র‌্যাপিড ক্যাশ অ্যাপে অটো ঋণের ফাঁদ, মূলহোতা মাহের গ্রেপ্তার

মত ও পথ ডেস্ক

মহিউদ্দিন মাহের। সংগৃহীত ছবি

র‍্যাপিড ক্যাশ নামক অ্যাপ ব্যবহার করে প্রতারণাকারী চক্রের মূলহোতা মহিউদ্দিন মাহেরসহ একাধিক সদস্যকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশের অ্যান্টি টেররিজম ইউনিট (এটিইউ)।

মঙ্গলবার (১৬ মে) সন্ধ্যায় রাজধানীর উত্তরার ১১ নম্বর সেক্টরের ৬ নম্বর বাসার পাঁচতলা থেকে তাদের আটক করা হয়। মাহের ছাড়া আটক বাকিদের নাম-পরিচয় তাৎক্ষণিকভাবে জানায়নি এটিইউ। এরমধ্যে ১১ নারীসহ আরও সাত তরুণকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য হেফাজতে নেওয়া হয়েছে।

রাজশাহীর বোয়ালিয়া থানায় এক ভুক্তভোগী মামলা দায়ের করেন। সেটির প্রেক্ষিতে তদন্ত করছিল এটিইউ’র সাইবার ক্রাইম উইং।

এটিইউ সূত্রে জানা গেছে, র‍্যাপিড ক্যাশ একটি অ্যান্ড্রয়েড অ্যাপ্লিকেশন। এই অ্যাপটি অ্যান্ড্রয়েড মোবাইলে ডাউনলোড করার সঙ্গে সঙ্গে মোবাইলটির সম্পূর্ণ এক্সেস নিয়ে নেয়। যার মধ্যে রয়েছে ব্যবহারকারীর সমস্ত কন্টাক্ট নম্বর, গ্যালারির তথ্য, ছবি, ভিডিও এবং অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ তথ্য। শুধু তাই নয়, বাংলাদেশে ব্যবহারযোগ্য যেকোনো মোবাইল সিমের নম্বরের মাধ্যমে অ্যাপটি রেজিস্ট্রেশন সম্পন্ন করতে হয়।

রেজিস্ট্রেশন সম্পন্ন হওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই র‍্যাপিড ক্যাশ ব্যবহারকারীকে পাঁচ শ বা এক হাজার টাকার একটি ক্ষুদ্র ঋণ প্রদান করে এবং ওই দিন হতেই ওই টাকার উপর প্রায় এক শ টাকা হারে সুদ আরোপ করে।

ঋণ প্রদানের কয়েক দিনের মধ্যেই লোন পরিশোধ করার জন্য বা কমপক্ষে সুদের টাকা পরিশোধ করার জন্য র‍্যাপিড ক্যাশ তাদের হট লাইন নম্বর (০১৯৫৬৭২৮৭৭৬ এবং অন্যান্য) এর মাধ্যমে হোয়াটসঅ্যাপে কল দেয়। কোনো গ্রাহক এই উচ্চ হারের সুদ প্রদানে অস্বীকৃতি জানালে তাকে বিভিন্নভাবে প্রতারণা বা ব্ল্যাকমেইল করা শুরু করে র‍্যাপিড ক্যাশ।

প্রতারণার মধ্যে রয়েছে ব্যবহারকারীর গুরুত্বপূর্ণ এবং গোপনীয় তথ্য জনসমক্ষে প্রকাশ। ব্যবহারকারী নিজের সামাজিক অবস্থান বিবেচনা করে যখন ঋণ এবং সুদের টাকা প্রদানে সম্মতি প্রদান করে তখন র‍্যাপিড ক্যাশ হতে নগদ বা বিকাশ এজেন্ট নম্বর প্রদান করা হয়।

