সরকারবিরোধী আন্দোলনের পড়ন্ত বিকেল

আবদুল মান্নান

আবদুল মান্নান
আবদুল মান্নান। ফাইল ছবি

গ্রামাঞ্চলে মানুষ অন্ধকারে একা পথ চলতে ভূতের ভয়ে বেসুরা গলায় গান গায়। অবশ্য তেমন গ্রাম এখন আর দেখা যায় না। প্রায় দুই বছরের অধিক সময় ধরে বিএনপির নেতৃত্বে নানা কিসিমের, নানা মতের রাজনৈতিক দল ক্ষমতাসীন সরকারকে ফেলে দিয়ে নিজেরা ক্ষমতায় আসীন হতে নিরলস চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। কেউ কেউ অবাক হন এটা দেখে যে মার্ক্সবাদীরা উগ্র ধর্মীয় মৌলবাদ, বিভ্রান্ত ব্যক্তি ও দলের সঙ্গে জোট বেঁধেছে। আর হাজার মাইল দূরে থাকা একজন পলাতক ও দণ্ডপ্রাপ্ত ব্যক্তির বশ্যতা স্বীকার করে সরকারবিরোধী আন্দোলনে শরিক হয়েছে। এতে অবাক হওয়ার কিছু নেই। দেশ সব সময় দুই ধারার রাজনৈতিক মতাদর্শে বিশ্বাসী। একদিকে আছে সরকারি দল, বর্তমানে আওয়ামী লীগ। অন্যদিকে সরকারবিরোধী দলগুলো, যারা সুবিধা বুঝে একজোট হয় শুধু একটি লক্ষ্য সামনে রেখে, আর তা হচ্ছে আওয়ামী লীগের বিরোধিতা। আওয়ামী লীগের জন্মলগ্ন থেকেই দেখা গেছে তারা যখনই রাষ্ট্রক্ষমতায় এসেছে তখনই সরকারকে ফেলে দিতে সবাই একজোট হয়েছে। এই যাত্রায়ও তার ব্যতিক্রম হয়নি।

২০০৮ সালে নির্বাচনে বিজয় লাভ করে আওয়ামী লীগ সরকার গঠন করে। ২০১৪ সালের একটি নির্ধারিত সংসদ নির্বাচনের প্রাক্কালে বিএনপি ও তার মিত্ররা দাবি করে, আওয়ামী লীগকে একটি অসাংবিধানিক নির্বাচনকালীন সরকারের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর করে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হলে তারা সেই নির্বাচনে অংশ নেবে। এমন একটি ব্যবস্থা এর আগে ছিল, যা দেশের সর্বোচ্চ আদালত বাতিল করে দিয়েছেন এই বলে একটি গণতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থায় এক মিনিটের জন্যও রাষ্ট্রের শাসনব্যবস্থা কোনো অনির্বাচিত ব্যক্তির কাছে যেতে পারে না। একমাত্র পাকিস্তান ছাড়া এমন ব্যবস্থা বিশ্বের কোনো দেশে বিরাজ করে না। আর পাকিস্তানের বর্তমান অবস্থা দেখলে এটি মনে করার যথেষ্ট কারণ আছে, সেই দেশে ১৯৪৭ সাল থেকে শুরু করে এখন পর্যন্ত কোনো টেকসই নির্বাচনব্যবস্থা গড়ে ওঠেনি। অনির্বাচিত সরকার থাকলেও না।

