দেশে গণতন্ত্র ও উন্নয়নের ধারা অব্যাহত রাখার জন্য সকল রাজনৈতিক দলগুলোর প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন। তিনি বলেন, ‘দেশে গণতন্ত্র ও উন্নয়নের ধারা অব্যাহত রাখতে হবে। সমস্যা থাকতেই পারে, কিন্তু আলোচনার মাধ্যমেই সমস্যার সমাধানও করা সম্ভব।’ রাষ্ট্রপতি আজ বিকালে পাবনা এডওয়ার্ড কলেজ মাঠে তাঁকে দেয়া এক গণ-সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে এই আহ্বান জানান।
রাষ্ট্রপ্রধান বলেন, সামনে জাতীয় নির্বাচন। গণতান্ত্রিক শক্তির জন্য এই নির্বাচন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। রাজনৈতিক দলগুলোর উদ্দেশে রাষ্ট্রপতি বলেন, গত ১৪ বছরে অর্জিত দেশের তুলনামূলক উন্নয়ন বিশ্লেষণ করে বিবেক বিবেচনা করেই আগামী নির্বাচনের সিদ্ধান্ত নিবেন। তিনি বলেন, সরকার পরিবর্তন করতে হলে, নির্বাচনে আসতে হবে। কোন সমস্যা থাকলেও আলোচনার মাধ্যমেই তার সমাধান করতে হবে। দেশের উন্নয়নে সবাই নিজ নিজ অবস্থান থেকে কার্যকর অবদান রাখবেন বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন।
রাষ্ট্রপ্রধান বীর মুক্তিযোদ্ধা সাহাবুদ্দিন বলেন, মহান মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে অনেক ত্যাগ-তিতিক্ষার বিনিময়ে আমরা একটি সংবিধান পেয়েছি। ১৯৭৫ সালে বঙ্গবন্ধু হত্যার পর এই সংবিধান বহুবার ক্ষতবিক্ষত হয়েছে। তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশের অসাম্প্রদায়িক চেতনাকে হত্যা করা হয়েছে। গণতন্ত্রকে হত্যা করা হয়েছে। পাকিস্তানি ধারায় সংবিধানকে প্রবর্তন করার চেষ্টা করা হয়েছে। পরবর্তীতে শেখ হাসিনা ক্ষমতায় আসার পর, সংবিধান তার জায়গায় পুনঃস্থাপিত হয়েছে।’ তিনি বলেন, পদ্মা সেতুতে কোনো দুর্নীতি হয় নাই। বিশেষ একটি মহল দুইটা পত্রিকার মাধ্যমে পদ্মা সেতু নিয়ে দুর্নীতির নিউজ করেছিল। এই নিউজের পরে বিশ্ববাংক সহ সমস্ত দাতা সংস্থাগুলো তাদের প্রতিশ্রুত টাকা তুলে নিল। দুদকের কমিশনার হিসেবে দায়িত্ব পেয়ে, আমি প্রমাণ করে দিয়েছি যে পদ্মা সেতুতে কোনো দুর্নীতি হয়নি। তিনি বলেন, ‘আমার দেওয়া প্রতিবেদনের ভিত্তিতে কানাডার আদালতে বিশ্বব্যাংকের সেই অভিযোগ মিথ্যা প্রমাণিত হয়।’
দেশের সর্বোচ্চ পদে আসীন হওয়ায় পাবনার কৃতি সন্তান বীর মুক্তিযোদ্ধা রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিনকে আনুষ্ঠানিকভাবে বরণ করতে পাবনাবাসীর এই বিশাল সংবর্ধনা অনুষ্ঠানের আয়োজন। পাবনার সর্বস্তরের মানুষ সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে যোগ দেন। জেলার বিভিন্ন সংগঠন এবং শ্রেণী ও পেশার বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গ ফুল দিয়ে রাষ্ট্রপতিকে শুভেচ্ছা জানান। রাষ্ট্রপতি এই অনুষ্ঠান আয়োজনের মাধ্যমে তাকে ভালবাসা ও সম্মান প্রদান করায়, পাবনাবাসীর প্রতি কৃতজ্ঞতা ও ধন্যবাদ জানান। রাষ্ট্রপ্রধান বলেন, ‘আমি পাবনার আলো-বাতাস, প্রকৃতি-পরিবেশ ও সাধারণ মানুষের সাথে মিলেমিশে বেড়ে উঠেছি।’ জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে পাবনার মানুষের জন্য তার সহযোগিতার কথা তুলে ধরে তিনি বলেন, রাষ্ট্রপতি হলেও- ভবিষ্যতে তাদের লোক হিসেবেই থাকতে চান তিনি। রাষ্ট্রপতির দায়িত্ব যেন যথাযথভাবে পালন করতে পারেন সেজন্য পাবনাসহ দেশবাসীর দোয়া ও সহযোগিতা কামনা করেন রাষ্ট্রপতি।
সাবেক ছাত্রনেতা এবং বীর মুক্তিযোদ্ধা সাহাবুদ্দিন বলেন, রাজনীতি করার সুবাদেই আমার আদর্শ, আমার নেতা বঙ্গবন্ধুর সাথে আমার পরিচয়। ‘দেশের রাষ্ট্রপতি হবো এটা কখনো ভাবিনি’ – উল্লেখ করে রাষ্ট্রপতি হওয়ার জন্য সৃষ্টিকর্তার প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন এবং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে বিশেষ ধন্যবাদ জানান। তিনি এসময়ে সকল সংসদ সদস্যকেও ধন্যবাদ জানান ।
রাষ্ট্রপতি বলেন, বঙ্গবন্ধুর সুযোগ্য কন্যা প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে বাংলাদেশ ইতোমধ্যে স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উন্নয়নশীল দেশের কাতারে শামিল হয়েছে। স্বাধীনতার মহান স্থপতি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ক্ষুধা ও দারিদ্র্যমুক্ত সোনার বাংলা প্রতিষ্ঠার যে স্বপ্ন দেখেছিলেন, তা পূরণে সবাইকে নিরলস প্রয়াস চালাতে হবে।
বীর মুক্তিযোদ্ধা বেবি ইসলামের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে ডেপুটি স্পিকার শামসুল হক টুকু, স্থানীয় সংসদ সদস্য গোলাম ফারুক প্রিন্স, মকবুল হোসেন, আহমেদ ফিরোজ কবির, বীর মুক্তিযোদ্ধা নুরুজ্জামান বিশ্বাস, নাদিরা ইয়াসমিন জলি, পাবনা নাগরিক সমাজের আহ্বায়ক বীর মুক্তিযোদ্ধা অঞ্জন চৌধুরী পিন্টু, পাবনা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ডক্টর হাফিজা খাতুন, পাবনা জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি রেজাউল রহিম লাল, পাবনা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. এ আবদুল আলীম, পাবনা নাগরিক সমাজের সদস্য সচিব অধ্যক্ষ শিবজিত নাগ এবং নাগরিক কমিটির সদস্য সচিব আবদুল মতিন খান বক্তব্য রাখেন।