সুইডেনের ন্যাটো-স্বপ্ন নিয়ে এরদোয়ানকে ফোন বাইডেনের

মত ও পথ ডেস্ক

ন্যাটো
ছবি : ইন্টারনেট

যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বাধীন সামরিক জোট ন্যাটোতে সুইডেনের অন্তর্ভুক্তি নিয়ে তুরস্কের প্রেসিডেন্ট তাইয়্যেপ এরদোয়ানের সঙ্গে ফোনে কথা বলেছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন। সেখানে অত্যাধুনিক এফ-১৬ যুদ্ধবিমান কেনার ইস্যুটি সামনে আনেন এরদোয়ান।

জবাবে সুইডেনের ন্যাটোতে যোগদানের বিষয়ে তুরস্কের আপত্তি প্রত্যাহারের দাবি জানিয়েছেন বাইডেন। মঙ্গলবার (৩০ মে) এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে বার্তাসংস্থা রয়টার্স।

universel cardiac hospital

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, তুরস্কের প্রেসিডেন্ট এরদোয়ান সোমবার এক ফোন কলে যুক্তরাষ্ট্রের কাছ থেকে এফ-১৬ যুদ্ধবিমান কেনার বিষয়ে আঙ্কারার ইচ্ছার পুনরাবৃত্তি করেছেন বলে জানিয়েছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন।

তবে বাইডেন তুর্কি প্রেসিডেন্টকে বলেছেন, ওয়াশিংটন চায় আঙ্কারা সুইডেনের ন্যাটোতে যোগদানের বিষয়ে তার আপত্তি প্রত্যাহার করুক। গত রোববার তুরস্কের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে জয়লাভের জন্য এরদোয়ানকে অভিনন্দন জানাতে বাইডেন ফোন করলে এই মতবিনিময় হয়।

ডেলাওয়্যারের উদ্দেশে হোয়াইট হাউস ত্যাগ করার আগে প্রেসিডেন্ট বাইডেন সাংবাদিকদের বলেন, ‘আমি প্রেসিডেন্ট এরদোয়ানের সাথে কথা বলেছি। (নির্বাচনে জয়লাভ করায়) আমি তাকে অভিনন্দন জানিয়েছি। তিনি এফ-১৬ যুদ্ধবিমানের বিষয়ে কিছু কাজ করতে চান। আমি তাকে বলেছি, আমরা সুইডেনের সাথে একটি চুক্তি চাই, তাই আসুন এটি করা যাক। এবং তাই আমরা একজন অন্যজনের সাথে আবার যোগাযোগ করব।’

সুইডেনের ন্যাটো সদস্যপদ নিয়ে প্রেসিডেন্ট এরদোয়ানের কাছ থেকে কোনও পরিবর্তন আশা করছেন কিনা জানতে চাইলে বাইডেন বলেন: ‘আমি তার কাছে বিষয়টি তুলে ধরেছি। আমরা আগামী সপ্তাহে এ বিষয়ে আরও কথা বলতে যাচ্ছি।’

গত বছরের ফেব্রুয়ারিতে ইউক্রেনে রাশিয়ার আগ্রাসন ফিনল্যান্ড ও তার প্রতিবেশী সুইডেনকে ন্যাটোর সদস্যপদ পাওয়ার জন্য আবেদন করতে বাধ্য করে। এর মধ্য দিয়ে গত কয়েক দশক ধরে সামরিক এই জোট থেকে দূরে থাকার নীতি পরিত্যাগ করে দেশ দু’টি।

ন্যাটোতে ফিনল্যান্ডের সদস্যপদ পাওয়ার পথে শেষ বাধা ছিল তুরস্ক। কিন্তু গত মার্চের শেষের দিকে তুরস্কের সংসদ হেলসিঙ্কির আবেদন অনুমোদনের পক্ষে ভোট দেয়। তবে সুইডেনের ন্যাটোতে যোগদানের আবেদনে তুরস্কের আপত্তি এখনও বহাল রয়েছে।

মূলত নতুন কোনও দেশ ন্যাটোর সদস্য হতে চাইলে বর্তমান সদস্য দেশগুলোর প্রত্যেক দেশকে এর অনুমোদন দিতে হবে। বাধা কাটিয়ে ফিনল্যান্ডের কপাল খুললেও তুরস্ক ও হাঙ্গেরি এখনও সুইডেনের আবেদন অনুমোদন করেনি।

অন্যদিকে  যুক্তরাষ্ট্র থেকে ২০ বিলিয়ন ডলার মূল্যের এফ-১৬ যুদ্ধবিমান এবং প্রায় ৮০টি আধুনিকীকরণ সরঞ্জাম কিনতে চেয়েছে তুরস্ক। কিন্তু ন্যাটোর আকার বৃদ্ধিতে বাধা, মানবাধিকার রেকর্ড এবং তুরস্কের সিরিয়া নীতির কারণে মার্কিন কংগ্রেসের আপত্তির অজুহাতে আঙ্কারার কাছে এই বিক্রয় কার্যক্রম স্থগিত রয়েছে।

যদিও বাইডেন প্রশাসন বারবারই বলেছে, তারা তুরস্কের কাছে এই যুদ্ধবিমান ও অন্যান্য সরঞ্জাম বিক্রয়কে সমর্থন করে।

বিষয়টি সম্পর্কে জানেন এমন একটি সূত্র জানিয়েছে, ন্যাটোতে যোগ দেওয়ার বিষয়ে আঙ্কারা সুইডেনকে সবুজ সংকেত না দিলে মার্কিন কংগ্রেসে এফ-১৬ বিক্রয় চুক্তি অনুমোদন করা কঠিন হবে বলে যুক্তরাষ্ট্র আগেই তুরস্ককে জানিয়ে দিয়েছে।

তুরস্ক গত মার্চের শেষের দিকে ফিনল্যান্ডের ন্যাটোতে যোগদানের অনুমোদন দিলেও সুইডেনের বিষয়ে আপত্তি অব্যাহত রেখেছে। তুরস্ক বলেছে, স্টকহোম জঙ্গি গোষ্ঠীর সদস্যদের আশ্রয় দিচ্ছে। এছাড়া হাঙ্গেরি এখনও সুইডেনের বিড অনুমোদন করেনি।

উল্লেখ্য, পবিত্র কোরআন পোড়ানোর ঘটনার আগে থেকেই সুইডেনের সঙ্গে তুরস্কের বিবাদ ছিল। ২০১৬ সালে তুরস্কে ব্যর্থ সামরিক অভ্যুত্থান চেষ্টা চালায় সেনাবাহিনী ও দুষ্কৃতকারী চক্র। অভ্যুত্থান ব্যর্থ হওয়ার পর ওই চক্রের অনেকে সুইডেনে পালিয়ে যান।

তুরস্ক সুইডেনের কাছে ওই দুষ্কৃতকারীদের দীর্ঘদিন ধরে ফেরত চেয়ে আসছে। এছাড়া কিছু কুর্দি সন্ত্রাসীও সুইডেনে বসবাস করেন। তাদেরও যেন ফেরত পাঠানো হয় এ দাবি করে আসছে আঙ্কারা।

শেয়ার করুন