গত সপ্তাহে বঙ্গোপসাগর উপকূলে আছড়ে পড়া অতিপ্রবল ঘূর্ণিঝড় মোখার আঘাতে বাংলাদেশে তেমন ক্ষতি না হলেও তছনছ হয়ে গেছে মিয়ানমার। দেশটিতে এ পর্যন্ত ১৪৫ জনের মৃত্যুর খবর স্বীকার করেছে সামরিক সরকার। তবে প্রকৃত প্রাণহানির সংখ্যা আরও বেশি বলে ধারণা করা হচ্ছে। খবর বিবিসির।
মিয়ানমারের সামরিক জান্তা জানিয়েছে, ঘূর্ণিঝড় মোখার আঘাতে দেশটিতে মৃতদের বেশিরভাগই সংখ্যালঘু রোহিঙ্গা সম্প্রদায়ের মানুষ।
সামরিক কর্তৃপক্ষ এর আগে মোখার আঘাতে মৃতের সংখ্যা মাত্র ২১ জন বলে দাবি করেছিল। তবে তখনই স্থানীয়রা বিবিসিকে অন্তত ৪০ জনের মৃত্যুর তথ্য দিয়েছিল।
জাতিসংঘের মতে, এ অঞ্চলে চলতি শতাব্দীতে আঘাত হানা অন্যতম শক্তিশালী ঘূর্ণিঝড় ছিল মোখা। এতে অন্তত আট লাখ মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
ঘণ্টায় ২০৯ কিলোমিটার পর্যন্ত বেগে আছড়ে পড়া অতিপ্রবল এ ঝড়ে লন্ডভন্ড হয়ে গেছে মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্য। ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে সাগাইং এবং ম্যাগওয়ে অঞ্চলেও।
মিয়ানমার জান্তা শুক্রবার (১৯ মে) এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, সব মিলিয়ে ১৪৫ জন মারা গেছেন। এর মধ্যে ১১৭ জন রোহিঙ্গা, ২৪ জন স্থানীয় বাসিন্দা এবং চারজন সেনা সদস্য রয়েছেন।
সরকারি এই বিবৃতির আগেই বিভিন্ন প্রতিবেদনে হতাহতের সংখ্যা আরও বেশি হওয়ার দাবি করা হচ্ছিল। বিশেষ করে, বাস্ত্যুচুত রোহিঙ্গারা যেখানে থাকেন, সেইসব জায়গায়।
গত রোববার আঘাত হানা এ ঘূর্ণিঝড়ে মিয়ানমারে শত শত ঘরবাড়ি বিধ্বস্ত হয়েছে, গাছপালা-বিদ্যুতের খুঁটি উপড়ে গেছে, যোগাযোগ ব্যবস্থা মারাত্মক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। অসংখ্য লোক এখনো নিখোঁজ।
এর মধ্যেও স্থানীয়দের ওপর সামরিক বাহিনী হামলা চালিয়েছে বলে খবর পাওয়া গেছে। ঘূর্ণিঝড়ের আড়ালে সেনাবাহিনী গ্রামে প্রবেশ করায় উত্তর-পশ্চিম সাগাইং অঞ্চলে হাজার হাজার মানুষ বাড়িঘর ছেড়ে পালিয়েছে।
এই ঝড়ে প্রতিবেশী বাংলাদেশে কোনো প্রাণহানির খবর পাওয়া যায়নি। তবে কয়েকশ ঘরবাড়ি বিধ্বস্ত হয়েছে।
মোখার ১৫ বছর আগে মিয়ানমারে ব্যাপক ধ্বংসযজ্ঞ চালিয়েছিল এশিয়ার অন্যতম প্রাণঘাতী ঘূর্ণিঝড় নার্গিস। এর আঘাতে দেশটিতে অন্তত ১ লাখ ৪০ হাজার মানুষের মৃত্যু হয়েছিল।
এ অঞ্চলের ঘূর্ণিঝড়গুলো আটলান্টিকের হারিকেন এবং প্রশান্ত মহাসাগরীয় টাইফুনের সমতুল্য। বিজ্ঞানীরা বলছেন, জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে এই ঝড়গুলো আরও শক্তিশালী এবং বারবার হচ্ছে।