বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত সুনামগঞ্জের ৩ উপজেলার রাস্তা, ব্রিজ ও কালভার্ট উন্নয়নে উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। এ জন্য প্রায় ৫০ কোটি টাকা ব্যয়ের একটি প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়েছে। প্রকল্পটি বাস্তবায়ন হলে এ অঞ্চলে সহজ ও নিরবচ্ছিন্ন যোগাযোগ প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে উৎপাদিত পণ্য বাজারজাতকরণের পাশাপাশি কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হবে।
স্থানীয় সরকার বিভাগের প্রস্তাবিত প্রকল্পের ওপর সম্প্রতি পরিকল্পনা কমিশনে মূল্যায়ন কমিটির (পিইসি) সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। এ সময় প্রস্তাবের বিভিন্ন অযৌক্তিক ব্যয় ও কাজের বিষয় উঠে আসে। সভায় সভাপতিত্ব করেন পরিকল্পনা কমিশনের কৃষি, পানি সম্পদ ও পল্লী প্রতিষ্ঠান বিভাগের সদস্য একেএম ফজলুল হক এবং স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদফতরের (এলজিইডি) প্রকল্প পরিচালক সৈয়দ সফিকুল ইসলাম প্রস্তাবনার বিভিন্ন দিক তুলে ধরেন।
পিইসি সভায় প্রকল্প পরিচালক সৈয়দ সফিকুল ইসলাম ‘সুনামগঞ্জ জেলার শান্তিগঞ্জ, জগন্নাথপুর ও ছাতক উপজেলার পল্লী অবকাঠামো উন্নয়ন’ শীর্ষক প্রকল্পের বিস্তারিত তথ্য তুলে ধরে বলেন, সুনামগঞ্জ জেলার শান্তিগঞ্জ, জগন্নাথপুর ও ছাতক এই তিনটি উপজেলায় রাস্তা, ব্রিজ ও কালভার্ট উন্নয়নের ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। ২০২২ সালের উপর্যুপরি বন্যায় যোগাযোগ ব্যবস্থা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। প্রস্তাবিত প্রকল্পটি গ্রামীণ জনগণের আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখবে। প্রকল্প এলাকার সহজ এবং নিরবচ্ছিন্ন যোগাযোগ প্রতিষ্ঠা, কৃষিজাত পণ্যের বাজারজাতকরণের সুবিধা এবং গ্রামীণ জনগণের বাণিজ্যিক সুবিধা ও কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি করবে। প্রকল্পটির ব্যয় ধরা হয়েছে ৪৯ কোটি ৯৯ লাখ ৫০ হাজার টাকা।
প্রকল্পের বাস্তবায়ন মেয়াদ সম্পর্কে এলজিইডির অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী মো. আলি আখতার হোসেন বলেন, প্রকল্পটির বাস্তবায়ন মেয়াদ ২০২৩ সালের জানুয়ারি থেকে ২০২৫ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত প্রস্তাব করা হয়েছে। কিন্তু প্রকল্পটি অনুমোদনের আগেই ইতিমধ্যে চার মাস পার হয়ে গেছে বিধায় বাস্তবায়ন মেয়াদ যৌক্তিক পর্যায়ে নির্ধারণ করা প্রয়োজন। পরে প্রকল্পটির বাস্তবায়ন মেয়াদ জুলাই ২০২৩ থেকে জুন ২০২৬ পর্যন্ত তিন বছর নির্ধারণ করার বিষয়ে সভায় একমত পোষণ করা হয়।