universel cardiac hospital

বিএনপির একটি বড় সুবিধা হচ্ছে, বর্তমান প্রজন্মের একটি বেশ বড় অংশের সমর্থন তারা সব সময় পায়, কারণ এই প্রজন্মকে অত্যন্ত সুপরিকল্পিতভাবে জানানো হয়েছে বাংলাদেশের ইতিহাসের শুরু ১৯৭৫ সালের পর। ১৯৭১ সালে স্বাধীনতার নামে বাংলাদেশ ভারতের করদরাজ্যে পরিণত হয়েছিল। ১৯৭৫ সালে বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করার পর জিয়া বাংলাদেশকে প্রকৃত অর্থে স্বাধীন করেছিলেন। বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করার পর দীর্ঘ ২১ বছর বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসে বঙ্গবন্ধু আর স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের প্রকৃত ইতিহাস অনুপস্থিত ছিল। এই সময় অন্তত দুটি প্রজন্ম বড় হয়েছে। লন্ডনে পলাতক বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান জিয়াপুত্র তারেক রহমান সম্প্রতি এক দলীয় অনুষ্ঠানে বলেছেন, বাংলাদেশের স্বাধীনতার পেছনে বঙ্গবন্ধু (তাঁর ভাষায় শেখ মুজিব) বা আওয়ামী লীগের কোনো অবদান নেই। তারেক রহমান তাঁর কথার সত্যতা প্রমাণ করার জন্য অলি আহাদের একটি বই থেকে উদ্ধৃতি দিয়েছেন। অলি আহাদের রাজনীতি শুরু আওয়ামী লীগের হাত ধরে। ১৯৫১ সালে যুবলীগ গঠন করা হলে অলি আহাদ তার প্রথম সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন। বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডের পর অলি আহাদ খন্দকার মোশতাকের সঙ্গে হাত মেলান। মোশতাক ডেমোক্রেটিক লীগ গঠন করলে তিনি তাতে যোগ দেন। তাঁর লেখা বই থেকে তারেক রহমানকে উদ্ধৃতি দিয়ে প্রমাণ করতে হয় বাংলাদেশের স্বাধীনতায় আওয়ামী লীগ বা বঙ্গবন্ধুর কোনো অবদান নেই। এসব কথা ১৯৭৫ সালের পর একাধিক প্রজন্মকে পরিবেশন করা হয়েছে। আওয়ামী লীগ বা তার অঙ্গসংগঠনগুলোর যে পাল্টা বক্তব্য দেওয়ার প্রয়োজন ছিল তা তারা দিতে ব্যর্থ হয়েছে।

১৯৯৬ সালে শেখ হাসিনা দীর্ঘ ২১ বছর পর প্রথম সরকার গঠন করলে তাঁর সেই মেয়াদে প্রায় দুই বছর বিএনপি ও জামায়াত তাঁর কাজে নানাভাবে বাধা সৃষ্টি করেছে। আজ হরতাল তো কাল ধর্মঘট, পরদিন সড়ক অবরোধ। শেখ হাসিনার দৃঢতার কারণে সেই দফায় তিনি তাঁর মেয়াদ শেষ করেন। ২০০৮ সালে নির্বাচনে বিজয় লাভ করার পর শেখ হাসিনা বর্তমান মেয়াদ পর্যন্ত টানা তিন দফায় সরকারপ্রধান হিসেবে দেশ পরিচালনা করেছেন। এই তিন মেয়াদে তিনি বাংলাদেশকে বিশ্বের কাছে এক নতুন উচ্চতায় নিয়ে গেছেন, হয়ে উঠেছেন বাংলাদেশের ব্র্যান্ড অ্যাম্বাসাডর। কিন্তু যাদের জন্মই হয়েছিল আওয়ামী লীগের রাজনীতির বিরোধিতা করতে, তারা কেন শেখ হাসিনার শাসনকালকে মেনে নেবে? তারা জানে ষড়যন্ত্র ছাড়া এখনো কোনো নির্বাচনে আওয়ামী লীগকে পরাজিত করা সহজ নয়। আওয়ামী লীগ সব সময় পরাজিত হয়েছে ষড়যন্ত্রের কাছে। সেই থেকে বিএনপি ও আওয়ামী লীগবিরোধী সব দল, ব্যক্তি ও গোষ্ঠী নিরলসভাবে চেষ্টা করে যাচ্ছে কিভাবে শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন সরকারকে ক্ষমতাচ্যুত করে নিজেদের ক্ষমতায় আনা যায়। এর জন্য তারা বেছে নেয় সন্ত্রাস, জঙ্গিবাদের মদদ, হত্যা আর অগ্নিসন্ত্রাসকে। এতে শেখ হাসিনার সরকার ক্ষমতাচ্যুত হয়নি, তবে দেশে জান-মালের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। ২০১৪ সালের নির্বাচনের আগে পরিস্থিতি এতই ভয়াবহ হয়েছিল যে বিএনপি নেতা সাদেক হোসেন খোকা (বর্তমানে প্রয়াত) কোরবানির ঈদের আগে তাঁর দলের নেতাকর্মীদের আহবান জানিয়েছিলেন, তাঁরা যেন কোরবানিতে ব্যবহার করা দা-ছুরি কোরবানির পর তুলে না রাখেন। কী ভয়াবহ কথা! শান্তিপূর্ণভাবে সাংবিধানিক উপায়ে সমস্যা মোকাবেলা করার জন্য শেখ হাসিনা বারবার তাগাদা দেওয়ার পরও বিএনপি ও তাদের মিত্ররা তাদের অবস্থান থেকে একবিন্দুও সরেনি। ২০১৪ সালের নির্বাচনে তারা অংশ না নিলে আওয়ামী লীগ তার মিত্রদের নিয়ে নির্বাচনে অংশ নিয়ে বিজয় লাভ করে এবং সরকার গঠন করে। পরবর্তী সময়ে বিএনপি আর মিত্ররা বলে বেড়ায় ভোটারবিহীন নির্বাচনে গঠিত শেখ হাসিনার সরকার এক বছর ছয় মাস টিকবে। শত প্রতিকূলতা সত্ত্বেও শেখ হাসিনা পুরো পাঁচ বছর দেশ শাসন করে দেশের অগ্রযাত্রা অব্যাহত রাখেন।

