ডেঙ্গুর চোখ রাঙানি থামছে না, আক্রান্ত-মৃত্যুর রেকর্ড ভাঙার শঙ্কা

মত ও পথ ডেস্ক

ডেঙ্গু
ফাইল ছবি

দুই বছর আগে ২০২১ সালের মে মাসে সারাদেশে ডেঙ্গু রোগী শনাক্ত হয়েছিল মাত্র ৪৩ জন। গত বছরের মে মাসে এ সংখ্যা ছিল ১৬৩। এই বছরের মে মাসে রোগীর সংখ্যা ১ হাজার ৩৬। সরকারি পরিসংখ্যানই বলে দিচ্ছে, কতটা আগ্রাসী চেহারায় রয়েছে এবারের ডেঙ্গু। আতঙ্কের বিষয়– গত বছরের চেয়ে এবার ছয় গুণ গতিতে বাড়ছে ডেঙ্গু রোগী। এতে করে অতীতের আক্রান্ত-মৃত্যুর রেকর্ড ভাঙার শঙ্কা দেখা দিয়েছে।

জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এ বছর এডিস মশার লার্ভার ঘনত্ব বেশি। মে মাসের শুরুতে বৃষ্টি হওয়ায় জ্যামিতিক হারে রোগী বাড়ছে। ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে ঝুঁকিপূর্ণ এলাকায় উড়ন্ত এডিস মশা নিধনের কর্মসূচি হাতে নেওয়া জরুরি বলে মনে করছেন তারা।

এ পরিস্থিতে ডেঙ্গুর বিস্তার নিয়ন্ত্রণে সব ধরনের প্রস্তুতি নেওয়ার নির্দেশনা দিয়েছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। তবে অধিকাংশ হাসপাতালে রোগীর চিকিৎসায় রয়ে গেছে অব্যবস্থাপনা। এখনও অনেক হাসপাতালে প্রস্তুতিই নেওয়া হয়নি। স্বাস্থ্য অধিদপ্তর ডেঙ্গু আক্রান্ত সব রোগীকে হাসপাতালের শয্যায় মশারির ব্যবস্থা রাখার নির্দেশ দিলেও চিকিৎসাধীন ৯০ শতাংশ রোগী থাকছেন মশারি ছাড়াই। এতে হাসপাতালের অন্য রোগীর মধ্যে ছড়াচ্ছে ডেঙ্গু। এছাড়া সব হাসপাতালে ডেঙ্গুর জন্য আলাদা ইউনিটও করা হয়নি।

চিকিৎসকরা বলছেন, ডেঙ্গু আক্রান্তদের হঠাৎ শারীরিক অবস্থার অবনতি হচ্ছে। দ্রুতই হাসপাতালে নিতে হচ্ছে, গড়ে হাসপাতালে থাকতে হচ্ছে ৫ থেকে ৬ দিন। তবে হাসপাতালে গত বছরের মতো পরিস্থিতি এখনও তৈরি হয়নি। এদিকে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম বেড়ে যাওয়ার প্রেক্ষাপটে ডেঙ্গু চিকিৎসার বাড়তি খরচ মেটাতে বেকায়দায় পড়ছেন নিম্ন আয়ের অনেক মানুষ।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্য বলছে, এ বছর (গতকাল পর্যন্ত) ২ হাজার ২২ জন ডেঙ্গু রোগী শনাক্ত হয়েছে। এরমধ্যে মে মাসেই ১০৩৬ জন। জানুয়ারি থেকে এপ্রিল পর্যন্ত রোগী শনাক্ত হয়েছিল ৯৮৬ জন। সে হিসাবে গত চার মাসের চেয়ে মে মাসেই আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা বেশি। সবচেয়ে বেশি সংক্রমণ দেখা গেছে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন (ডিএসসিসি) এলাকার যাত্রাবাড়ীতে এবং রাজধানীর বাইরে কক্সবাজারের রোহিঙ্গা ক্যাম্পে।

রোগী ছয় গুণ

২০২১ সালের ফেব্রুয়ারিতে সারাদেশে ৯ জন রোগী শনাক্ত হয়েছিল। গত বছরের ফেব্রুয়ারিতে এ সংখ্যা ছিল ২০ জন। এই ফেব্রুয়ারিতে রোগী বেড়ে ১৬৬ জনে দাঁড়ায়। মার্চেও একই গতিতে বেড়েছে ডেঙ্গু। ২০২১ সালের মার্চে ১৩ জন রোগী শনাক্ত হয়েছিল। গত বছর মার্চে ২০ জন। এ বছরের মার্চে রোগী বেড়ে হয় ১১১ জন। ২০২১ সালের এপ্রিলে মাত্র ৩ জন রোগী শনাক্ত হয়। গত বছর শনাক্ত হয়ছিল ২৩ জন। এই এপ্রিলে রোগী ছিল ১৪৩ জন। ২০২১ সালের মে মাসে ডেঙ্গু নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিল ৪৩ জন। গত বছর ছিল ১৬৩ জন। গত মে মাসে রোগী হাজার ছাড়িয়েছে। মে মাসে ডেঙ্গুতে দু’জনের মৃত্যু হয়। সব মিলিয়ে বছরের প্রথম পাঁচ মাসে মারা গেছেন ১৩ জন। ২০২২ সালে মারা গিয়েছিল ২৮১ জন, যা ২০ বছরের মধ্যে রেকর্ড মৃত্যু।

শেয়ার করুন