গণতন্ত্রকামী মানুষ প্রতিনিয়ত নির্যাতন নিপীড়নের শিকার হচ্ছেন উল্লেখ করে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, ক্ষমতা হারানোর ভয়ে সরকার বিএনপির জাতীয় নেতাসহ তৃণমূল পর্যায়ের নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা দিয়ে গ্রেফতার করতে এখন বেপরোয়া হয়ে উঠেছে। সোমবার (২২ মে) গণমাধ্যমে পাঠানো এক বিবৃতিতে এ অভিযোগ করেন বিএনপি মহাসচিব।
সরকারের বিরুদ্ধে কোনো আওয়াজ উঠলেই তারা বেসামাল হয়ে পড়ে উল্লেখ করে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর আরও বলেছেন, দুঃশাসন আরও বেশি ভয়াবহ রুপ লাভ করেছে। তিনি অভিযোগ করেন, গায়েবি মামলা, মিথ্যা মামলায় গ্রেফতার, শান্তিপূর্ণ যে কোনো কর্মসূচির ওপর গুলিবর্ষণ করে বিএনপির নেতাকর্মী হত্যা ও অঙ্গহানি করার এক দানবীয় নীতি বাস্তবায়ন করছে অবৈধ শাসকগোষ্ঠী।
মির্জা ফখরুল ইসলাম আরও বলেন, একদলীয় দুঃশাসনের এক শাসরুদ্ধকর অবস্থায় গণতন্ত্র এখন মৃতপ্রায়। দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি, মানুষের ক্রয়ক্ষমতা শুন্যের কাছাকাছি, জ্বালানির মূল্য বৃদ্ধির ফলে পরিবহন ভাড়াসহ জনজীবনে যে দূর্বিষহ অবস্থা বিরাজমান সেটি আড়াল করতেই সরকার আরও বেশি জুলুমের পথ বেছে নিয়েছে।
ফখরুল আরও অভিযোগ করে বলেন, ‘দলীয় চেতনায় আইন শৃঙ্খলা বাহিনীকে সাজিয়ে ‘প্রাইভেট বাহিনীর’ ন্যায় ব্যবহার করা হচ্ছে। তারা আইন শৃঙ্খলা রক্ষার কাজে লিপ্ত না থেকে বিএনপিসহ বিরোধী দলের কর্মসূচির ওপর ঝাঁপিয়ে পড়ছে। সশস্ত্র দলীয় ক্যাডার এবং সাজানো পুলিশ প্রশাসন একযোগে নব্য নাৎসী বাহিনীর ন্যায় আচরণ করছে। চিন্তা ও মত প্রকাশের স্বাধীনতাসহ বিরোধী দলের গণতান্ত্রিক অধিকারকে রক্তাক্ত পন্থায় দমন করতে দ্বিধা করছে না তারা।’
বিএনপির এই নেতা আরও অভিযোগ করেন, দুঃশাসনের নিঃশব্দ পরিবেশ সৃষ্টি করতেই ঢাকা মহানগর দক্ষিণ বিএনপির সদস্য সচিব রফিকুল আলম মজনুকে গতরাতে তার বাসা থেকে তুলে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। উপযুক্ত আদালতের গ্রেফতারি পরোয়ানা ব্যতিরেকে গ্রেফতার বা হয়রানি না করতে উচ্চ আদালতের নির্দেশনা সত্ত্বেও মজনুকে তুলে নিয়ে যাওয়া সম্পূর্ণরুপে উচ্চ আদালতের প্রতি অসম্মান জানানো বলেও উল্লেখ করেন মির্জা ফখরুল। তিনি বলেন, ক্ষমতাসীনরা আইন কানুনের কোনো তোয়াক্কা করে না। তারা রাষ্ট্রক্ষমতার জোরে একের পর এক বেআইনী কাজ করে সীমা লংঘন করে যাচ্ছে।
বিএনপির মহাসচিব বলেন, এই অগণতান্ত্রিক সরকার গণতন্ত্রের বিধিবিধান নিয়মনীতি তোয়াক্কা করে না বলেই বিএনপিসহ দেশের বিরোধী রাজনৈতিক শক্তি, বিশিষ্ট নাগরিক সমাজ এই সরকারের চরম রাজনৈতিক প্রতিহিংসার শিকার। বিরোধী সভা-সমাবেশসহ মত প্রকাশে বাধা প্রদান করেও তারা আশস্ত হতে পারছে না। তাই মজনুর মতো সংগ্রামী নেতাদেরকে গ্রেফতার করে শঙ্কামুক্ত হতে চায়।
তিনি হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে বলেন, ‘আমি সুষ্পষ্টভাবে বলতে চাই জনগণের প্রতি দমননীতি প্রয়োগ করে সরকারের ক্ষমতা আর নিরাপদ থাকবে না। রাষ্ট্রীয় অনাচার বৃদ্ধি করে আর সাধারণ মানুষকে ভয়-ভীতি দেখানো যাবে না।’
সরকারের প্রতি আহবান জানিয়ে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘গণবিরোধী জুলুমের পথ থেকে অবিলম্বে সরে আসুন, গায়েবি মামলা ও গণগ্রেফতার বন্ধ করুন, জনগণের ক্ষমতা জনগণকে ফিরিয়ে দিন। পৃথিবীতে কখনোই স্বৈরাচার বেশিদিন টিকতে পারেনি, আটককৃত নেতাদের মুক্তি দিন এবং এই মূহুর্তে পদত্যাগ করে তত্তাবধায়ক সরকারের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তর করুন।’
বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল বিবৃতিতে অবিলম্বে রফিকুল আলম মজনুর বিরুদ্ধে দায়ের করা মামলা প্রত্যাহার ও নি:শর্ত মুক্তির জোর দাবি জানান।