চলতি বছরের জানুয়ারি মাসের তুলনায় জুনে বৃদ্ধি পেয়েছে বেশির ভাগ নিত্যপণ্যের দাম। বেশ কিছু পণ্য রয়েছে, যেগুলোর দাম প্রতি মাসেই দফায় দফায় বেড়েছে। পেঁয়াজ ও আদার দাম বৃদ্ধি পেয়ে প্রায় দ্বিগুণ হয়েছে। আয়ের সঙ্গে এই বাড়তি ব্যয়ের হিসাব মেলাতে পারছে না সীমিত আয়ের মানুষ।
এদিকে পণ্যের সরবরাহ কমে যাওয়া এবং উৎপাদন ও পরিবহন ব্যয় বেড়ে যাওয়াকে দাম বাড়ার কারণ হিসেবে বলছেন ব্যবসায়ীরা। টাকার অবমূল্যায়নের কারণেও বেশ কিছু আমদানি পণ্যের দাম বেড়ে গেছে।
রাজধানী ঢাকার মহাখালী, রামপুরা, বাড্ডাসহ বিভিন্ন বাজারে গত ১ জানুয়ারি খুচরায় দেশি পেঁয়াজ প্রতি কেজি বিক্রি হয় ৩৫ থেকে ৪০ টাকা দরে। এপ্রিল মাসের প্রথম সপ্তাহ পর্যন্ত পেঁয়াজের কেজি ছিল ৩৫ থেকে ৪০ টাকা।
মে মাসের প্রথম সপ্তাহে দাম বেড়ে প্রতি কেজি পেঁয়াজ বিক্রি হয় ৫০ থেকে ৬০ টাকায়।
শনিবার (৩ জুন) রাজধানীর বাজারগুলোয় প্রতি কেজি পেঁয়াজ বিক্রি করা হচ্ছিল মানভেদে ৮০ থেকে ৯০ টাকায়।
রাষ্ট্রায়ত্ত বিপণন প্রতিষ্ঠান ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) প্রতিদিনের বাজারদরেও পেঁয়াজের দাম বৃদ্ধির প্রমাণ পাওয়া গেছে। টিসিবির বাজারদর হিসেবে ১ জানুয়ারি পেঁয়াজের কেজি ছিল ৩৫ থেকে ৪৮ টাকা। সেই পেঁয়াজের দাম বেড়ে গত ১ জুন হয় ৭৫ থেকে ৮০ টাকা।
১ জানুয়ারি রাজধানীর বাজারগুলোয় প্রতি কেজি দেশি কেরালা জাতের আদা বিক্রি করা হয় ১৮০ থেকে ২০০ টাকা দরে। বাজারে আদার সরবরাহ সংকট দেখা দেওয়ায় দাম বেড়ে চলতি মাসে বিক্রি হচ্ছে ৩২০ থেকে ৩৩০ টাকা কেজি দরে। আমদানি করা কেরালা আদার দাম ছিল প্রতি কেজি ২০০ থেকে ২২০ টাকা, সেটি এখন বিক্রি হচ্ছে ৩৪০ থেকে ৪০০ টাকায়। তবে চীনা বড় আকারের আদার আমদানি বন্ধ থাকায় বাজারে সরবরাহ নেই। ফলে এই আদা প্রতি কেজি ৪৫০ থেকে ৫০০ টাকা পর্যন্ত বিক্রি হচ্ছে।
রাজধানীর বাজারগুলোয় প্রতি কেজি খোলা চিনির দাম জানুয়ারির প্রথম সপ্তাহে ছিল ১১০ থেকে ১১৫ টাকা। কয়েক দফায় দাম বেড়ে এখন তা বিক্রি হচ্ছে ১৪০ টাকা কেজি দরে।
