শেখ হাসিনার স্বদেশ প্রত্যাবর্তন ও গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠা

সম্পাদকীয়

আজ ১৭ মে, ২০২৩। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জ্যেষ্ঠ তনয়া ও আওয়ামী লীগের সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ৪৩তম স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবস। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্টের কালো রাতে বাঙালির অবিসংবাদিত নেতা, রাষ্ট্রপিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে সপরিবারে হত্যার পর ছয় বছরের নির্বাসনজীবন কাটান তিনি। ১৯৮১ সালের আজকের এই দিনে মা-বাবা-ভাই হারিয়ে এক বিষাদগ্রস্ত হৃদয়, অশ্রুভেজা নয়ন, নিদারুণ যাতনা বুকে নিয়ে দেশে ফিরেছিলেন বঙ্গবন্ধুকন্যা।

বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডের পর স্বাধীন-সার্বভৌম বাংলাদেশে মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে ভূলুণ্ঠিত করে বাঙালি জাতির অস্তিত্বকে বিপন্ন করতে ঘাতকগোষ্ঠী যখন নানামুখী ষড়যন্ত্র শুরু করে তখন বাঙালি জাতির জীবনে জগদ্দল পাথরের মতো চেপে বসে ঘোর অমানিশার অন্ধকার। সেই প্রতিকূল পরিবেশে ১৯৮১ সালের ১৪-১৬ ফেব্রুয়ারি মতিঝিলের ইডেন হোটেলে তিন দিনব্যাপী আওয়ামী লীগের দ্বিবার্ষিক কাউন্সিলে জাতির জনকের জ্যেষ্ঠা তনয়া শেখ হাসিনাকে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সভাপতি নির্বাচন করা হয়। তিনি তখনও নির্বাসনে। কিন্তু সভাপতি পদে বৃত হওয়ার পর পরই তিনি স্বদেশে প্রত্যাবর্তনের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেন।

১৯৮১ সালের ১৭ মে এক বর্ষণমুখর দিনে স্বদেশের মাটিতে পা রাখেন বঙ্গবন্ধু কন্যা। সেদিন দেশমাতৃকা তাঁর প্রিয় সন্তানকে কোলে ফিরে পেয়ে দিচ্ছিলো আনন্দাশ্রু বিসর্জন এবং একই সাথে প্রকৃতি এই দুঃখী পিতৃমাতৃহীন কন্যার সমব্যাথী হয়ে তাঁকে বরণ করে নিচ্ছিলো কান্নার জলে। স্বদেশে ফিরে বঙ্গবন্ধুর আদর্শ ও স্বপ্ন বাস্তবায়নের দৃঢ় অঙ্গীকার, বঙ্গবন্ধু ও জাতীয় চার নেতা হত্যার বিচার, একাত্তরের যুদ্ধাপরাধীদের বিচার, স্বৈরতন্ত্রের চির অবসান ঘটিয়ে জনগণের হারানো গণতান্ত্রিক অধিকার পুনঃপ্রতিষ্ঠা, সার্বভৌম সংসদীয় পদ্ধতির শাসন ও সরকার প্রতিষ্ঠার শপথ নিয়ে আওয়ামী লীগের সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করেন শেখ হাসিনা।

আওয়ামী লীগের সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণের পর দীর্ঘ ৪২ বছরের রাজনৈতিক জীবনে শেখ হাসিনা তাঁর দৃঢ়তা ও বিচক্ষণতায় এক সময় দারিদ্র্য-দুর্ভিক্ষে জর্জরিত যে বাংলাদেশ অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখার সংগ্রাম করতো সেই বাংলাদেশ আজ বিশ্বজয়ের নতুনঅভিযাত্রায় দুর্বার গতিতে এগিয়ে চলছে। ৭৫ পরবর্তীকালে বাংলাদেশের যত অর্জন, এর সবকিছুই তাঁর নেতৃত্বে। বাংলাদেশ আজ উন্নয়নের রোলমডেল হিসেবে বিশ্ববাসীর কাছে স্বীকৃত। তাঁর সুপরিকল্পিত, দূরদর্শী ও সাহসী নেতৃত্বের কারণেই দেশবিরোধী শক্তির নানা ষড়যন্ত্র ও প্রতিবন্ধকতা অতিক্রম করে অমরা এখন মধ্যম আয়ের দেশে উন্নীত। কর্ণফুলি ট্যানেল, মেট্রোরেলসহ একের পর এক বাস্তবায়ন করা হচ্ছে মেগাপ্রকল্প। এমনকি নিজেদের অর্থায়নে নির্মাণ করা হয়েছে স্বপ্নের পদ্মা সেতু। তথ্যপ্রযুক্তিসহ শিক্ষা খাতের আধুনিকায়ন করা হচ্ছে প্রতিনিয়ত, তার মাধ্যমে নতুন প্রজন্ম নিজেদের মানবিক ও স্মার্ট নাগরিক হিসেবে গড়ে তোলার সুযোগ পাচ্ছে। ২০৪১ সালের মধ্যে একটি উন্নত ও সমৃদ্ধ স্মার্ট বাংলাদেশ উপহার প্রদানের লক্ষ্য নিয়ে তিনি এগিয়ে যাচ্ছেন। তাঁর দূরদর্শী পরিকল্পনায় স্মার্ট প্রজন্মের হাত ধরে ক্রমেই গড়ে উঠছে স্মার্ট বাংলাদেশ।

শেখ হাসিনা স্বদেশে প্রত্যাবর্তন করার কারণেই গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠা, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর খুনি, জাতীয় চার নেতার খুনি ও একাত্তরের নরঘাতক মানবতাবিরোধী যুদ্ধাপরাধীদের বিচারকার্য সম্পন্ন এবং রায় কার্যকর করা সম্ভব হয়েছে। এই বিচারকার্য সম্পন্ন করা দেশের উন্নয়নের চেয়েও অধিক গুরুত্বপূর্ণ ছিল। কেননা চ্যালেঞ্জিং এই বিচারগুলো সম্পন্ন করার মধ্য দিয়ে জাতিকে কলঙ্ক মুক্ত করার পাশাপাশি চূর্ণবিচূর্ণ করা হয়েছে বাংলাদেশ বিরোধী অপশক্তির অহমিকা। মূলতঃ তাঁর স্বদেশ প্রত্যাবর্তনের মধ্য দিয়ে প্রত্যাবর্তন হয়, মুক্তিযুদ্ধের স্বপ্ন ও চেতনার। তাঁর হাতে গড়ে উঠছে বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলা। কাজেই শেখ হাসিনা-ই বাংলাদেশ।

শেয়ার করুন