২০১৮ সালের নির্বাচনের প্রাক্কালে ঠিক আগেরবারের পরিস্থিতি সৃষ্টি করে বিএনপি ও তার মিত্ররা। এবারও তারা তেমন একটা সুবিধা করতে না পেরে ঠিক করে তারা নির্বাচনে যাবে একটি জোটের ছায়াতলে। এরই মধ্যে বিএনপির চেয়ারম্যান খালেদা জিয়া দুর্নীতির দায়ে অভিযুক্ত হয়ে কারারুদ্ধ হয়েছেন আর তাঁর পুত্র তারেক রহমান অস্ত্র চোরাচালান মামলায় যাবজ্জীবন কারাদণ্ডে দণ্ডিত হয়ে বর্তমানে লন্ডনে পলাতক আছেন এবং সেখান থেকে দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান হিসেবে দল পরিচালনা করছেন। ২০১৮ সালে বিএনপি ও তার মিত্ররা তাদের নেতা হিসেবে বেছে নেয় ড. কামাল হোসেনকে। রাজনীতিতে ড. কামাল হোসেনের প্রবেশ বঙ্গবন্ধুর হাত ধরে আর বঙ্গবন্ধুর মৃত্যুর পর তাঁর রাজনীতিরও সমাপ্তি ঘটে। আসলে তিনি বুঝতে পারেননি তিনি একটি অশুভ রাজনৈতিক শক্তির দ্বারা ব্যবহৃত হচ্ছেন। সেই নির্বাচনে বিএনপি বা তার মিত্ররা কখনো বিজয়ী হতে অংশগ্রহণ করেনি। মনোনয়ন বাণিজ্যই ছিল তাদের একমাত্র উদ্দেশ্য। প্রায় প্রতিটি আসনে একাধিক প্রার্থীর কাছে তারা মনোনয়নপত্র বিক্রি করে। ফলাফল যা হওয়ার তা-ই হয়েছে। বিএনপি মাত্র ছয়টি আসনে বিজয় লাভ করে। অবধারিত পরাজয়ের পর বিএনপি ও তাদের মিত্ররা চিৎকার শুরু করে এই নির্বাচন তারা মানে না, কারণ দিনের ভোট আগের রাতে হয়েছে। সারা দেশে প্রায় ৪০ হাজার ভোটকেন্দ্র ছিল। ছিল হাজার হাজার দলীয় নেতাকর্মী আর নির্বাচন পর্যবেক্ষক, আর হাজার হাজার মিডিয়া কর্মী; কিন্তু এ পর্যন্ত দিনের ভোট যে রাতে হয়েছে তার কোনো প্রমাণ কেউ উপস্থিত করতে পারেনি। তবে বিএনপি এবং তার মিত্রদের সাফল্য হচ্ছে, তারা এই দিনের ভোট রাতে হয়েছে তা দেশে-বিদেশে সফলভাবে প্রচার করতে সক্ষম হয়েছে।

