ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় অধ্যক্ষের মৃত্যু, স্ত্রী-সন্তান ও পাওনাদারের বিরুদ্ধে আত্মহত্যায় প্ররোচণার মামলা

ব্রাহ্মণবাড়িয়া প্রতিনিধি

ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় অধ্যক্ষ মোস্তাব আলীর (৫৮) মৃত্যুর ঘটনায় তাঁর স্ত্রী, একমাত্র ছেলে ও পাওনাদারের বিরুদ্ধে আত্মহত্যায় প্ররোচণার অভিযোগে মামলা হয়েছে। গতকাল শনিবার দিবাগত রাত ১২টার দিকে মোস্তাব আলীর বড় ভাই মোহাম্মদ আলী বাদী হয়ে ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর থানায় মামলাটি করেন।

মামলার আসামিরা হলেন মোস্তাব আলীর স্ত্রী নাটোর সদর উপজেলার পাইকপাড়ার বাসিন্দা বিলকিস খাতুন (৫০), অধ্যক্ষের ছেলে আহম্মেদ ওয়াজিহ ওয়াসিক (২৭) ও নাটোরের পাইপাকপাড়ার পাওনাদার রায়েজুল ইসলাম রাজু (৫৫)। রায়েজুল সম্পর্কে মোস্তাব আলীর চাচাতো ভাই।

universel cardiac hospital

মোস্তাব আলী নাটোরের পাইকপাড়ার মৃত মজির উদ্দিনের ছেলে। তিনি ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বিরাসারের গ্যাস ফিল্ডস কোম্পানির আওতাধীন গ্যাস ফিল্ডস স্কুল অ্যান্ড কলেজের অধ্যক্ষ ছিলেন। ২০১৮ সালের নভেম্বরে অধ্যক্ষ হিসেবে সেখানে যোগ দিয়েছিলেন তিনি।

গত ১০ মে সকাল নয়টার দিকে ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর উপজেলার ঘাটুরার ২ নম্বর লোকেশনের আবাসিক এলাকা থেকে মোস্তাব আলীর লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। শৌচাগারের ভেতরে গলায় রশি প্যাঁচানো অবস্থায় লাশ উদ্ধার করা হয়। পরদিন ১১ মে নাটোরের পাইকপাড়ায় তাঁর লাশ দাফন করা হয়। মোস্তাব আলী ঋণে জর্জরিত ছিলেন।

মামলার এজাহারে বলা হয়েছে, দেড় থেকে দুই বছর আগে রায়েজুলের কাছ থেকে সুদের ওপর ছয় লাখ টাকা ঋণ নেন মোস্তাব আলী। সুদের কিস্তির টাকা নেওয়ার জন্য রায়েজুল প্রায়ই ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় অধ্যক্ষের কাছে আসা-যাওয়া করতেন। সুদের কিস্তি দিতে দেরি হলে তিনি মোস্তাব আলীকে অপমান–অপদস্থ করতেন। এদিকে সাংসারিক বিভিন্ন বিষয়কে কেন্দ্র করে স্ত্রী-সন্তানের সঙ্গে মোস্তাব আলীর পারিবারিক কলহ চলছিল।

তারা বিভিন্নভাবে মানসিক চাপ দিয়ে নাজেহাল করাসহ আত্মহত্যা করার জন্য মোস্তাব আলীকে উসকানিমূলক কথাবার্তা বলতেন। স্ত্রী–সন্তানের অপমানজনক কথাবার্তায় তিনি প্রায় সময় বাসায় সকালের নাশতা ও অনেক সময় দুপুরের খাবার খেতেন না। অধ্যক্ষ ঋণগ্রস্ত হওয়া সত্ত্বেও তাঁর স্ত্রী-সন্তান বিলাসি জীবনযাপন করতেন। মোস্তাব আলীর ছেলে ওয়াসিক নেশাজাতীয় দ্রব্য সেবন করতেন। এ জন্য ওয়াসিক বিভিন্ন সময় টাকার জন্য মোস্তাব আলীকে চাপ দিতেন। প্রতিবাদ করলেই স্ত্রী-সন্তানের লাঞ্ছনার শিকার হতেন মোস্তাব আলী।

মামলার এজাহারে আরও বলা হয়েছে, ১০ মে সকালে মোস্তাব আলী তাঁর কর্মস্থলে পৌঁছালে মুঠোফোনে সুদের টাকা চান রায়েজুল। এতে উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েন মোস্তাব আলী। এ সময় স্ত্রী-সন্তানের অপমানজনক আচরণ আর পাওনাদারের কটূক্তিতে লজ্জা ও ঘৃণায় মোস্তাব আলী গলায় রশি পেঁচিয়ে আত্মহত্যা করেন।

শেয়ার করুন