এটিইউ’র এএসপি (মিডিয়া) ওয়াহিদা পারভীন জানান, ভুক্তভোগীদের তথ্যমতে জানা যায়, কেউ কেউ সম্পূর্ণ টাকা পরিশোধের পরও তাদেরকে জোর করে আরও ঋণ প্রদান করা হয় এবং ঋণের টাকা ও সুদ পরিশোধে বাধ্য করা হয়। আর এজন্য প্রয়োজনে ভয়-ভীতিও দেখানো হয়। সাইবার ক্রাইম উইং এই সংক্রান্ত একাধিক অভিযোগ পায়। অভিযোগের ভিত্তিতে সাইবার ক্রাইম উইং অনুসন্ধান শুরু করে এবং প্রথমে দুই এজেন্টকে গ্রেপ্তার করে। এজেন্ট হতে প্রাপ্ত তথ্য এবং পরবর্তী অনুসন্ধানের মাধ্যমে এই চক্রের মূলহোতা মাহেরের সন্ধান পায় এটিইউ সাইবার ক্রাইম উইং।

এটিইউ সাইবার ক্রাইম উইং এর পুলিশ সুপার ফারহানা ইয়াসমিন বলেন, অনুসন্ধানে পাওয়া যায়, মাহেরের নেতৃত্বে একটি চক্র উত্তরা ১১নং সেক্টরের ৬নং বাসার পাঁচতলায় একটি ফ্লোর ভাড়া নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে এই প্রতারণা করে আসছে। প্রাপ্ত তথ্যের ভিত্তিতে ওই বাসায় মঙ্গলবার (১৬ মে) বিকেল ৫টার দিকে অভিযান চালিয়ে চক্রের মূলহোতা মাহেরসহ একাধিক সদস্যকে গ্রেপ্তার করা হয়। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে তারা র‍্যাপিড ক্যাশ নামক অ্যাপ ব্যবহার করে লোন প্রদান এবং এর টাকা ফেরত দেওয়ায় লোককে বাধ্য করার কথা স্বীকার করেছে।

অনুসন্ধানে আরও দেখা যায়, এই গ্রুপের সদস্যরা কোনো একটি অ্যাপ বেশি দিন পরিচালনা করে না। যখনই কোনো অ্যাপ আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর নজরে আসতে পারে বলে সন্দেহ হয় তারা অ্যাপ পরিচালনা বন্ধ করে দেয় এবং নতুন নামে একই কাজের অপর একটি অ্যাপ তৈরি করে। এভাবেই তারা প্রতারণা করে আসছিল।

পুলিশ সুপার ফারহানা বলেন, আমাদের সাইবার অ্যাপে কয়েকটি অভিযোগ পাই যে, ঋণ দেওয়ার নামে ব্যক্তিগত তথ্য হ্যাক করে ব্লাকমেইল করা হয়। অভিযোগের ভিত্তিতে গত সোমবার সাতজনকে গ্রেপ্তার করা হয়। তাদের দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে ও অভিযানে গিয়ে জানা যায়, শুধু র‌্যাপিড ক্যাশ নয়, তারা ভারত ও পাকিস্তানসহ আন্তর্জাতিক কিছু অ্যাপস ব্যবহার করছে। যেসব ব্যবহার করে শুধু বাংলাদেশ নয়, ভারত-পাকিস্তানেও ঋণের নামে প্রতারণা ও অর্থ হাতিয়ে নিচ্ছে। এজন্য ব্যবহার করছে ইউপিআই। পাকিস্তান ও ভারতেও তাদের এজেন্ট রয়েছে।

আরও জানা যায়, উত্তরার ওই অফিসে তরুণ-তরুণীদের অনেককে ১৪/১৫ হাজার টাকায় কল সেন্টারে কাজ দেওয়া হয়েছে। কাজ ভালো হলে তাদেরকে পারসেন্টেজও দেওয়া হয়। কেউ না পারলে তাদেরকে বাদ দেওয়া হয়। দেখা যায়, সবাই অনর্গল বাংলাসহ হিন্দি ও উর্দুতে কথা বলতে অভ্যস্ত।

মূলহোতা মাহের সম্পর্কে এসপি ফারহানা বলেন, মাহের চীনে পড়াশুনা করেছেন। সেখানেই তিনি চাইনিজ এই অ্যাপসটি ব্যবহার করেছেন। মাহেরের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। এ ব্যাপারে বুধবার দুপুরে এটিইউ কার্যালয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে বিস্তারিত জানানো হবে।

শেয়ার করুন