এই বছরের শেষে বা আগামী জানুয়ারি মাসে দেশে দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন হওয়ার কথা। আবারও শুরু হয়েছে আগের খেলা। এবার নানা কিসিমের ও রঙের ব্যক্তি, দল ও গোষ্ঠীকে নিয়ে সরকারকে ফেলে দিতে হবে স্লোগান দিয়ে সবাই পথে নেমেছে, যাদের অনেকেই একটি ইউনিয়ন পরিষদের কমিশনার পদে নির্বাচন করে জেতার সম্ভাবনা শূন্য। গঠন করা হয়েছে সরকারবিরোধী জোট। এরই মধ্যে তারা নানা কর্মসূচি পালন করেছে। ঘোষণা করেছে সাত দিন বা ১০ দিন পর শেখ হাসিনা দেশ ছেড়ে পালিয়ে যাবেন। ক্ষমতা নিতে খালেদা জিয়া প্রস্তুত। তারেক রহমান লন্ডন থেকে এলেন বলে। একজন বড় নেতা ঘোষণা করলেন ১০ ডিসেম্বর থেকে দেশ শাসন করবেন। মানুষ দেখল সব কিছুই শুধু বাগাড়ম্বর। কর্মী-সমর্থকরা হতাশ হলেন। যে নেতাদের আগে পথের সভা-সমাবেশে দেখা যেত, তাঁরা এখন ছুটিতে আছেন।

