‘অখণ্ড ভারত’ মানচিত্র নিয়ে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া ঢাকায়

নিজস্ব প্রতিবেদক

ভারতের নতুন সংসদ ভবনে বাংলাদেশসহ এই অঞ্চলের দেশগুলোকে নিয়ে ম্যুরালের মাধ্যমে অখণ্ড ভারতের যে মানচিত্র ফুটিয়ে তোলা হয়েছে, তা নিয়ে প্রতিক্রিয়া হয়েছে বাংলাদেশের রাজনৈতিক অঙ্গনে, সৃষ্টি হয়েছে বিতর্ক। ঢাকায় বিভিন্ন রাজনৈতিক দল এ ধরনের মানচিত্রে বাংলাদেশকে অংশ করায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছে। এসব দল এর নিন্দা ও প্রতিবাদ জানানোর পাশাপাশি মানচিত্রটি অপসারণেরও দাবি করেছে।

ভারতে এমন মানচিত্র তৈরির ঘটনার নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছে বিএনপি। দলটি বলেছে, এটি স্বাধীন–সার্বভৌম বাংলাদেশের জন্য অপমানজনক। তবে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ বিষয়টাতে কোনো প্রতিক্রিয়া দেয়নি। দলটির নেতারা বলেছেন, ভারতের সংসদ ভবনে এ ধরনের মানচিত্রের মাধ্যমে কী বোঝানো হচ্ছে, সেটা তাঁরা জানার চেষ্টা করবেন।

universel cardiac hospital

বাংলাদেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে যোগাযোগ করা হলে এ ব্যাপারে তাৎক্ষণিক কোনো বক্তব্য পাওয়া যায়নি। রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের অনেকে মনে করেন, এ ব্যাপারে বাংলাদেশ সরকারের পক্ষ থেকে ভারতের কাছে ব্যাখ্যা চাওয়া উচিত।

ভারতের সংসদ ভবনে ম্যুরালের মাধ্যমে অখণ্ড ভারতের যে মানচিত্র আঁকা হয়েছে, সেই মানচিত্রে রয়েছে আফগানিস্তান, পাকিস্তান, নেপাল, বাংলাদেশ, শ্রীলঙ্কা ও মিয়ানমার। এ নিয়ে নেপালে ইতিমধ্যে প্রতিক্রিয়া হয়েছে। এখন প্রতিক্রিয়া হয়েছে বাংলাদেশেও।

এ প্রসঙ্গে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, অন্য দেশের (ভারত) অখণ্ড মানচিত্রে বাংলাদেশকে যুক্ত করার বিষয়টি গ্রহণযোগ্য নয়। তিনি এর নিন্দা ও প্রতিবাদ জানান।

এর ব্যাখ্যা দিতে গিয়ে মির্জা ফখরুল বলেন, বাংলাদেশ একটি স্বাধীন–সার্বভৌম দেশ। মুক্তিযুদ্ধের মধ্য দিয়ে এই দেশ স্বাধীন হয়েছে। ফলে অন্য কোনো দেশের অখণ্ড মানচিত্রে বাংলাদেশকে দেখানোটা দেশের স্বাধীনতা–সার্বভৌমত্বের জন্য হুমকি। এটি বাংলাদেশের জন্য অপমানজনক।

বামপন্থী কয়েকটি দল শনিবার (৩ জুন) বিবৃতি দিয়ে ভারতে এ ধরনের মানচিত্র তৈরির নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছে। এর মধ্যে বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির (সিপিবি) সভাপতি মোহাম্মদ শাহ আলম ও সাধারণ সম্পাদক রুহিন হোসেন (প্রিন্স) বিবৃতিতে বলেছেন, ভারত সরকার হীন রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে আপত্তিকর এবং বিভ্রান্তিমূলক মানচিত্রের এই ম্যুরাল স্থাপন করেছে। সিপিবি নেতারা অবিলম্বে এটি অপসারণের দাবি জানান।

সিপিবি নেতারা আরও বলেন, ভারতের ক্ষমতাসীন উগ্র সাম্প্রদায়িক ভাবাদর্শের বিজেপি সরকার তথাকথিত হিন্দুত্ববাদ প্রতিষ্ঠার পরিকল্পনাকে অগ্রসর করার জন্য এই অখণ্ড ভারতের মানচিত্রের ম্যুরাল স্থাপন করেছে।

অখণ্ড ভারতের এই ম্যুরাল প্রতিবেশী দেশগুলোর সঙ্গে ভারতের সম্পর্কের অবনতি ঘটাবে বলে মনে করেন সিপিবি নেতারা।

তাঁদের বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ম্যুরালটি সাম্প্রদায়িক সহিংসতা উসকে দিতে পারে, যা এই অঞ্চলের শান্তি, স্থিতিশীলতা ও নিরাপত্তার জন্য খুবই উদ্বেগজনক।

বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক গতকাল এক বিবৃতিতে এ মানচিত্র তৈরির ঘটনায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। তিনি বলেছেন, অখণ্ড ভারত মানচিত্রে বাংলাদেশসহ এই অঞ্চলের দেশগুলোকে অংশ হিসেবে দেখানো হয়েছে, এটি এসব দেশের স্বাধীনতা–সার্বভৌমত্ব ও জাতীয় নিরাপত্তার জন্য হুমকি।

এই রাজনৈতিক দলগুলো দাবি করেছে, বাংলাদেশ সরকার যেন অবিলম্বে ঘটনার ব্যাপারে ভারতের কাছে প্রতিবাদ জানায়।

রাজনৈতিক বিশ্লেষকদেরও অনেকে বলেন, বিষয়টাতে ভারতের উদ্দেশ্য তাঁদের কাছে পরিষ্কার নয়।

লেখক ও গবেষক মহিউদ্দিন আহমদ বলেন, ১৯৪৭ সালে ভারত বিভক্তি দেশটির রাজনীতিকদের অনেকে মেনে নেয়নি। তাদের ভেতর অখণ্ড ভারতের আকাঙ্ক্ষা থাকতে পারে।

তবে ভারত আসলে এ ধরনের মানচিত্র এঁকে কী করতে চাইছে, সে ব্যাপারে বাংলাদেশ সরকারের পক্ষ থেকে ভারতের কাছে ব্যাখ্যা চাওয়া উচিত বলে মহিউদ্দিন আহমদ মনে করেন।

শেয়ার করুন