দেশের পাঁচ জেলায় বজ্রপাতে ৭ জন মারা গেছেন। জেলাগুলো হলো- সিরাজগঞ্জ, বগুড়া, পাবনা, শেরপুর ও যশোর। শনিবার বিকালে ও সন্ধ্যায় এসব বজ্রপাতের ঘটনা ঘটে।
মৃতরা হলেন- সিরাজগঞ্জের সদর উপজেলার আব্দুল মালেক ও সোলেমান শেখ, বগুড়ার নন্দীগ্রামের লোকমান আলী, পাবনার আটঘরিয়া উপজেলার এনামুল হক এবং মনিরুজ্জামান জলম, শেরপুরের সাজু মিয়া ও যশোরের বছির উদ্দীন ।
মত ও পথ প্রতিনিধিদের পাঠানো খবর-
সিরাজগঞ্জ
সিরাজগঞ্জ সদর উপজেলার বহুলী ইউনিয়নের বাগডুমুর গ্রামে বজ্রপাতে দুই কৃষকের মৃত্যু হয়েছে। বিকাল ৫টার দিকে মাঠে ধান কেটে বাড়ি ফেরার পথে বজ্রপাতে তাদের মৃত্যু হয়।
মৃতরা হলেন- সদর উপজেলার বহুলী ইউনিয়নের বাগডুমুর গ্রামের নছিম খানের ছেলে আব্দুল মালেক ও একই গ্রামের আব্দুল মজিদ শেখের ছেলে মো. সোলেমান শেখ। তারা দুজনেই পেশায় কৃষক ছিলেন।
বিষয়টি নিশ্চিত করে সদর থানার পরিদর্শক (অপারেশন) সুমন কুমার দাস বলেন, মাঠে ধান কাটছিলেন এই দুই কৃষক। এ সময় ঝড়-বৃষ্টি শুরু হলে বাড়িতে ফিরছিলেন তারা। পথে বজ্রপাতের কবলে পড়ে গুরুতর আহত হন দুজন।
পরে স্থানীয়রা তাদের সিরাজগঞ্জ বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিৎসক তাদের মৃত ঘোষণা করেন। মরদেহ দুটি বর্তমানে হাসপাতালেই আছে।
বগুড়া
বগুড়ার নন্দীগ্রামে বজ্রপাতে লোকমান আলী (৬৫) নামে এক কৃষকের মৃত্যু হয়েছে। বিকালে উপজেলার বুরইল ইউনিয়নের সিংজানি গ্রামে এ ঘটনা ঘটে।
নিহত লোকমান ওই গ্রামের মৃত জিলহজ্বের ছেলে।
নন্দীগ্রামে বিকাল থেকেই আকাশে মেঘ গর্জন করছিল। এর মধ্যে নিহত লোকমান আলী বাড়ির পাশেই মাঠে ঘাস কাটতে যান। এর এক পর্যায়ে তার উপর বজ্রপাত হলে ঘটনাস্থলেই তার মৃত্যু হয়। পরে বিষয়টি এলাকার ও পরিবারের লোকজন জানতে পেরে তার লাশটি বাড়িতে নিয়ে যায়।
বিষয়টি নিশ্চিত করে নন্দীগ্রাম থানার ওসি আনোয়ার হোসেন বলেন, তিনি বিষয়টি জেনেছেন। সবাই বজ্রপাতেই মৃত্যু বলে মনে করছেন। ইতোমধ্যে লাশ দাফনও করা হয়েছে। তবে বিষয়টি খতিয়ে দেখতে থানা থেকে ঘটনাস্থলে লোক পাঠানো হয়েছে।
পাবনা
পাবনায় বজ্রপাতে দুজনের মৃত্যু হয়েছে। এর মধ্যে জেলার আটঘরিয়ায় এক এইচএসসি শিক্ষার্থী এবং আমিনপুরে এক কৃষকের মৃত্যু হয়।
বিকালে আলাদা বজ্রপাতের ঘটনায় তাদের মৃত্যু হয়।
মৃতরা হলেন- আটঘরিয়া উপজেলার একদন্ত ইউনিয়নের বাড়ইপাড়া গ্রামের আব্দুল মজিদের ছেলে ও পাবনার সরকারি শহীদ বুলবুল কলেজের এইচএসসি ২য় বর্ষের ছাত্র এনামুল হক (১৮) এবং আমিনপুর থানার চরগোবিন্দপুর গ্রামের কালা প্রামানিকের ছেলে কৃষক মনিরুজ্জামান জলম (৪০)।