কোনো কর্মসূচিই শেখ হাসিনা বা তাঁর সরকারকে টলাতে পারল না। উপরন্তু দেশে ও আন্তর্জাতিক মহলে শেখ হাসিনার ঔজ্জ্বল্য বাড়ল। এরই মধ্যে শেখ হাসিনা ১৫ দিন একটি ত্রিদেশীয় সফল সফর শেষ করে দেশে ফিরেছেন। এসব দেশের সরকারপ্রধান এবং বিশ্বব্যাংক ও আইএমএফের শীর্ষ কর্মকর্তারা বাংলাদেশের উন্নয়নকে চলমান রাখতে শেখ হাসিনার বিকল্প নেই বলে জানিয়ে দিয়েছেন। বাংলাদেশে চীনের রাষ্ট্রদূত ঘোষণা করেছেন, শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি আগামী বছর চীনকেও ছাড়িয়ে যাবে। ব্রিটেনের প্রধানমন্ত্রী ঋষি সুনাক শেখ হাসিনাকে একজন সফল অর্থনৈতিক নেতা আখ্যা দিয়ে জানিয়েছেন, শুধু তিনি নন, তাঁর দুই কন্যাও শেখ হাসিনার ভক্ত। এরই মধ্যে বিএনপির সঙ্গে জোট ছাড়া শুরু করেছে কেউ কেউ। তারা হয়তো বুঝতে পেরেছে, এদের পেছনে হেঁটে কোনো লাভ নেই। কয়েক দিন আগে বিএনপির কয়েকজন সিনিয়র নেতা বাংলাদেশে বিদেশি রাষ্ট্রদূতদের কাছে ধরনা দিলেন পরিস্থিতি থেকে তাঁদের উদ্ধার করতে। যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত পিটার হাস সাহেব তাঁদের চা-নাশতা খাইয়ে বিদায় করেছেন। গত বৃহস্পতিবার তিনি একটি দৈনিক ইংরেজি পত্রিকায় অনলাইন ভিডিও চ্যানেলে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে বলেছেন, নির্বাচন বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়। এ বিষয়ে তাঁদের কোনো ভূমিকা রাখার অবকাশ নেই। নির্বাচনে কোনো দল অংশ নিল কি নিল না, এটি তাদের নিজস্ব বিষয়। তাঁদের প্রত্যাশা, ভবিষ্যতে বাংলাদেশে একটি সুষ্ঠু নির্বাচন হোক। এই প্রত্যাশা সবার। নেতারা গেলেন যুক্তরাজ্য আর ইউরোপীয় ইউনিয়নের দূতের সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে। তাঁদেরও একই জবাব। আর কিছু না হোক তাঁরা তো জানেন ক্ষমতায় কারা থাকলে বাংলাদেশে জঙ্গিবাদের চাষ হয়। ভারতের দূতের দরজায় দুবার কড়া নাড়লেন। ধৈর্যসহকারে ভারত প্রতিনিধি তাঁদের কথা শুনলেন। চা-নাশতা পরিবেশন করা হলো। খালেদা জিয়ার আইন ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রী ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ (বর্তমানে প্রয়াত) সংসদে দাঁড়িয়ে ঘোষণা করেছিলেন, ‘উত্তর-পূর্ব ভারতের বিচ্ছিন্নতাবাদীরা স্বাধীনতাসংগ্রামী। আমাদের উচিত তাদের সহায়তা করা।’ সহায়তার অংশ হিসেবে বাংলাদেশের ভেতর দিয়ে ১০ ট্রাক অস্ত্র চোরাচালানের ব্যবস্থা। এই তথ্য তো ভারতের খাতায় লেখা আছে। দিল্লি থেকে ভারত সরকারের একজন বড় কর্মকর্তা ঘোষণা করেছেন, ভারতকে ডিঙিয়ে বাংলাদেশে অন্য দেশ কিছু করতে পারবে না। জাতিসংঘের আবাসিক প্রতিনিধির সঙ্গে দেখা করতে গেলে তিনি জানিয়েছেন, এসব কাজের সঙ্গে জড়িত হওয়ার ছাড়পত্র তাদের দেওয়া হয়নি। পাকিস্তানের সঙ্গে যোগাযোগ রাখা হচ্ছে লন্ডন থেকে। তবে এই মুহূর্তে পাকিস্তান তাদের অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখার যুদ্ধে আছে।