কৃষি, পানি সম্পদ ও পল্লী প্রতিষ্ঠান বিভাগের প্রধান মো. ছায়েদুজ্জামান বলেন, প্রস্তাবিত প্রকল্পের উদ্দেশ্যসমূহ সুনির্দিষ্ট, পরিমাপযোগ্য, অর্জনযোগ্য, প্রাসঙ্গিক ও সময়াবদ্ধভাবে প্রস্তাব করা হয়নি। সে জন্য প্রকল্পের উদ্দেশ্যগুলো পুনরায় পরিষ্কার করে প্রস্তাব দিতে বলা হয়।
বাস্তবায়ন মূল্যায়ন ও পরিবীক্ষণ বিভাগের (আইএমইডি) পরিচালক মোহাম্মদ নাছিম আহমেদ বলেন, প্রকল্পের পূর্ত কাজে ৩৪০০ মিটার সড়ক প্রতিরক্ষা কাজের (প্যালাসাইডিং এবং ব্লক) প্রস্তাব করা হয়েছে। এ অংশটি প্রকল্পের লক্ষ্যমাত্রা অংশে উল্লেখ করা হয়নি। এ অঙ্গটি প্রকল্পের লক্ষ্যমাত্রা অংশে উল্লেখসহ সড়ক প্রতিরক্ষা কাজের একক কিলোমিটারে প্রতিফলন করতে বলা হয়েছে। তিনি আরও বলেন, প্রকল্পের ক্রয় পরিকল্পনায় দরপত্র আহ্বান, চুক্তি স্বাক্ষর ও চুক্তি অনুযায়ী সম্পাদনের তারিখগুলো সঠিকভাবে উল্লেখ করা প্রয়োজন। এ বিষয়ে এলজিইডির প্রতিনিধি বলেন, উল্লেখিত তারিখগুলো পুনর্গঠিত ডিপিপিতে সঠিকভাবে প্রতিফলন করা হবে।
সভায় উল্লেখ করা হয়, বিবেচ্য প্রকল্পে গাড়ি ক্রয়ের প্রস্তাব করা হয়নি। তবে পেট্রোল ও লুব্রিকেন্ট এবং মোটরযান মেরামতের প্রস্তাব করা হয়েছে। এ বিষয়ে এলজিইডির অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী মো. আলি আখতার হোসেন বলেন, প্রকল্প বাস্তবায়নের জন্য এলজিইডির গাড়ি ব্যবহার করা হবে এবং মাঠ পর্যায়ে তদারকির জন্য মাঠ পর্যায়ে কর্মকর্তাদের গাড়ির জন্য পেট্রোল ও লুব্রিকেন্ট এবং মোটরযান মেরামতের প্রস্তাব করা হয়েছে। এই ব্যয় কমিয়ে আনার বিষয়ে সবাই একমত পোষণ করেন।
সভায় আরও উল্লেখ করা হয়, প্রস্তাবিত প্রকল্প এলাকায় চলমান/ইতিমধ্যে গৃহীত কোনো কার্যক্রমের সঙ্গে প্রস্তাবিত প্রকল্পের কার্যক্রমের দ্বৈধতা যাতে না হয় সে বিষয়ে নিশ্চিতকরণসহ সংস্থা প্রধানের প্রত্যায়নপত্র পুনর্গঠিত ডিপিপিতে সংযোজন করা প্রয়োজন এবং সরকারি খাতে উন্নয়ন প্রকল্প প্রণয়ন, প্রক্রিয়াকরণ, অনুমোদন ও সংশোধন নির্দেশিকা। ২০২২ এর অনু: ১.১.৬-এর নির্দেশনা অনুযায়ী মধ্যমেয়াদি বাজেট কাঠামো (এমটিবিএফ) পুনর্গঠিত ডিপিপিতে সংযোজন করতে হবে।
প্রকল্পটিতে আরসিসি সড়ক (উপজেলা সড়ক) প্রতি কিলোমিটার ব্যয় ২ কোটি ৪৪ লাখ ৯০ কোটি টাকা এবং আরসিসি সড়ক (গ্রামীণ সড়ক) প্রতি কিলোমিটার ব্যয় ১ কোটি ৮৬ লাখ টাকা প্রস্তাবের বিষয়ে আলোচনা হয়। এই ব্যয় যৌক্তিক পর্যায়ে নিয়ে আসতে সরকারের ২০২৩ সালের রেট শিডিউল অনুযায়ী পুনর্গঠিত ডিপিপিতে ঠিক করতে হবে। এ ছাড়া প্রচার ও বিজ্ঞাপন এবং টেস্টিং খাতের প্রস্তাবিত ব্যয় অতিরিক্ত বলে সভায় উল্লেখ করা হয়। এই ব্যয় কমিয়ে আনতে সভায় সবাই একমত পোষণ করেন।