আসন্ন সিলেট সিটি করপোরেশনের নির্বাচন নিয়ে বিএনপি নাখোশ হলেও ভিতরে ভিতরে নিজেদের পছন্দের প্রার্থীকে মাঠে রাখতে তারা মরিয়া বলে মন্তব্য করেছেন আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য জাহাঙ্গীর কবির নানক। তিনি বলেন, ‘সিলেট সিটি করপোরেশেনের নির্বাচন ২১ জুন। নির্বাচন কমিশন যেকোনো মূল্যে নির্বাচনকে সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষভাবে অনুষ্ঠানের জন্য প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। কিন্তু জনসমর্থন হারানো বিএনপি এই নির্বাচনে নাখোশ। বিএনপি মুখ দিয়ে সেটি বললেও ভিতরে ভিতরে নিজেদের পছন্দের প্রার্থীকে মাঠে রাখতে মরিয়া।’
বৃহস্পতিবার (৪ মে) সন্ধ্যায় সিলেট নগরীর একটি অভিজাত হল রুমে সিলেট জেলা ও মহানগর আওয়ামী লীগ আয়োজিত কর্মী সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব বলেন।
নানক বলেন, ‘আমরা বিএনপির নির্বাচনে অংশগ্রহণকে স্বাগত জানাতে চাই। কিন্তু তাদের দ্বৈতনীতিকে ধিক জানাই। আওয়ামী লীগ নির্বাচনমুখী দল। সুতরাং বৃহৎ এই দলে একাধিক যোগ্য প্রার্থীই নির্বাচনে অংশগ্রহণ করতে চাইবে। কিন্তু দিন শেষে দলের মনোনীত প্রার্থীর পক্ষেই সকলে কাজ করে যাবে একযোগে। এটাই আওয়ামী লীগ।’
দলীয় নেতাকর্মীদের উদ্দেশে নানক বলেন, ‘সিলেটের প্রতি মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর একটি বিশেষ দুর্বলতা রয়েছে। যে কারণে সিলেটের মাটি ও মানুষের কল্যাণে তিনি বরাবরই আন্তরিকতায় পরিচয় দিয়ে গেছেন। দলীয় মানুষ না থাকার পরও তিনি উজার করে দিয়েছেন সবকিছু। কিন্তু দুর্ভাগ্য অপরিকল্পিত উন্নয়নের খেসারত স্বরূপ নগরবাসীকে এখনও দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে।’ তিনি শ্রীভূমি সিলেট রক্ষায় এবার দলীয় নেতাকর্মীদের নির্বাচন যুদ্ধে মাঠে নামার আহ্বান জানান।
হুঁশিয়ারী উচ্চারণ করে নানক বলেন, ‘দলে খন্দকার মোশতাকের অনুসারী যেমন রয়েছে, তেমনি মুজিবাদর্শের লড়াকু এবং ত্যাগী কর্মীরাও রয়েছেন। মোস্তাক বাহিনীর কারণেই বিগত দিনে এই নগরের অভিভাবক বদর উদ্দিন আহমদ কামরানকে হারতে হয়েছে। তিনি বলেন, ‘এবার সেই সুযোগের পুনরাবৃত্তি দেখতে চায় না আওয়ামী লীগ। দলের প্রতিটি ওয়ার্ডে সভাপতি এবং সম্পাদকের ভোটকেন্দ্রগুলোতে সজাগ দৃষ্টি থাকবে আওয়ামী লীগের। যাদের ভোটকেন্দ্রের ফলাফল অনুযায়ী পুরস্কার এবং তিরস্কার ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। এমন কোন কর্মকান্ড করবেন না যাতে করে রংপুরের পরিনতি ভোগ করতে হয়।’
নানক আরও বলেন, ‘মাথার চারপাশে শকূনের দল উড়াউড়ি করছে। অতএব মুজিব সৈনিকদের এখন যুদ্ধের সময়। যুদ্ধের দামামাও বেজে উঠেছে। সেই সুর যার কানে পৌঁছে না, তিনি ব্যর্থ। তিনি মুজিবাদর্শের অযোগ্য, আওয়ামী লীগের অযোগ্য। ভুলে গেলে চলবে না, সংগ্রামে, সংকটে, দুর্যোগে বাংলাদেশে আওয়ামী লীগই পাশে দাঁড়িয়েছে গণমানুষের। তাই গণমানুষের দল হিসেবে আওয়ামী লীগরাই সর্বাগ্রে এগিয়ে আসে জনকল্যাণে। জাহাঙ্গীর কবির নানক বলেন, আওয়ামী লীগ বীজ বপন করে। সেই বীজ থেকেই ফল হয়, ফুল হয়। সেই ফুলে ফলে শোভিত আজকের বাংলাদেশ। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনার আজকের সমৃদ্ধির বাংলাদেশ বিশ্বসভায় অনুসরণযোগ্য।‘
সিলেট মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা মাসুক উদ্দিন আহমেদের সভাপতিত্বে ও জেলা আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ আলী দুলাল ও মহানগর আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক এটিএম হাসান জেবুলের পরিচালনায় বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য সৈয়দা জেবুন্নেছা হক, প্রধান বক্তা হিসেবে বক্তব্য কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক আহমদ হোসেন।
এছাড়াও সভায় বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত বক্তব্য রাখেন কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক শফিউল আলম চৌধূরী নাদেল, কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্য ডা. মুশফিক হোসেন চৌধুরী, আজিজুস সামাদ ডন, জেলা আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি শফিকুর রহমান চৌধুরী।
সভায় আরও বক্তব্য দেন যুব মহিলা লীগের সভাপতি ডেইজি সারওয়ার, ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক এসএম জাকির হোসেনসহ সিলেট জেলা ও মহানগর আওয়ামী লীগ, অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের নেতারা।