কোনো কিছুতেই যখন কাজ হচ্ছে না, তখন কিছু মিথ্যার আশ্রয় নিয়ে দেখা যাক। একজন টিভিতে এসে জানালেন ১৯৭১ সালের ২৬ মার্চ রাতে জিয়া সোয়াত জাহাজ থেকে বাঙালি নিধনের জন্য আনা অস্ত্র জনগণের প্রতিরোধের মুখে খালাস করতে না পেরে নিজের আস্তানায় এসে তাঁর পাঞ্জাবি কমান্ডার জানজুয়াকে গুলি করে হত্যা করেন। অনুষ্ঠানের সঞ্চালক ভিমরি খাওয়ার জোগাড়। তাহলে খালেদা জিয়া যে জানজুয়ার মৃত্যুতে শোকাহত হয়ে শোকবার্তা পাঠিয়েছিলেন, তিনি কোন জানজুয়া। বিএনপি নেতা বেশ দৃঢ় কণ্ঠে জানালেন, তিনি অন্যজন। সত্যটি হচ্ছে, জানজুয়াকে জিয়া বন্দি করেছিলেন, হত্যা নয়। সত্য ঘটনা বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর বীর মুক্তিযোদ্ধা মেজর রফিকুল ইসলাম (অব.) বীর-উত্তমের লেখা ‘লক্ষ প্রাণের বিনিময়ে’ বইতে আছে। বিএনপির একজন ভাইস প্রেসিডেন্ট চট্টগ্রামে আমার পড়শি। সেদিন টিভিতে এসে জানালেন, চট্টগ্রামে লাখ লাখ মানুষ তাঁর পেছনে কাতারবন্দি হয়েছে বর্তমান সরকারকে ফেলে দেওয়ার জন্য। নিজের গায়ে চিমটি কাটি। একজন বেশ স্মার্ট বিএনপির মহিলা নেতা টিভিতে এসে জানিয়ে দিলেন শেখ হাসিনা তিন দেশ সফরে গিয়েছিলেন আগামী নির্বাচনে তাদের সমর্থন ভিক্ষা করতে। অন্য আরেক বড় নেতা থেকে জানা গেল, জনগণের অর্থে শেখ হাসিনার এই নিষ্ফলা সফরের তাঁরা হিসাব নেবেন ক্ষমতায় আসার পর। প্রশ্ন উঠল দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান লন্ডনে এই যে বিলাসী জীবন যাপন করেন, কে জোগায় সেই অর্থ? উত্তর সহজ। তিনি এখন সেই দেশে রাজনৈতিক আশ্রয়ে আছেন। অন্য দশজন রাজনৈতিক আশ্রয়প্রার্থী হিসেবে তিনি সেই দেশের সরকার থেকে মাসোহারা পান। উত্তর লন্ডনে বিলাসী বাড়িতে থাকা, গাড়িতে নিজের পছন্দসই নম্বর প্লেট লাগানোর খরচও কি ব্রিটিশ সরকার দেয়? একজন জানালেন, তারেক রহমানের স্ত্রী একজন পেশাদার ডাক্তার। তিনি সেখানে ডাক্তারি করেন। তারেক রহমানের স্ত্রীর ডাক্তারি করার যোগ্যতা আছে, তবে তা করার আগে তাঁকে ওই দেশের যোগ্যতা অর্জনের জন্য বেশ কিছু কোর্স করে পরীক্ষা দিতে হবে। এমনটা তিনি করেছেন তা জানা যায়নি। অবশ্য এদিক দিয়ে তারেক রহমান বেশ স্বচ্ছ। তিনি এরই মধ্যে তাঁর আয়কর ফরমে ঘোষণা করেছেন, তিনি আয়ের জন্য ক্যাসিনোতে জুয়া খেলেন। সে দেশে জুয়া খেলা আইনসিদ্ধ।

ঈদের পর সরকারবিরোধী কী কর্মসূচি দেওয়া যায় তা চূড়ান্ত করার জন্য বিএনপি তাদের শরিকদের নিয়ে সভায় মিলিত হয়েছিল। এক জায়গায় এসে মতভেদ দেখা দিল। রাজধানী থেকে মিছিল নিয়ে বিভাগীয় শহর ঘেরাও করা হবে, না বিভাগীয় শহর থেকে এসে রাজধানী ঘেরাও করা হবে—এ প্রশ্নের কোনো মীমাংসা না হওয়ায় বৈঠক স্থগিত হয়েছে। সিদ্ধান্ত হয়েছে ২০ মে দেশের সব জেলায় বিক্ষোভ সমাবেশ ও মিছিল হবে। এদিকে এইচএসসি পরীক্ষা ঘনিয়ে আসছে। সামনে কোরবানির ঈদ। ভয়াবহ সাইক্লোন মোখা ধেয়ে আসছে। ১০ নম্বর মহাবিপদসংকেত উঠেছে। এরই মধ্যে খালেদা জিয়া একজন ওয়ানম্যান পার্টির নেতাকে রাতে একা ডেকে নিয়ে বললেন, আন্দোলন চালিয়ে যেতে হবে, তবে দেখতে হবে জনগণের যেন কোনো ভোগান্তি না হয়। খুবই বিচক্ষণ বার্তা। তবে নিজের দলের মহাসচিবকে নয় কেন? সবার কপালে ভাঁজ। তাহলে কি সরকার উত্খাতের আন্দোলনের বেলা শেষ হয়ে এলো? দেখা যাক কোথাকার জল কোথায় গিয়ে দাঁড়ায়।

লেখক : বিশ্লেষক ও গবেষক

শেয়ার করুন