রবীন্দ্রনাথ আমাদের শাশ্বত অনুপ্রেরণা

সম্পাদকীয়

রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর

রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর পৃথিবীর অন্যতম শ্রেষ্ঠ ভাবয়িত্রী এবং কারয়িত্রী প্রতিভার নাম। বাঙালির আত্মিক মুক্তি ও সার্বিক স্বনির্ভরতার প্রতীক, বাংলাভাষা ও সাহিত্যের উৎকর্ষের নায়ক। ১২৬৮ বঙ্গাব্দের ২৫ বৈশাখ জোড়াসাঁকোর ঠাকুর পরিবারে মহর্ষি দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুরের ঘর আলো করে জন্মগ্রহণ করেছিলেন তিনি। আজ কবিগুরুর ১৬২তম জন্মবার্ষিকী। রবীন্দ্রনাথ বহুমাত্রিক সাহিত্যপ্রতিভার উজ্জ্বল উদাহরণ। কবিতা, উপন্যাস, ছোটগল্প, নাটক, প্রবন্ধ, ছড়া, ব্যক্তিগত রচনা, ভ্রমণসাহিত্য, চিঠিপত্র, সংগীত সবকিছুতেই রেখেছেন নিজের অনন্য প্রতিভার ছাপ। বাংলা কবিতাকে প্রাদেশিকতার সীমানা ছাড়িয়ে তিনি করে তুলেছেন আন্তর্জাতিক, বাংলা ছোটগল্পের নির্মাতা তিনি, বাংলা উপন্যাসে তিনিই প্রথম দিয়েছেন আধুনিকতার স্পর্শ। নাটকের ক্ষেত্রে তাঁর অবদান ঐতিহাসিক। আধুনিক বর্ণনামূলক নাটকের প্রথম পথপ্রদর্শক তিনি। সংগীত, চিত্রকলা, ভ্রমণসাহিত্য, চিঠিপত্র, ভাষাতত্ত্ববিষয়ক প্রবন্ধ, ব্যক্তিগত রচনা—সর্বত্রই রবীন্দ্রনাথের ভুবনবিজয়ী হাতের স্পর্শ এখনো সাহিত্য অনুরাগী প্রতিটি মানুষকে বিস্ময়াভিভূত করে রাখে।

রবীন্দ্রনাথ আমাদের সংস্কৃতির শ্রেষ্ঠ নির্মাতা। তিনি আমাদের জাতীয়তাবাদী চেতনার অন্যতম পথিকৃৎ। বায়ান্নর রাষ্ট্রভাষা আন্দোলন, কি একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধ—সবসময় রবীন্দ্রনাথ এক শাণিত হাতিয়ার। তিনি আমাদের স্বাধীনতাযুদ্ধে জুগিয়েছেন অফুরন্ত শক্তি। ষাটের দশকে পাকিস্তানি ঔপনিবেশিক শক্তির বিরুদ্ধে সংগ্রামে রবীন্দ্রনাথ ছিলেন আমাদের উল্লেখযোগ্য শক্তি-উৎস। মুক্তিযুদ্ধের সময় রবীন্দ্র সঙ্গীত আমাদের প্রেরণা জুগিয়েছে, মুক্তিযোদ্ধাদের চিত্তে সঞ্চার করেছে অফুরান সাহস। আমাদের প্রাত্যহিক জীবনের প্রতিটি মুহূর্তে মিশে আছেন রবীন্দ্রনাথ। তাঁকে বাদ দিয়ে চলে না আমাদের প্রাত্যহিক জীবনের একটি দিনও, চলে না আমাদের কোনো আচার-অনুষ্ঠান-উৎসব।

universel cardiac hospital

রবীন্দ্রনাথ ছিলেন শান্তির পক্ষে অতুলনীয় এক শক্তি। শান্তির অন্বেষায় রবীন্দ্রনাথ আমাদের দেখাতে পারেন যথার্থ পথ। বর্তমান সময়ে মানুষে মানুষে যে চরম বিচ্ছিন্নতা দেখা দিয়েছে, মানব সম্পর্কগুলো যে ভেঙে চুরমার য়ে যাচ্ছে, রবীন্দ্রনাথ সে ক্ষেত্রে আমাদের কাছে হয়ে উঠতে পারেন উত্তরণের এক মহাশক্তি। মানুষকে তিনি ডাক দিয়েছেন বৃহত্তর ঐক্যের পতাকাতলে। আজকে বিচ্ছিন্নতাপীড়িত এই সময়খণ্ডে সেই ঐক্যের ডাকই এখন আমাদের জন্য বেশি জরুরি। মানবাত্মার মুক্তিসাধনায় তিনি আমাদের কাছে শাশ্বত অনুপ্রেরণা। তাঁর জীবনাদর্শ ও সৃষ্টিকর্ম শোষণ-বঞ্চনামুক্ত, অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ বিনির্মাণে চিরদিন বাঙালিকে অনুপ্রাণিত করবে। ১৬২তম জন্মবার্ষিকীতে তাঁর অমর স্মৃতির প্রতি আমাদের বিনম্র শ্রদ্ধা।

শেয়ার করুন