২০২৩-২৪ অর্থবছরের জন্য প্রস্তাবিত বাজেটে বৃহত্তর চট্টগ্রামের ৫৫ প্রকল্পে বরাদ্দ রাখা হয়েছে ২৭ হাজার ১৭৩ কোটি ১০ লাখ টাকা। বাজেটে মাতারবাড়ি কোল পাওয়ার প্ল্যান্ট, মাতারবাড়ি গভীর সমুদ্র বন্দর, দোহাজারী-গুনুদুম রেললাইন ও ওয়াসার পয়োনিষ্কাশন প্রকল্পে বেশি বরাদ্দ রাখা হয়েছে।
বৃহস্পতিবার (১ জুন) জাতীয় সংসদে প্রস্তাবিত ২০২৩-২৪ অর্থবছরের বাজেট উত্থাপন করেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। ‘উন্নয়নের অভিযাত্রার দেড় দশক পেরিয়ে স্মার্ট বাংলাদেশের অগ্রযাত্রা’ শিরোনামে এ বাজেটের আকার নির্ধারণ করা হয় ৭ লাখ ৬১ হাজার ৭৮৫ কোটি টাকা।
বাংলাদেশের অর্থনৈতিক উন্নয়ন ও সমৃদ্ধিতে চট্টগ্রামের অবদান সর্বাগ্রে। চট্টগ্রাম বন্দর, পর্যটন-শহর কক্সবাজার, এশিয়ান করিডোরের কারণে চট্টগ্রামের আলাদা কদর রয়েছে। তাছাড়া মাতারবাড়ি গভীর সমুদ্র বন্দর, পাওয়ার হাব, মিরসরাই অর্থনৈতিক জোনের কারণেও চট্টগ্রামকে গুরুত্ব দিতে হচ্ছে। ঘোষিত ২০২৩-২৪ অর্থবছরের বাজেটেও তার প্রতিফলন ঘটেছে।
চট্টগ্রামের জন্য সবচেয়ে বেশি বিদ্যুৎ জ্বালানি ও খনিজসম্পদ মন্ত্রণালয়ের অধীনে ৭ প্রকল্পে ১০ হাজার ৬০২ কোটি ৮১ লাখ টাকার বরাদ্দ রাখা হয়েছে। এর মধ্যে বিদ্যুৎ জ্বালানি ও খনিজসম্পদ বিভাগের আওতাধীন বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশনের ইনস্টলেশন অব সিঙ্গেল পয়েন্ট মুরিং (এসপিএম) উইথ ডাবল পাইপলাইপ প্রকল্পে ১০০ কোটি টাকা, বিদ্যুৎ বিভাগের অধীনে বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের (পিডিবি) বিদ্যুৎ বিতরণ ব্যবস্থার উন্নয়ন চট্টগ্রাম জোন-দ্বিতীয় পর্যায় প্রকল্পে ২০৫ কোটি টাকা, হাতিয়া দ্বীপ, নিঝুম দ্বীপ ও কুতুবদিয়া দ্বীপ শতভাগ নির্ভরযোগ্য ও টেকসই বিদ্যুতায়ন প্রকল্পে ৪৫ কোটি টাকা, কোল পাওয়ার জেনারেশন কোম্পানি বাংলাদেশ লিমিটেডের (সিপিজিসিবিএল) মাতারবাড়ি ২*৬০০ মেগাওয়াট আল্ট্রা সুপার ক্রিটিক্যাল কোল ফায়ার্ড পাওয়ার প্রজেক্টে ৮৯৪৭ কোটি ৪৯ লাখ টাকা, পাওয়ার গ্রিড কোম্পানি অব বাংলাদেশ লিমিটেডের (পিজিসিবিএল) মদুনাঘাট-ভুলতা ৭৮৫ কেভি সঞ্চালন লাইন প্রকল্পের সম্ভাব্যতা যাচাইসহ কারিগরি সহায়তা প্রকল্পে ২১০ কোটি টাকা, ঢাকা-চট্টগ্রাম মেইন পাওয়ার গ্রিড স্ট্রেনদেনিং প্রকল্পে ৩০৫ কোটি ৩২ লাখ টাকা, চট্টগ্রাম অঞ্চলের বিদ্যুৎ সঞ্চালন ব্যবস্থার সম্প্রসারণ ও শক্তিশালীকরণ প্রকল্পে ৭৯০ কোটি টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছে।
