পাকিস্তানের সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী শাহ মেহমুদ কোরেশিকে গ্রেপ্তার করেছে দেশটির পুলিশ। বৃহস্পতিবার (১১ মে) তাকে গ্রেপ্তার করা হয়। শাহ মেহমুদ কোরেশি পাকিস্তানের ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানের ঘনিষ্ঠ সহযোগী বলে পরিচিত।
ইমরান খানকে গ্রেপ্তারের প্রতিবাদে দেশটিতে বিক্ষোভ ব্যাপক আকার ধারণ করেছে এবং বিক্ষোভ দমাতে পাকিস্তানের আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী গণগ্রেপ্তার শুরু করেছে। এই পরিস্থিতিতে অন্য অনেক শীর্ষ নেতার পাশাপাশি সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী শাহ মেহমুদ কোরেশিকেও গ্রেপ্তার করা হলো।
বৃহস্পতিবার এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে পাকিস্তানি সংবাদমাধ্যম দ্য ডন।
সংবাদমাধ্যম বলছে, ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানের ঘনিষ্ঠ সহযোগী ও পাকিস্তানের সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী শাহ মেহমুদ কোরেশিকে বৃহস্পতিবার গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। দক্ষিণ এশিয়ার পরমাণু শক্তিধর এই দেশটিতে ক্রমবর্ধমান রাজনৈতিক অস্থিরতার মধ্যে এখন পর্যন্ত অন্তত আটজন নিহত হয়েছেন এবং দেশটির রাজধানী ইসলামাবাদসহ তিনটি প্রদেশ সেনাবাহিনী মোতায়েন করা হয়েছে।
টুইটারে পাকিস্তান তেহরিক-ই-ইনসাফ পার্টির শেয়ার করা একটি ভিডিওতে দেখা যাচ্ছে, সাদা পোশাকের লোকেরা সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী শাহ মেহমুদ কোরেশিকে নিয়ে যাচ্ছে। এছাড়া আটক করে নিয়ে যাওয়ার সময় প্রস্থানের আগে দলীয় কর্মীদের দিকে হাত নাড়তেও দেখা যায় তাকে।
ইসলামাবাদ পুলিশ জানিয়েছে, এখন পর্যন্ত পিটিআই নেতা শাহ মাহমুদ কোরেশি, আসাদ উমর, ফাওয়াদ চৌধুরী, জামশেদ ইকবাল চিমা, ফালাকনাজ চিত্রালি, মুসাররাত জামশেদ চিমা এবং মালেকা বোখারিকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
এক টুইটে পুলিশ বলেছে, ‘শান্তি-শৃঙ্খলার বিরুদ্ধে হুমকির জন্য সুচিন্তিত পরিকল্পনার অধীনে অগ্নিসংযোগ এবং সহিংস বিক্ষোভের অভিযোগে ইমরানের দলের এসব নেতাকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।’
এতে আরও বলা হয়েছে, সমস্ত গ্রেপ্তার আইনি বাধ্যবাধকতা পূরণ করেই তাদের গ্রেপ্তার করা হয়েছে এবং আরও নেতাকে গ্রেপ্তার হবে বলে সতর্ক করা হয়েছে। এছাড়া ‘জনগণের মধ্যে গুজব ও উসকানি না ছড়াতেও’ মানুষের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে পুলিশ।
অন্যদিকে ভারতীয় বার্তাসংস্থা পিটিআইয়ের বরাত দিয়ে সংবাদমাধ্যম এনডিটিভি জানিয়েছে, ৬৬ বছর বয়সী শাহ মেহমুদ কোরেশিকে বৃহস্পতিবার ভোরে ইসলামাবাদ পুলিশ গ্রেপ্তার করেছে এবং পরে ‘অজ্ঞাত স্থানে’ নিয়ে গেছে বলে পিটিআই দাবি করেছে।
গত মঙ্গলবার ইসলামাবাদ হাইকোর্টের বাইরে থেকে পাকিস্তানের সাবেক প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানকে গ্রেপ্তার করা হয়। আল-কাদির ট্রাস্ট মামলায় ন্যাশনাল অ্যাকাউন্টেবিলিটি ব্যুরোর (এনএবি) ওয়ারেন্টে পাকিস্তানের আধাসামরিক বাহিনী রেঞ্জার্স তাকে গ্রেপ্তার করে।
এর দু’দিনের মাথায় শাহ মেহমুদ কোরেশিকে গ্রেপ্তার করা হলো। অবশ্য এর আগে বুধবার দুপুরে ইমরানের দলের মহাসচিব আসাদ উমরকে গ্রেপ্তার করা হয়। আর একইদিন রাতে ইসলামাবাদে সুপ্রিম কোর্টের (এসসি) বাইরে থেকে গ্রেপ্তার করা হয় পাকিস্তান তেহরিক-ই-ইনসাফের (পিটিআই) সিনিয়র সহ-সভাপতি ফাওয়াদ চৌধুরীকে।
এদিকে ইমরান খানের গ্রেপ্তারের বিরুদ্ধে পাকিস্তানজুড়ে ব্যাপক সহিংস বিক্ষোভে কমপক্ষে আটজন নিহত এবং আরও প্রায় ৩০০ জন আহত হয়েছেন। এছাড়া বিক্ষোভ দমাতে পাকিস্তানের আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী গণগ্রেপ্তার শুরু করেছে এবং এখন পর্যন্ত দেশটিতে প্রায় এক হাজার মানুষকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
দেশটির ক্ষমতাসীন শেহবাজ শরিফের সরকার রাজধানী ইসলামাবাদসহ পাঞ্জাব, খাইবার পাখতুনখাওয়া ও বেলুচিস্তান প্রদেশে আইনশৃঙ্খলা বজায় রাখতে সেনাবাহিনী মোতায়েন করার নির্দেশ দিয়েছে।
এই পরিস্থিতিতে পাকিস্তানের সব দলকে সহিংসতা থেকে বিরত থাকার আহ্বান জানিয়েছে জাতিসংঘ। একইসঙ্গে শান্তিপূর্ণ সমাবেশের অধিকারকে সম্মান করার প্রয়োজনীয়তার ওপরও জোর দিয়েছেন সংস্থাটির মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস।