কার্বন নিঃসরণ শূন্যে নামিয়ে আনতে জলবায়ু ঝুঁকিপূর্ণ উন্নয়নশীল দেশগুলোকে বছরে ১০০ বিলিয়ন ডলার সহায়তার প্রতিশ্রুতি থাকলেও দেওয়া হয়েছে খুব সামান্যই। ফলে এসব দেশের জলবায়ু সংকট মোকাবিলা প্রতিনিয়ত ব্যাহত হচ্ছে। ক্ষতিগ্রস্ত এ দেশগুলোকে ২০১৯ সাল পর্যন্ত ২০ বিলিয়ন ও ২০২৫ সালের মধ্যে ৪০ বিলিয়ন ডলার দেওয়ার প্রতিশ্রুতি ছিল জি-৭ রাষ্ট্রগুলোর। তবে বৈশ্বিক মূল্যস্ফীতি ও জলবায়ু সংকটের প্রভাবে ক্ষতিগ্রস্ত এসব দেশের সহায়তার চাহিদা এখন ট্রিলিয়ন ডলার ছাড়িয়েছে।
বুধবার (১০ মে) রাজধানী ঢাকার হোটেল শেরাটনে সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ (সিপিডি) ‘জি-৭ সামিট- কল ফর গ্লোবাল ইনিশিয়েটিভস ফর এনডিং সাপোর্ট ফর ফসিল ফুয়েলস অ্যান্ড এক্সিলারেট দ্য ট্রানজিশন টু রিনিউয়েবল এনার্জি’ শীর্ষক সংলাপে এ অভিমত তুলে ধরেন বক্তারা।
উন্নত দেশগুলোর সংগঠন জি-৭ এর এবারের শীর্ষ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হবে জাপানে। যা আগামী ১৯ মে শুরু হয়ে চলবে ২১ পর্যন্ত।
সিপিডির নির্বাহী পরিচালক ড. ফাহমিদা খাতুনের সভাপতিত্বে সংলাপে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন সিডিপির গবেষণা পরিচালক ড. খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম।
ড. মোয়াজ্জেম বলেন, জাপানে অনুষ্ঠেয় জি-৭ সামিটকে কেন্দ্র করে জলবায়ু ঝুঁকিপূর্ণ দেশগুলোর মন্ত্রী পর্যায়ের বৈঠক শেষ হচ্ছে। তারা জ্বালানি ও জলবায়ু পরিবর্তন নিয়ে উদ্বিগ্ন। সংকট মোকাবিলায় এখনই উদ্যোগ নেওয়া প্রয়োজন।
তিনি বলেন, ন্যাশনালি ডিটারমাইন্ড কন্ট্রিবিউশন (এনডিসি) যে প্রতিশ্রুতির মধ্যে ছিল তা থেকে সরে যাচ্ছে। প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়নে এখন বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ।
নবায়নযোগ্য জ্বালানির অর্থায়নে এখন সবাই গুরুত্ব দিচ্ছে উল্লেখ করে সিডিপির এ গবেষণা পরিচালক আরও বলেন, কয়লা থেকে বেরিয়ে আসতে উন্নত দেশগুলো আরও সময় চাইছে। প্রযুক্তির দিক থেকে জি-৭ দেশগুলো আরও উন্নত প্রযুক্তি হাতে নিয়েছে। উন্নয়নশীল দেশগুলোতে প্রতিশ্রুত ১০০ বিলিয়ন ডলার দিতে পারছে না। অথচ জলবায়ু ক্ষতিগ্রস্ত দেশগুলোর চাহিদা এখন ট্রিলিয়ন ডলারে যাচ্ছে।
তিনি বলেন, সংকট মোকাবিলায় এখন বেসরকারি খাতকে এগিয়ে আসতে হবে। কিন্তু সমস্যা হলো- দেশের ব্যাংকগুলো এসব ক্ষেত্রে বিনিয়োগের আগে তাদের বাধাগুলো সামনে আনছে।
সিপিডির প্রবন্ধে বলা হয়, জি-৭ শীর্ষ সম্মেলনকে বাংলাদেশের মতো উন্নয়নশীল দেশ সাধারণত জলবায়ু সংকট মোকাবিলায় বড় অংকের অর্থায়নসহ বিভিন্ন নীতি সহায়তা আশা করে। উন্নত দেশগুলোর উচিত জীবাশ্ম জ্বালানি ও এলএনজিতে বিনিয়োগ বন্ধ করা।
সিপিডির নির্বাহী পরিচালক ড. ফাহমিদা খাতুন বলেন, জি-৭ সামিটের বেশকিছু লক্ষ্যমাত্রা রয়েছে। এরমধ্যে উল্লেখযোগ্য- গ্রিন হাউজ গ্যাস নিঃসরণ কমানো, জীবাশ্ম জ্বালানি কমানো ও নবায়নযোগ্য জ্বালানিতে রূপান্তর ঘটানো। কিন্তু কীভাবে এগুলো করা হবে তার সুনির্দিষ্ট লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়নি। জি-৭ সম্মেলনে উন্নয়নশীল দেশগুলো স্ব স্ব দাবিসমূহ তুলে ধরার সুযোগ পায়।
অনুষ্ঠানে ভারপ্রাপ্ত ব্রিটিশ হাইকমিশনার ম্যাট ক্যানেল বলেন, বাংলাদেশের মতো উন্নয়নশীল দেশগুলোর ইন্টারন্যাশনাল ফাইনান্সিয়াল ইনস্টিটিউট (আইএফআই) থেকে আরও বেশি অর্থায়ন আনা উচিত।
সিরাজগঞ্জ-১ আসনের এমপি তানভির শাকিল বলেন, নবায়নযোগ্য জ্বালানি নিয়ে আমাদের বেশ কিছু পরিকল্পনা রয়েছে। পরিকল্পনাগুলো যথাযথভাবে বাস্তবায়ন করা প্রয়োজন। এসব বাস্তবায়ন করতে গিয়ে যেন মানুষের জীবন-জীবিকা ব্যাহত না হয় সেদিকেও আমরা নজর রাখছি।