, তারা গত ৬ দিনে সমুদ্র উপকূল থেকে ৪৬টি মরদেহ উদ্ধার করেছেন। মৃতদের সবাই একই নৌকার যাত্রী ও ‘অবৈধ অভিবাসনপ্রত্যাশী’।
আগামী দিনগুলোতে আরও মরদেহ ভেসে আসতে পারে বলে আশঙ্কাও প্রকাশ করেন এই ত্রাণকর্মী।
আন্তর্জাতিক অভিবাসন সংস্থা এ মাসে জানিয়েছে, ২০২৩ সালে ভূমধ্যসাগরের মধ্য দিয়ে উত্তর আফ্রিকা থেকে ইউরোপে যাওয়ার পথে এ পর্যন্ত ৪৪১ জন অভিবাসন প্রত্যাশী ও শরণার্থী পানিতে ডুবে মারা গেছেন। গত ছয় বছরের হিসাবে ৩ মাসের মধ্যে মৃত্যুর সংখ্যা এটাই সর্বোচ্চ।
উল্লেখ্য, ২০১১ সালে মার্কিন নেতৃত্বাধীন সাকরিক জোট ন্যাটোর সমর্থনপুষ্ট এক গণঅভ্যূত্থানে লিবিয়ার দীর্ঘদিনের শাসক মুয়াম্মার গাদ্দাফি উৎখাত হন। এর প্রায় এক দশক পর প্রধানত আফ্রিকার অভিবাসনপ্রত্যাশীদের জন্য সমুদ্র পেরিয়ে ইউরোপ যাত্রার অন্যতম প্রধান কেন্দ্রে পরিণত হয় লিবিয়া।
তবে সাম্প্রতিক সময়ে অবৈধভাবে বিদেশ যাত্রার কেন্দ্র হিসেবে জনপ্রিয়তার দিক দিয়ে লিবিয়াকে পেছনে ফেলেছে তিউনিসিয়া। গত কয়েকদিনে ভূমধ্যসাগরের মধ্যাঞ্চল থেকে ৪৭টি নৌকায় থাকা ১৬০০ আরোহীকে উদ্ধার করেছে ইতালি। পরে তাদের লামপেদুসা দ্বীপের উপকূলে নিয়ে যাওয়া হয়।
এই পরিস্থিতিতে গত সোমবার তিউনিসিয়াকে অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক সংস্কারের জন্য অর্থ দেওয়ার প্রস্তাব দিয়েছে ইতালি। ইউরোপীয় ইউনিয়নের পররাষ্ট্রমন্ত্রীরা আফ্রিকার এই দেশটিতে ক্রমবর্ধমান অস্থিতিশীলতা অবসানে কী করা যায়, সে বিষয়ে আলোচনা করার পর ইতালি এই প্রস্তাব দিলো।