দ্বিতীয় সর্বোচ্চ বরাদ্দ রাখা হয়েছে নৌ পরিবহন মন্ত্রণালয়ের তিন প্রকল্পে। এ তিন প্রকল্পে বরাদ্দ রয়েছে ৬ হাজার ২৩৯ কোটি ২৫ লাখ টাকা।। এরমধ্যে চট্টগ্রামের মিরসরাই ও সন্দ্বীপ, কক্সবাজারের সোনাদিয়া দ্বীপ ও টেকনাফ (সারবাং ও জালিয়ার দ্বীপ) অংশের জেটিসহ আনুষঙ্গিক স্থাপনাদি নির্মাণ প্রকল্পে ১৮৭৫ কোটি ২৫ লাখ টাকা, মাতারবাড়ি বন্দর উন্নয়ন প্রকল্প (চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ অংশ) ২৬৭৬ কোটি ১০ লাখ টাকা, মাতারবাড়ি বন্দর উন্নয়ন প্রকল্প (সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তর অংশ) ১৬৮৭ কোটি ৯০ লাখ টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছে।
তৃতীয় সর্বোচ্চ স্থানীয় সরকার পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের ১২ প্রকল্পে বরাদ্দ রাখা হয়েছে ৩২৬৮ কোটি ৫৯ লাখ টাকা। এরমধ্যে স্থানীয় সরকার বিভাগের আওতাধীন চট্টগ্রাম ওয়াসার অধীনে ভান্ডালজুড়ি পানি পরিশোধন প্রকল্পে ৩৪৮ কোটি ৯১ লাখ টাকা, চট্টগ্রাম মহানগরীর পয়োনিষ্কাশন ব্যবস্থা স্থাপন প্রকল্পে ১৩৪৯ কোটি ৯৯ লাখ টাকা, চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের অধীনে বহদ্দারহাট বারইপাড়া থেকে কর্ণফুলী নদী পর্যন্ত খালখনন প্রকল্পে ১০০ কোটি টাকা, চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের বিভিন্ন ওয়ার্ডের সড়ক নেটওয়ার্ক উন্নয়ন ও বাস/ট্রাক টার্মিনাল নির্মাণ প্রকল্পে ৮৫ কোটি টাকা, চট্টগ্রাম সিটি করপোশনের আওতাধীন পরিচ্ছন্নকর্মী নিবাস নির্মাণ প্রকল্পে ৬০ কোটি টাকা, মডার্নাইজেশন অব সিটি স্ট্রিট লাইট সিস্টেম প্রকল্পে ৫২ কোটি ১১ লাখ টাকা, চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের আওতায় এয়ারপোর্ট রোডসহ বিভিন্ন সড়কের উন্নয়ন ও গুরুত্বপূর্ণ অবকাঠামোগত উন্নয়নে ৫০০ কোটি টাকা এবং স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের অধীনে বৃহত্তর চট্টগ্রাম গ্রামীণ অবকাঠামো উন্নয়ন প্রকল্প-৩ এ ২২৮ কোটি ৭৫ লাখ টাকা, তিন পার্বত্য জেলায় দুর্যোগে ক্ষতিগ্রস্ত পল্লী সড়ক উন্নয়ন প্রকল্পে ১৭ কোটি ৮৩ লাখ টাকা, রাঙ্গামাটির কারিগরপাড়া থেকে বিলাইছড়ি পর্যন্ত সড়ক উন্নয়ন ও ব্রিজ/কালভার্ট নির্মাণ প্রকল্পে ৯১ কোটি ৫০ লাখ টাকা, কক্সবাজারের উখিয়া ও টেকনাফ উপজেলার পানি সরবরাহ ও স্যানিটেশন কার্যক্রমে জরুরি সহায়তা প্রকল্পে ২৯০ কোটি টাকা, জরুরি ভিত্তিতে রোহিঙ্গা সংকট মোকাবিলায় মাল্টি-সেক্টর প্রকল্পে ১৪৪ কোটি ৫০ লাখ টাকা বরাদ্দ রয়েছে।
সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন ৯ প্রকল্পে ২৫৯৩ কোটি ৮৬ লাখ বরাদ্দ রাখা হয়েছে। এর মধ্যে সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগের মাতারবাড়ি কয়লা নির্ভর বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্র নির্মাণ সওজ অংশের প্রকল্পে ১১০ কোটি ৬৮ লাখ টাকা, সীমান্ত সড়ক (রাঙ্গামাটি, খাগড়াছড়ি ও বান্দরবান পার্বত্য জেলা) নির্মাণ প্রকল্পে ৮৯৫ কোটি টাকা, চট্টগ্রাম-রাঙ্গামাটি জাতীয় মহাসড়কের হাটহাজারী থেকে রাউজান পর্যন্ত সড়কাংশ চার লেনে উন্নীতকরণে ১০০ কোটি টাকা, কক্সবাজার-টেকনাফ সড়ক (এন-১) উন্নয়ন প্রকল্পে ১৭০ টাকা, কক্সবাজারের একতাবাজার থেকে বানৌজা শেখ হাসিনা ঘাঁটি পর্যন্ত সড়ক উন্নয়নে ১০০ কোটি টাকা, রাঙ্গামাটি সড়ক বিভাগের অধীন পাহাড়/ভূমি ধসে ক্ষতিগ্রস্ত সড়কের বিভিন্ন কিলোমিটারে ড্রেনসহ স্থায়ী প্রতিরক্ষামূলক আরসিসি রিটেইনিং ওয়াল নির্মাণে ৪০ কোটি টাকা, আনোয়ারা উপজেলা সংযোগ সড়কসহ কর্ণফুলী টানেল সংযোগ সড়ককে ৪ লেনে উন্নীতকরণ প্রকল্পে ৪৩ কোটি টাকা, কক্সবাজার-টেকনাফ মেরিন ড্রাইভ সড়ক প্রশস্তকরণে ৪০০ কোটি টাকা এবং সেতু বিভাগের অধীনে কর্ণফুলী নদীর তলদেশে বহু লেন টানেল নির্মাণ প্রকল্পে ৭৩৫ কোটি ১৮ লাখ টাকা।
গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের অধীনে ৮ প্রকল্পে বরাদ্দ রয়েছে ২২৪৪ কোটি ২৯ লাখ টাকা। এর মধ্যে চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের চট্টগ্রাম শহরের লালখান বাজার থেকে শাহ আমানত বিমানবন্দর পর্যন্ত এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে নির্মাণ প্রকল্পে ৬৫০ কোটি টাকা, কর্ণফুলী নদীর তীর বরাবর কালুরঘাট সেতু থেকে চাক্তাই খাল পর্যন্ত সড়ক নির্মাণে ৬৮৫ কোটি ৬৮ লাখ টাকা, চট্টগ্রাম শহরের জলাবদ্ধতা নিরসনকল্পে খাল খনন, সম্প্রসারণ, সংস্কার ও উন্নয়ন প্রকল্পে ৫৮০ কোটি টাকা, প্রিপারেশন অব চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন মাস্টারপ্ল্যান প্রকল্পে ১৩ কোটি ৬১ লাখ টাকা, গণপূর্ত অধিদপ্তরের চট্টগ্রাম শহরে পরিত্যক্ত বাড়িতে সরকারি আবাসিক ফ্ল্যাট ও ডরমিটরি ভবন নির্মাণ প্রকল্পে ৫৮ কোটি টাকা, চট্টগ্রামের ৩৬টি পরিত্যক্ত বাড়িতে সরকারি কর্মকর্তা/কর্মচারীদের জন্য আবাসিক ফ্ল্যাট নির্মাণ প্রকল্পে ১৫০ কোটি টাকা, চট্টগ্রামের পাঁচলাইশ আবাসিক এলাকায় আধুনিক সুযোগ-সুবিধা সম্পন্ন জাতিসংঘ সবুজ উদ্যান উন্নয়ন প্রকল্পে ৭ কোটি টাকা এবং কক্সবাজার উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের কক্সবাজারের মহাপরিকল্পনা প্রণয়ন শীর্ষক সমীক্ষা প্রকল্পে ১০০ কোটি টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছে।
পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন পানি উন্নয়ন বোর্ডের ৮ প্রকল্পে ৬৮৮ কোটি ৮৪ লাখ টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছে। এরমধ্যে চট্টগ্রাম জেলার উপকূলীয় এলাকার পোল্ডার নম্বর-৬২ (পতেঙ্গা), পোল্ডার নম্বর ৬৩/১এ (আনোয়ারা) পোল্ডার নম্বর ৬৩/১বি (আনোয়ারা এবং পটিয়া) পুনর্বাসন ৮৫ কোটি টাকা, চট্টগ্রাম জেলার মিরসরাই উপজেলায় বাংলাদেশ অর্থনৈতিক অঞ্চল (বেজা) বন্যা নিয়ন্ত্রণে সড়ক-বেড়িবাঁধ প্রতিরক্ষা এবং নিষ্কাশন প্রকল্পে ২০০ কোটি টাকা, চট্টগ্রামের সাতকানিয়া ও লোহাগাড়া উপজেলায় সাঙ্গু এবং ডলু নদীর তীর সংরক্ষণ প্রকল্পে ৪৮ কোটি ৮৪ লাখ টাকা, কক্সবাজার-মিয়ানমার সীমান্ত এলাকার নিরাপত্তা উন্নতকরণে উখিয়া ও টেকনাফ উপজেলায় নাফ নদী বরাবর পোল্ডারগুলো (৬৭/এ, ৬৭, ৬৭/বি ও ৬৮) পুনর্বাসন ৫০ কোটি, চট্টগ্রামের রাঙ্গুনিয়া ও বোয়ালখালী উপজেলা এবং রাঙ্গামাটির কাপ্তাই উপজেলায় কর্ণফুলী ও ইছামতি নদী এবং শিলক খালসহ অন্যান্য খালের উভয় তীরের ভাঙন রক্ষায় ৭০ কোটি টাকা, চট্টগ্রাম মহানগরীর বন্যা নিয়ন্ত্রণ, জলাবদ্ধতা নিরসন ও নিষ্কাশন উন্নয়নে ১০০ কোটি টাকা, চট্টগ্রামের পটিয়ায় বন্যানিয়ন্ত্রণ, নিষ্কাশন ও সেচপ্রকল্পে ১২০ কোটি টাকা, পটিয়ার শ্রীমাই খালে মাল্টিপারপাস হাইড্রোলিক এলিভেটর ড্যাম নির্মাণে ১৫ কোটি টাকা।
অন্যদিকে, রেলপথ মন্ত্রণালয়ের অধীনে দোহাজারী থেকে রামু হয়ে কক্সবাজার এবং রামু থেকে মিয়ানমার সীমান্তের গুনদুম পর্যন্ত সিঙ্গেল লাইন ডুয়েল গেজ ট্র্যাক নির্মাণ প্রকল্পে বরাদ্দ রাখা হয়েছে ১৪০০ কোটি টাকা। শিল্প মন্ত্রণালয়ের অধীনে চট্টগ্রামের রাউজান বিসিক শিল্প নগরীর প্রকল্পে ১৯ কোটি ৮৬ লাখ টাকা এবং মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের অধীনে দুই প্রকল্পে কক্সবাজার জেলায় শুঁটকি প্রক্রিয়াকরণ শিল্প স্থাপন ২৯ কোটি টাকা ও পার্বত্য চট্টগ্রাম অঞ্চলে মৎস্য সম্পদ উন্নয়ন প্রকল্পে বরাদ্দ রয়েছে ১৮ কোটি টাকা।
এছাড়া পরিবেশ, বন ও জলবায়ু মন্ত্রণালয়ের অধীনে রাঙ্গুনিয়ার শেখ রাসেল এভিয়ারি অ্যান্ড ইকোপার্কের দ্বিতীয় পর্যায়ের কাজের জন্য ২০ কোটি টাকা, কক্সবাজারে অবস্থিত বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব সাফারি পার্কের উন্নয়ন ও সম্প্রসারণ প্রকল্পে ৩০ কোটি টাকা, মহামায়া ইকো পার্কের জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণ ও প্রতিবেশ উন্নয়ন প্রকল্পে ৮ কোটি ৬০ লাখ টাকা, কক্সবাজারের সবুজ বেষ্টনী সৃজন ও প্রতিবেশ পুনরুদ্ধার এবং ইকো ট্যুরিজম উন্নয়ন প্রকল্পে ১০ কোটি টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছে।