পাকিস্তানের সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও পাকিস্তান তেহরিক-ই-ইনসাফের (পিটিআই) চেয়ারম্যান ইমরান খানের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছেন দেশটির প্রেসিডেন্ট ড. আরিফ আলভি। বৃহস্পতিবার (১১ মে) রাতে ইসলামাবাদ পুলিশ লাইনসের রেস্ট হাউসে সাবেক এই প্রধানমন্ত্রীকে দেখতে যান তিনি।
এর আগে পাকিস্তানের সুপ্রিম কোর্ট ইমরানের গ্রেপ্তারকে অবৈধ ঘোষণা করে এবং অবিলম্বে মুক্তি দেওয়ার নির্দেশ দেয়। শুক্রবার (১২ মে) এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে পাকিস্তানি সংবাদমাধ্যম দ্য নিউজ ইন্টারন্যাশনাল।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, পাকিস্তানের প্রেসিডেন্ট আরিফ আলভি বৃহস্পতিবার রাতে পিটিআই চেয়ারম্যান ইমরান খানকে পুলিশ লাইনসের পুলিশ রেস্ট হাউসে দেখতে যান। শুক্রবার ইসলামাবাদ হাইকোর্টে (আইএইচসি) হাজির হওয়ার জন্য সুপ্রিম কোর্টের তিন সদস্যের বেঞ্চের আদেশে সাবেক এই প্রধানমন্ত্রী পুলিশ লাইনসের রেস্ট হাউসে অবস্থান করছেন।
এর আগে দুর্নীতির মামলায় গত মঙ্গলবার ইসলামাবাদ হাইকোর্ট প্রাঙ্গণ থেকে নাটকীয়ভাবে গ্রেপ্তার করা হয় ইমরান খানকে। এর একদিন পর তাকে আটদিনের রিমান্ডেও নেওয়া হয়। তবে বৃহস্পতিবার পাকিস্তানের সুপ্রিম কোর্ট দেশটির সাবেক প্রধানমন্ত্রীর গ্রেপ্তারকে অবৈধ ঘোষণা করে।
এমনকি সুপ্রিম কোর্ট ইমরান খানকে অবিলম্বে মুক্তি দেওয়ার নির্দেশও প্রদান করে। এরপর শুক্রবারের হাজিরার জন্য সুপ্রিম কোর্ট থেকে পুলিশ লাইনসের রেস্ট হাউসে যান ইমরান।
দ্য নিউজ ইন্টারন্যাশনাল বলছে, সুপ্রিম কোর্ট থেকে মুক্তি পাওয়ায় প্রেসিডেন্ট আরিফ আলভি ইমরান খানকে অভিনন্দন জানান এবং দেশের পরিস্থিতি সম্পর্কে অবহিত করেন।
গুরুত্বপূর্ণ পর্যায়ে থাকা বেশ কিছু সূত্র দ্য নিউজকে জানিয়েছে, পাকিস্তানের প্রেসিডেন্ট এসময় ইমরানকে তার গ্রেপ্তারের বিষয়ে সামরিক কর্তৃপক্ষের সাথে যোগাযোগ এবং এর পরিপ্রেক্ষিতে পরিস্থিতি সম্পর্কে বলেছেন।
সূত্র জানায়, ইমরান পরে গিলগিট বাল্টিস্তানের (জিবি) মুখ্যমন্ত্রীকে ডেকে পাঠান। পরে তিনিও সেখানে আলোচনায় যোগ দেন এবং তারা মধ্যরাতের পর পর্যন্ত দুই ঘণ্টারও বেশি সময় ধরে আলোচনা করেন।
এদিকে, ইমরান খান জোর দিয়ে বলেছেন, একজন চাকরিরত সামরিক কর্মকর্তার বিরুদ্ধে তার অভিযোগ কেবল অভিযোগই নয়, বাস্তবতা। তিনি বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় সুপ্রিম কোর্টে বিদেশি এক মিডিয়া প্রতিনিধির প্রশ্নের জবাবে এ কথা বলেন। ওই সাংবাদিক ইমরানকে জিজ্ঞাসা করেছিলেন, একজন চাকরিরত সামরিক কর্মকর্তার বিরুদ্ধে অভিযোগ করেছেন বলে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে কিনা।
অপরদিকে মিডল ইস্টার্ন নেটওয়ার্কের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ইমরান খান বলেছেন- বিরোধীদের সঙ্গে কোনো আলোচনা সম্ভব হবে না কারণ তারা সংবিধানে বিশ্বাস করে না।
প্রধান বিচারপতির পরামর্শের বিষয়ে এক সংবাদকর্মী তার দৃষ্টি আকর্ষণ করলে ইমরান মনে করিয়ে দেন, সংবিধান নব্বই দিনের মধ্যে নির্বাচনের নির্দেশ দিয়েছে কিন্তু তারা (সরকার) তা এড়িয়ে যাচ্ছে। এখন সংবিধান মেনে চলা প্রয়োজন এবং এর পরে কীভাবে এগোনো যায় তা দেখা যাবে।
একজন আইনজীবী তাকে বলেন, পিটিআই মহাসচিব আসাদ উমর, সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী শাহ মাহমুদ কোরেশি এবং সাবেক মন্ত্রী ফাওয়াদ চৌধুরীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এতে ইমরান ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠেন এবং জিজ্ঞাসা করেন, কেন তাকে আগে জানানো হয়নি, যাতে তিনি আদালতে এই সমস্ত বিষয় তুলে ধরতে পারতেন।
একজন সংবাদকর্মী ইমরানকে লাহোরের ঊর্ধ্বতন সেনা কমান্ডারের বাসভবনে হামলার নিন্দা করবেন কিনা জিজ্ঞাসা করেন। ইমরান তা প্রত্যাখ্যান করে বলেন, যেহেতু তিনি এসব বিষয়ে কিছুই জানেন না, তাহলে কীভাবে তিনি এ বিষয়ে মন্তব্য করতে পারেন।
এদিকে সুপ্রিম কোর্টে ইমরানের মুক্তির আদেশের পর একজন কর্মকর্তা ইমরানের কাছে এগিয়ে আসেন এবং তাকে তিনি বিদায় জানাতে এসেছেন বলে জানান। তখন ইমরান তার সাথে করমর্দন করেন এবং বলেন, ‘আমি প্রার্থনা করি আমাদের আর দেখা হবে না।’