১ জানুয়ারি ব্রয়লার মুরগি বিক্রি হয় প্রতি কেজি ১৪৫ থেকে ১৫০ টাকা দরে। ফেব্রুয়ারিতে দাম বেড়ে বিক্রি হয় ১৮০ থেকে ১৯০ টাকা কেজি দরে। এক মাসের ব্যবধানে মার্চে কেজিতে ৫০ টাকা বেড়ে ২৩০ থেকে ২৪০ টাকায় বিক্রি হয়। এপ্রিলে কেজিতে ১০ টাকা কমে ২২০ থেকে ২৩০ টাকায় বিক্রি হয়। মে মাসে আবার কেজিতে ১০ টাকা বেড়ে ২৩০ থেকে ২৪০ টাকা হয়। গত এক মাসের ব্যবধানে মুরগির দাম কিছুটা কমে জুনের শুরুতে প্রতি কেজি ২০০ থেকে ২২০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
টিসিবির বাজারদরের তালিকায় ১ জানুয়ারিতে ব্রয়লার মুরগির কেজি ছিল ১৪০ থেকে ১৬০ টাকা। ১ জুনের তালিকায় দেখা যায় ব্রয়লার মুরগির দাম হয়েছে ১৯০ থেকে ২০০ টাকা। এই মাসগুলোতে মুরগির দাম কয়েক দফা ওঠানামা করেছে।
এ ছাড়া ১ জানুয়ারি দেশি রসুনের কেজি ছিল ১১০ থেকে ১২০ টাকা, দাম বেড়ে এখন বিক্রি হচ্ছে ১৫০ থেকে ১৬০ টাকায়। আমদানি করা প্রতি কেজি রসুনের দাম ছিল ১৪০ থেকে ১৫০ টাকা, সেই রসুন শনিবার রাজধানীর বিভিন্ন বাজারে বিক্রি হয় ১৫০ থেকে ১৭০ টাকায়। জানুয়ারির প্রথম সপ্তাহে ডিমের হালি ছিল ৪০ থেকে ৪৫ টাকা, দাম বেড়ে এখন তা বিক্রি হচ্ছে ৫০ টাকায়।
গত ছয় মাসে বাজারগুলোয় পেঁয়াজ ও আদার দাম বেড়ে প্রায় দ্বিগুণ হওয়ায় এই পণ্য দুটির চাহিদা ও বিক্রি কমেছে বলে ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন।
দফায় দফায় নিত্যপণ্যের মূল্যবৃদ্ধির বিষয়ে মহাখালী কাঁচাবাজারে আসা এক ক্রেতা বলেন, ‘বাজারে সব জিনিসের দাম বেড়ে যাওয়ায় গত ছয় মাসে আমার পরিবারে বাজার খরচ চার-পাঁচ হাজার টাকা বেড়ে গেছে। কিন্তু ছয় মাসে আমার এক টাকাও আয় বাড়েনি। এতে বাধ্য হয়ে খরচ কমাতে তালিকা কাটছাঁট করা হয়েছে। তার পরও সংসার চালাতে আমাকে হিমশিম খেতে হচ্ছে।’
এই বিষয়ে জানতে চাইলে কনজিউমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) সভাপতি গোলাম রহমান বলেন, নিত্যপণ্যের দাম অস্বাভাবিক বেড়ে যাওয়ায় ভোক্তারা কষ্টে আছে। যেহেতু বাজারে এখন পেঁয়াজের সরবরাহ কমে গেছে, তাই সরকার আমদানির অনুমতি দিতে পারে। তাহলে পেঁয়াজের বাজারটি নিয়ন্ত্রণে আসবে। আমদানির দিকে নির্ভর না করে দেশে যাতে উৎপাদন বাড়ানো যায়, সেদিকে আরো গুরুত্ব দিতে হবে। তবে বাজারে যেভাবে পণ্যের দাম বেড়েছে, এতে ব্যবসায়ীদের বড় সিন্ডিকেট কাজ করছে। তাই বাজার মনিটরিং জোরদার করা দরকার। একই সঙ্গে বাজারে সরবরাহ স্বাভাবিক রাখতে ভোগ্য পণ্যের আমদানি ঠিক রাখতে হবে।