শেয়ারহোল্ডারদের নগদ লভ্যাংশ না দিয়ে শুধুমাত্র বোনাস শেয়ার লভ্যাংশ মুনাফা দিয়ে জরিমানা গুণতে হচ্ছে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত ব্যাংক খাতের চার ব্যাংককে। ব্যাংকগুলো হচ্ছে- এবি ব্যাংক লিমিটেড, মিউচ্যুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংক লিমিটেড, ওয়ান ব্যাংক এবং ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংক লিমিটেড।
আইনে বলা হয়েছে, পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত কোম্পানিগুলোকে কমপক্ষে বোনাস লভ্যাংশের সমপরিমাণ নগদ লভ্যাংশ দিতে হবে। যদি বোনাসের পরিমাণ নগদের চেয়ে বেশি হয়, তাহলে পুরো বোনাস শেয়ারের উপর ১০ শতাংশ হারে কর আরোপ করা হবে। এ হিসাবে ব্যাংকগুলোকে অতিরিক্ত আয়করের শাস্তির কবলে পড়তে হবে। ২০১৮-১৯ অর্থবছরে এই আইনটি বাজেটে প্রণয়ন করা হয়।
আইন অনুসারে, এবি ব্যাংকে ১ কোটি ৭২ লাখ টাকা, মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংকের ৮ কোটি ৯৪ লাখ টাকা, ওয়ান ব্যাংকের প্রায় ৫ কোটি এবং ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংকের ১০ কোটি ৪৬ লাখ টাকা জরিমানা গুণতে হবে।
কোম্পানি কর্তৃপক্ষ বলছেন, ব্যাংকগুলোর পরিশোধিত মূলধন বৃদ্ধির জন্য এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। মুনাফার টাকা ব্যাংকের মূলধনকে আরও শক্তিশালী করবে।
এবি ব্যাংক
জানুয়ারি থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত সমাপ্ত ২০২২ সালে এবি ব্যাংকের মুনাফা হয়েছে ৭১ কোটি ৫৪ লাখ ৫৮ হাজার ৪৭৯ টাকা। সেখান থেকে শেয়ারহোল্ডারদের জন্য ২ শতাংশ বোনাস শেয়ার লভ্যাংশ দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
ব্যাংকটির পর্ষদ নগদ লভ্যাংশ না দিয়ে শুধুমাত্র বোনাস শেয়ার দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এ কারণে ১৭ কোটি ২২ লাখ টাকার বোনাস শেয়ারের উপর ১০ শতাংশ হারে ১ কোটি ৭২ লাখ টাকা জরিমানা গুণতে হবে।
পাশাপাশি নিয়ম অনুসারে মুনাফার ৩০ শতাংশের কম লভ্যাংশ ঘোষণা দিয়েছে ব্যাংকটি। কম লভ্যাংশ ঘোষণা করায় ৫৪ কোটি ২৪ লাখ টাকার উপর ১০ শতাংশ হারে আরও ৫ কোটি ৪২ লাখ টাকা জরিমানা দিতে হবে। সবমিলিয়ে দুই কারণে ব্যাংকটিকে শাস্তিস্বরুপ ৭ কোটি ১৪ লাখ টাকা জরিমানা গুণতে হবে।
মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংক
বিদায়ী বছরের ব্যাংকটির শেয়ার প্রতি আয় বা ইপিএস হয়েছে ২ টাকা ৬৫ পয়সা করে। তাতে কর-পরবর্তী মুনাফার পরিমাণ দাঁড়ায় ২৩৬ কোটি ৮৪ লাখ টাকা। সেখান থেকে ব্যাংকটি শেয়ারহোল্ডারদের জন্য শুধুমাত্র ১০ শতাংশ বোনাস শেয়ার লভ্যাংশ দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
