ইউক্রেনের রাজধানী কিয়েভে আবারও বড় ধরনের বিমান হামলা চালিয়েছে রাশিয়া। মঙ্গলবার (৩০ মে) ভোরে নতুন করে এই হামলা চালায় রুশ সামরিক বাহিনী। ইউক্রেনের বিমান প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা রুশ এই হামলা ঠেকাতে তৎপর রয়েছে বলে কর্মকর্তারা জানিয়েছেন।
চলতি মাসে কিয়েভে রাশিয়ার এটা ১৭তম বিমান হামলা। মঙ্গলবার এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে বার্তাসংস্থা রয়টার্স।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, রাশিয়া মঙ্গলবার ভোরে কিয়েভে নতুন করে ‘বিশাল’ আক্রমণ শুরু করেছে এবং ইউক্রেনীয় বিমান প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা এই হামলা ঠেকাতে তৎপর রয়েছে বলে শহরের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন। অন্যদিকে ইউক্রেনের অন্যান্য বেশ কয়েকটি অঞ্চলে বিমান হামলার সাইরেন বাজানো হয়েছে।
কিয়েভের মেয়র ভিটালি ক্লিটসকো মেসেজিং অ্যাপ টেলিগ্রামে বলেছেন, ‘ব্যাপক আক্রমণ হচ্ছে! কেউ নিরাপদ আশ্রয় ত্যাগ করবেন না।’
কিয়েভের সামরিক প্রশাসনের কর্মকর্তারা বলেছেন, বিমান প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা হামলা প্রতিহত করছে। তবে রুশ মিসাইল বা ড্রোনের ধ্বংসাবশেষ রাজধানীর ঐতিহাসিক পোডিল এবং পেচেরস্কি মহল্লাসহ বেশ কয়েকটি এলাকায় আঘাত হেনেছে।
মেয়র ক্লিটসকো বলেছেন, দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলীয় হোলোসিভস্কি এলাকায় আহত হওয়ার পর ২৭ বছর বয়সী এক নারীকে হাসপাতালে নেওয়া হয়েছে।
ক্লিটসকো আরও বলেছেন, রাশিয়ার হামলার পর ধ্বংসাবশেষ পড়ে আগুন লেগে যাওয়ায় মঙ্গলবার ভোরে কিয়েভের সুউচ্চ অ্যাপার্টমেন্ট ভবনের বাসিন্দাদের সরিয়ে নেওয়া হচ্ছে। প্রাথমিক তথ্য অনুসারে, একজন আহত হয়েছেন বলে ক্লিটসকো বলেছেন।
কিয়েভের সামরিক প্রশাসনের কর্মকর্তারা তাদের টেলিগ্রাম চ্যানেলে একটি ছবি পোস্ট করেছেন, যাতে একটি বহুতল অ্যাপার্টমেন্ট বিল্ডিংয়ের ওপরের তলায় আগুন জ্বলতে দেখা যাচ্ছে। শহরের রাষ্ট্রীয় প্রশাসন টেলিগ্রামে বলেছে, বেশ কয়েকটি অ্যাপার্টমেন্টের জানালা-দরজা ভেঙে গেছে।
রয়টার্স অবশ্য স্বাধীনভাবে এসব প্রতিবেদন যাচাই করতে সক্ষম হয়নি।
রয়টার্স বলছে, মঙ্গলবার ভোরে হওয়া এই হামলা চলতি মাসে কিয়েভে রাশিয়ার ১৭তম আক্রমণ। এছাড়া এ নিয়ে পরপর তৃতীয় দিনের মতো রাতের আঁধারে একই তীব্রতা নিয়ে কিয়েভে হামলা চালাল মস্কো। এর আগে সোমবার ইউক্রেনের এই রাজধানী শহরে দুই দফায় হামলা চালায় রাশিয়া।
সোমবারের হামলায় রাশিয়া ইরানের তৈরি শাহেদ ড্রোন এবং ক্রুজ ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবহার করে বলে কিয়েভ শহরের সামরিক প্রশাসন জানিয়েছে। শহরের সামরিক প্রশাসনের প্রধান সের্হি পপকো টেলিগ্রামে বলেছিলেন, ক্রমাগত এই আক্রমণের মাধ্যমে, শত্রুরা বেসামরিক জনগণকে গভীর মানসিক উত্তেজনার মধ্যে রাখতে চায়।
এর আগে রোববার রাতের আঁধারে কিয়েভে হামলা চালিয়েছিল রাশিয়া। ওই হামলাকে যুদ্ধ শুরুর পর থেকে কিয়েভে রাশিয়ার সবচেয়ে বড় ড্রোন হামলা বলে মনে করা হচ্ছে। ব্যাপক ওই হামলায় একজন নিহত ও আরও কয়েকজন আহত হন। এছাড়া একইদিন কিয়েভের ওপর ৩৬টি ড্রোন ভূপাতিত করা হয় বলেও দাবি করে ইউক্রেনীয় কর্তৃপক্ষ।
রাশিয়া সম্প্রতি কিয়েভের ওপর আক্রমণ ব্যাপকভাবে বাড়িয়েছে। সাম্প্রতিক এসব হামলায় রাশিয়া তথাকথিত কামিকাজে ড্রোনের পাশাপাশি ক্রুজ এবং ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্রও ব্যবহার করছে।
বিশ্লেষকরা বলছেন, কিয়েভের দীর্ঘ-প্রত্যাশিত পাল্টা আক্রমণের আগে ইউক্রেনের বিমান প্রতিরক্ষা ব্যবস্থাকে ধ্বংস ও ক্ষতিগ্রস্ত করতে চাইছে রুশ সামরিক বাহিনী।
অবশ্য ইউক্রেন গত কয়েক মাস ধরে পাল্টা আক্রমণের পরিকল্পনা করছে। তবে সেই আক্রমণ শুরুর আগে সৈন্যদের প্রশিক্ষণ এবং পশ্চিমা মিত্রদের কাছ থেকে সামরিক সরঞ্জাম গ্রহণের জন্য যতটা সম্ভব বেশি সময় নিচ্ছে ইউক্রেন।