আটঘরিয়ার একদন্ত ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান লিয়াকত হোসেন আলাল বলেন, এনামুল হক বিকাল চারটার দিকে মাঠে ঘাস কেটে বাড়ি ফেরার পথে বজ্রপাতে তার মৃত্যু হয়।
অপরদিকে, আমিনপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আমিনুল ইসলাম আমিন বলেন, কৃষক মনিরুজ্জামান বিকালে বাড়ির পাশে মাঠের কাজ করা অবস্থায় বৃষ্টিপাত শুরু হয়। পরে বৃষ্টির মধ্যেই তিনি বাড়ি ফেরার পথে বজ্রপাত হলে মৃত্যু হয়।
শেরপুর
শেরপুরের শ্রীবরদীতে বজ্রপাতে সাজু মিয়া (৩২) নামে এক কৃষকের মৃত্যু হয়েছে। শনিবার সন্ধ্যায় উপজেলার কাকিলাকুড়া ইউনিয়নের চিথলিয়া গ্রামে ধান ক্ষেত থেকে ধানের আটি নিয়ে আসার পথে বজ্রপাতের ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় আহত হয়েছে তার মেয়ে মীম (৮)। সাজু মিয়া ওই গ্রামের মৃত আব্দুল কুদ্দুস মিয়ার ছেলে।
সাজু মিয়া মেয়ে মীমকে সাথে নিয়ে ধান ক্ষেতে যান। এ সময় ধান ক্ষেত থেকে ধানের আটি নিয়ে বাড়ি ফেরার পথে বৃষ্টিসহ প্রচণ্ড বজ্রপাতের ঘটনা ঘটে। এতে ঘটনাস্থলেই মারা যায় সাজু মিয়া। আহত হয় তার মেয়ে মীম। পরে আশপাশের লোকজন তাদের ঘটনাস্থল থেকে উদ্ধার করে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যায়। এ সময় চিকিৎসক সাজু মিয়াকে মৃত ঘোষণা করেন। আহত মীমকে চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে।
এ ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করেছেন শ্রীবরদী থানার ওসি বিপ্লব কুমার বিশ্বাস।
যশোর
যশোরের চৌগাছায় বজ্রপাতে বছির উদ্দীন (৫০) নামে এক কৃষক নিহত হয়েছেন। শনিবার সন্ধ্যা সাড়ে ৬টার দিকে এ দুর্ঘটনা ঘটে।
নিহত বছির উদ্দীন উপজেলার পাতিবিলা ইউনিয়নের তেঘড়ী গ্রামের মৃত মোহাম্মদ আলীর ছেলে ও পেশায় একজন কৃষক।
স্থানীয় ইউপি সদস্য নজরুল ইসলাম বলেন, সন্ধ্যার দিকে বৃষ্টি হওয়ায় ধানক্ষেতে পানি জমে থাকার কারণে কোদাল দিয়ে ড্রেন কেটে জমির পানি নিষ্কাশন করছিলেন বছির উদ্দীন। কাজ শেষে বাড়ি ফেরার পথে তেঘড়ি পশ্চিমপাড়া জামে মসজিদের সামনে পৌঁছালে বজ্রাঘাতের শিকার হন তিনি। এরপর এলাকার লোকজন টের পেয়ে বাড়ি খবর দিলে লোকজন তাকে উদ্ধার করে চৌগাছা হাসপাতালে নিয়ে যায়।
চৌগাছা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের চিকিৎসক ডা. লুৎফুন্নেছা লতা জানান, হাসপাতালে আনার পূর্বেই রোগী মারা গেছেন।
চৌগাছা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সাইফুল ইসলাম সবুজ ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন, এ ঘটনায় থানায় একটি অপমৃত্যুর মামলা হয়েছে।