১০ শতাংশ হারে ব্যাংকটির মুনাফার টাকার পরিমাণ দাঁড়ায় ৮৯ কোটি ৩৭ লাখ টাকা। এই টাকা পরিশোধিত মূলধন বাড়াতে ব্যবহার হবে। এছাড়াও মুনাফার ১৪৭ কোটি ৪৭ লাখ টাকা নিয়ম অনুসারে রিজার্ভ ফান্ডে রাখা হবে।
এবি ব্যাংকের মতো এই ব্যাংকটি নগদ শেয়ার না দিয়ে শুধু বোনাস শেয়ার লভ্যাংশ দিয়ে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের আইন লঙ্ঘন করেছে। আয়করের আওতায় শাস্তি হিসেবে ৮৯ কোটি ৩৭ লাখ টাকার উপরে ১০ শতাংশ হারে ৮ কোটি ৯৪ লাখ টাকা জরিমানা গুণতে হবে।
ওয়ান ব্যাংক
শেয়ার প্রতি ৭৩ পয়সা করে বেড়ে ২০২২ সালে ওয়ান ব্যাংকের মোট মুনাফা হয়েছে ১৫৫ কোটি ৯৩ লাখ ৮০ হাজার ৫৪১ টাকা। এই মুনাফা থেকে শেয়ারহোল্ডারদের জন্য ৫ শতাংশ বোনাস শেয়ার লভ্যাংশ দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে ব্যাংকটি। অর্থাৎ ৪৯ কোটি ৩ লাখ ৭১ হাজার ২৩৯ টাকার শেয়ার লভ্যাংশ দেবে। মুনাফার টাকায় ব্যাংকটির মূলধন বাড়াবে।
নগদ শেয়ার লভ্যাংশ না দিয়ে শুধুমাত্র বোনাস শেয়ার লভ্যাংশ দেওয়ায় বোনাস শেয়ারের ৪৯ কোটি ৩ লাখ ৭১ হাজার ২৩৯ টাকার মুনাফার উপর ১০ শতাংশ হারে অর্থাৎ প্রায় ৫ কোটি টাকা জরিমানা পরিশোধ করতে হবে কোম্পানিকে।
ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংক
অপরদিকে ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংকের ২০২২ সালে মোট মুনাফা হয়েছে ২৯৩ কোটি ৯৩ লাখ টাকা। সেখান থেকে শেয়ারহোল্ডারদের নগদ লভ্যাংশ না দিয়ে কেবল ১০ শতাংশ বোনাস শেয়ার লভ্যাংশ দিয়েছে। তাতে কোম্পানির বোনাস শেয়ারের টাকার পরিমাণ দাঁড়ায় ১০৪ কোটি ৬০ লাখ টাকা। এই টাকার উপরে ১০ শতাংশ হারে জরিমানা করা হয়েছে। তাতে জরিমানার অর্থ আছে ১০ কোটি ৪৬ লাখ টাকা। এই জরিমানা দিতে হবে ব্যাংক কর্তৃপক্ষকে। এছাড়া ব্যাংকটির ১৮৯ কোটি ৩৩ লাখ টাকা রিজার্ভ ফান্ডসহ রিটেইন আর্নিংস রাখা হবে।
আয়কর অধ্যাদেশ নতুন ধারা ১৬ এফ সংযোজন
অর্থ আইন, ২০১৯ এর মাধ্যমে আয়কর অধ্যাদেশে নতুন ধারা ১৬ সংযোজন করা হয়েছে। এ ধারা অনুযায়ী, পুঁজিবাজারে নিবন্ধিত কোম্পানিকে স্টক ডিভিডেন্ডের কমপক্ষে সমপরিমাণ ক্যাশ ডিভিডেন্ড প্রদান করতে হবে। যদি স্টক ডিভিডেন্ড প্রদানের পরিমাণ ক্যাশ ডিভিডেন্ডের চেয়ে বেশি হয় তাহলে যে পরিমাণ স্টক ডিভিডেন্ড প্রদান করা হবে বা হয়েছে তার পুরোটার উপরে ১০ শতাংশ হারে কর আরোপ করা হবে। কোম্পানিকে সংশ্লিষ্ট কর বছরের আয়কর রিটার্ন দাখিলের পূর্বে পরিশোধ করতে হবে। এ কর কোম্পানি অন্য কোনো কর দায়িতার সঙ্গে সমন্বয় করা যাবে না।
সুতরাং পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত কোম্পানিগুলোকে কমপক্ষে বোনাস লভ্যাংশের সমপরিমাণ নগদ লভ্যাংশ দিতে হবে। যদি বোনাসের পরিমাণ নগদের চেয়ে বেশি হয়, তাহলে পুরো বোনাস শেয়ারের উপর ১০ শতাংশ হারে কর আরোপ করা হবে।