টানা তৃতীয় মেয়াদে তুরস্কের প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হয়েছেন রিসেপ তাইয়্যেপ এরদোয়ান। প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী কেমাল কিলিচদারগলুর সঙ্গে হাড্ডাহাড্ডি লড়াইয়ে জয় ছিনিয়ে নিয়েছেন দেশটির বর্তমান প্রেসিডেন্ট। নির্বাচনে বর্তমান ক্ষমতাসীন দল জাস্টিস অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট পার্টির (একেপি) নেতা এরদোয়ান ৫২ দশমিক ১২ শতাংশ ভোট পেয়ে বিজয়ী হয়েছেন। অন্যদিকে প্রধান বিরোধীদল রিপাবলিকান পিপলস পার্টির (সিএইচপি) কেমাল পেয়েছেন ৪৭ দশমিক ৮৮ শতাংশ ভোট। তুরস্কের রাষ্ট্রীয় বার্তা সংস্থা আনাদোলুর বরাত দিয়ে এ খবর প্রকাশ করেছে আল জাজিরা।
রোববার (২৮ মে) বাংলাদেশ সময় দিনগত রাত ১১টার পর ডেইলি সাবহার লাইভ প্রতিবেদনে দেখানো হয়, দেশটিতে মোট ভোটার ৬ কোটি ৪১ লাখ ৯৭ হাজার ৪১৯ জন। এরমধ্যে ভোট দিয়েছেন ৫ কোটি ২৪ লাখ ৭১ হাজার ২৯ জন। যেখানে ভোটার উপস্থিতির হার ৮৪ দশমিক ৮৮ শতাংশ। ৫ কোটি ১৮ লাখ ৮ হাজার ৬৯০টি ভোট বৈধ এবং ৬ লাখ ৬২ হাজার ২৩৯টি ভোট অবৈধ বলে গণ্য করা হয়েছে।
প্রথম ধাপের ভোটে ফল না আসায় তুরস্কের স্থানীয় সময় রোববার সকাল ৮টায় দ্বিতীয় ধাপের ভোটগ্রহণ শুরু হয়ে চলে বিকেল ৫টা পর্যন্ত (বাংলাদেশ সময় বেলা ১১টা থেকে রাত ৮টা)। এরপর শুরু হয় ভোট গণনা৷ সন্ধ্যার পর থেকে কেন্দ্রগুলোর প্রাথমিক ফলাফল আসতে থাকে।
এদিন ইস্তাম্বুলে ভোট এরদোয়ান ও আঙ্কারায় ভোট দেন কেমাল কিলিচদারগলু। ইস্তাম্বুলে এরদোয়ানের সমর্থকরা তৃতীয় মেয়াদে তার জয় নিয়ে আগে থেকেই আত্মবিশ্বাসের কথা জানান।
এদিকে প্রেসিডেন্ট হিসেবে পুনর্নির্বাচিত হওয়ায় বিশ্বনেতারা এরদোয়ানকে অভিনন্দন জানাতে শুরু করেছেন। কাতারের আমির তামিম বিন হামাদ এক টুইটে লিখেছেন- ‘প্রিয় ভাই আমার রিসেপ তাইয়্যেপ এরদোয়ান, আপনার বিজয়ে অভিনন্দন। নতুন মেয়াদে আপনার সফলতা কামনা করছি।’
অন্য এক টুইটে হাঙ্গেরির প্রধানমন্ত্রী অরবান এরদোয়ানকে অভিনন্দন জানিয়েছেন।
গত ১৪ মে অনষ্ঠিত প্রথম দফার ভোটে তুরস্কের বর্তমান প্রেসিডেন্ট এরদোয়ান এগিয়ে থাকলেও নির্বাচিত হতে পারেননি। দেশটির নির্বাচনের নিয়ম অনুযায়ী, প্রেসিডেন্টকে ৫০ শতাংশ সমর্থন পেতে হয়৷ প্রথম দফার নির্বাচনে এরদোয়ান পেয়েছিলেন ৪৯ দশমিক ৫২ শতাংশ ভোট৷ যেখানে তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দী কেমাল পান ৪৪ দশমিক ৮৮ শতাংশ। ফলে দেশটির নিয়ম অনুযায়ী দ্বিতীয় দফায় প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের ভোটগ্রহণ হয়।
প্রথম দফায় পাঁচ দশমিক ২০ ভাগ ভোট পেয়ে তৃতীয় স্থানে ছিলেন সিনান ওয়ান৷ তবে গত ২২ মে এক সংবাদ সম্মেলনে দ্বিতীয় দফার ভোটে এরদোয়ানকে সমর্থন দেওয়ার ঘোষণা দেন তিনি।
এর আগে তুরস্কে ৯ বছর প্রেসিডেন্ট এবং ১১ বছর প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন এরদোয়ান। এরদোয়ান ২০১৪ সাল থেকে তুরস্কের প্রেসিডেন্ট পদে দায়িত্ব পালন করছেন। তিনি ২০০৩ থেকে ২০১৪ সাল পর্যন্ত দেশটির প্রধানমন্ত্রী ছিলেন। ১৯৯৪ থেকে ১৯৯৮ সময়কালে ইস্তাম্বুলের মেয়র ছিলেন।
এরদোয়ানের নেতৃত্বে ধীরে ধীরে কর্তৃত্ববাদী শাসনের দিকে অগ্রসর হয় তুরস্ক। তবে এরই মধ্যে দেশটি ভয়াবহ অর্থনৈতিক সংকটের মুখোমুখি হয়েছে। দেশজুড়ে মূল্যস্ফীতি অতীতের সব রেকর্ড ছাড়িয়ে গেছে।
এছাড়াও মাত্র তিন মাস আগে তুরস্কে আঘাত হানা স্মরণকালের ভয়াবহ ভূমিকম্পে অর্ধলাখের বেশি মানুষের প্রাণহানির ঘটনা এরদোয়ান সরকারকে নতুন চ্যালেঞ্জের মুখে ঠেলে দেয়। ভূমিকম্প পরবর্তী উদ্ধার ও ত্রাণ তৎপরতায় রাষ্ট্রের ব্যর্থতা নিয়ে দেশ-বিদেশে সমালোচনার ঝড় ওঠে। তবে সব বাধাকে পাশ কাটিয়ে আরও একবার দেশের জনগণের সমর্থন আদায় করে নিলেন এরদোয়ান।