মূল্যস্ফীতির ধাক্কায় চরম মন্দায় জার্মানি

মত ও পথ ডেস্ক

লাগাতার মূল্যস্ফীতি জার্মানির অর্থনীতিতে গভীর প্রভাব ফেলেছে। এ বছরের প্রথম প্রান্তিকে প্রবৃদ্ধি সংকুচিত হওয়ায় ইউরোপের সর্ববৃহৎ অর্থনীতির দেশটিতে মন্দা দেখা দিয়েছে। তাছাড়া, ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে রাশিয়ার গ্যাস সরবরাহ বন্ধ হয়ে যাওয়াও জার্মানির অর্থনীতিতে এর ভয়াবহ প্রভাব পড়েছে বলে মত বিশ্লেষকদের।

জার্মানির পরিসংখ্যান অধিদপ্তর থেকে বলা হয়েছে, জানুয়ারি থেকে মার্চ মাস পর্যন্ত অর্থনীতি ০ দশমিক ৩ শতাংশ সংকুচিত হয়েছে। তার আগের তিন মাস অর্থাৎ, গত বছরের শেষ প্রান্তিকে দেশটির অর্থনীতি ০ দশমিক ৫ শতাংশ সংকুচিত হয়েছিল। কোনো দেশের অর্থনীতি যদি পরপর দুই প্রান্তিকে সংকুচিত হয়, তাহলে দেশটিতে মন্দা সৃষ্টি হয়েছে বলে ধরা হয়।

জার্মান আর্থিক প্রতিষ্ঠান ডেকাব্যাংকের অ্যানালিস্ট আন্দ্রেয়াস শয়ালা বলেন, মূল্যস্ফীতির চাপে জার্মান ভোক্তাদের ওপর বিশাল বোঝা হয়ে দাঁড়িয়েছে। বিষয়টি পুরো অর্থনীতিকে ভেঙে দিয়েছে।

বিশ্বে চতুর্থ বৃহত্তম অর্থনীতির দেশ জার্মানিতে চলতি বছরের এপ্রিলে মূল্যস্ফীতি ছিল ৭ দশমিক ২ শতাংশ। যা গড়ে ইউরো অঞ্চলের মধ্যে সর্বোচ্চ, কিন্তু যুক্তরাজ্যের চেয়ে কম। একই মাসে যুক্তরাজ্যে মূল্যস্ফীতি ছিল ৮ দশমিক ৭ শতাংশ।

জার্মানিতে অত্যাধিক দামের কারণে খাবার, পোশাক ও আসবাবপত্রের মতো খাতে পারিবারিক ব্যয় কমেছে। অন্যদিকে, জ্বালানির উচ্চমূল্যের কারণে ব্যবসা ও শিল্পোৎপাদনে নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে।

দেশটির ফেডারেল স্ট্যাটিসটিক্স এজেন্সি ‘ডিস্ট্যাটিস’র এক বিবৃতিতে আরও বলা হয়েছে, দিনের পর দিন উচ্চ মূল্যস্ফীতি অব্যাহত থাকায়, বছরের শুরুতেই তা জার্মান অর্থনীতির ওপর বোঝা হয়ে চেপে বসেছিল। এখন তা ক্রমেই ঘনীভূত হচ্ছে।

তবে এর আগে ডিস্ট্যাটিস বলেছিল, জার্মানি মন্দা এড়িয়ে যেতে পারবে। কিন্তু সংশোধিত পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, আগের ত্রৈমাসিকের তুলনায় এ ত্রৈমাসিকে পারিবারিক ব্যয় ১ দশমিক ২ শতাংশ কমে গেছে।

জার্মান সরকারের ব্যয়ও কমেছে ৪ দশমিক ৯ শতাংশ কমেছে। বৈদ্যুতিক ও হাইব্রিড গাড়ির জন্য সরকারি অনুদান ফিরিয়ে আনার পর গাড়ি বিক্রিও কমে গেছে। যদিও রাশিয়ার জ্বালানির উপর জার্মানির অতিনির্ভরশীলতার কারণে কেউ কেউ আরও ভয়াবহ মন্দা হতে পারে বলে পূর্বাভাস দিয়েছিল।

বিশ্লেষকরা বলছেন, পূর্বানুমানের তুলনায় মন্দার তীব্রতা কম হওয়ার পেছনে অপেক্ষাকৃত কম শীতল শীতকাল ও কোভিডসংক্রান্ত বিধিনিষেধ কাটিয়ে চীনের অর্থনীতি পুনরায় চালু হওয়া ভূমিকা রেখেছে। চীনের সহায়তার কারণেই জার্মানিতে জ্বালানির উচ্চমূল্যের নেতিবাচক প্রভাব কম পড়েছে।

এদিকে, জার্মানিতে বেসরকারি খাতে বিনিয়োগ বেড়েছে, বেড়েছে রপ্তানিও। কিন্তু এগুলো মন্দায় পড়ার হাত থেকে দেশটিকে বাঁচাতে পারেনি। এলবিবিডব্লিউ ব্যাংকের অ্যানালিস্ট ইয়েন্স-অলিভার নিকলাশ বলেন, প্রাথমিক সূচকগুলো এ বছরের দ্বিতীয় প্রান্তিকেও সবকিছু দুর্বল হয়ে পড়বে বলে ইঙ্গিত দিয়েছে।

তবে দেশটির কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে বলা হচ্ছে, এ বছরের এপ্রিল থেকে জুন মাসের মধ্যে জার্মানির অর্থনীতি প্রবৃদ্ধির দিকে যাবে। তবে আইএমএফ তাদের পূর্বানুমানে বলেছে, বিশ্বের শক্তিশালী অর্থনীতির দেশগুলোর মধ্যে জার্মানির অর্থনীতি সবচেয়ে দুর্বল থাকবে ও এবছর তা ০ দশমিক ১ শতাংশ সংকুচিত হবে।

সূত্র: সিএনএন বিজনেস

শেয়ার করুন