যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বাধীন সামরিক জোট ন্যাটোতে সুইডেনের অন্তর্ভুক্তির আবেদনে ভেটো না দিতে তুরস্কের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন ন্যাটো প্রধান জেনস স্টলটেনবার্গ। সামরিক এই জোটটিতে স্টকহোমের সদস্যপদ বিলম্বিত করার আপত্তিগুলো কাটিয়ে উঠতে চলতি মাসে বৈঠকের আগে এই আহ্বান জানালেন তিনি।
রোববার (৪ জুন) রাতে এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আল জাজিরা।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়্যেপ এরদোয়ান এবং তার নবনিযুক্ত পররাষ্ট্রমন্ত্রী ও গোয়েন্দা সংস্থার সাবেক প্রধান হাকান ফিদানের সাথে রোববার ইস্তাম্বুলে সাক্ষাৎ করেন ন্যাটো মহাসচিব জেনস স্টলটেনবার্গ।
পরে তিনি সাংবাদিকদের বলেন, ‘ন্যাটোর সদস্য করা হলে তা সুইডেনকে নিরাপদ করবে, একইসঙ্গে এর মাধ্যমে ন্যাটো ও তুরস্ক আরও শক্তিশালী হবে।’
স্টলটেনবার্গ আরও বলেন, ‘আমি যত তাড়াতাড়ি সম্ভব (ন্যাটোতে) সুইডেনের যোগদান চূড়ান্ত করার অপেক্ষায় রয়েছি।’
আল জাজিরা বলছে, তুরস্ক, সুইডেন এবং ফিনল্যান্ডের কর্মকর্তারা আগামী সপ্তাহে সুইডেনের ন্যাটো সদস্যপদ বিলম্বিত হওয়ার সমস্যাগুলো সমাধান করার চেষ্টা করার জন্য বৈঠক করবেন বলে স্টলটেনবার্গ বলেছেন।
তুরস্ক গত মার্চের শেষের দিকে ফিনল্যান্ডের ন্যাটোতে যোগদানের অনুমোদন দিলেও সুইডেনের বিষয়ে আপত্তি অব্যাহত রেখেছে। তুরস্ক বলেছে, স্টকহোম জঙ্গি গোষ্ঠীর সদস্যদের আশ্রয় দিচ্ছে। এছাড়া হাঙ্গেরি এখনও সুইডেনের বিড অনুমোদন করেনি।
তুরস্কের অনুমোদন পাওয়ার পর ফিনল্যান্ড গত এপ্রিলে ন্যাটোর ৩১তম সদস্য হয়। ট্রান্সআটলান্টিক এই জোটে যোগদানের জন্য ৩১টি সদস্য দেশের সবগুলোরই অনুমোদন পেতে হবে।
মূলত পবিত্র কোরআন পোড়ানোর ঘটনার আগে থেকেই সুইডেনের সঙ্গে তুরস্কের বিবাদ ছিল। ২০১৬ সালে তুরস্কে ব্যর্থ সামরিক অভ্যুত্থান চেষ্টা চালায় সেনাবাহিনী ও দুষ্কৃতকারী চক্র। অভ্যুত্থান ব্যর্থ হওয়ার পর ওই চক্রের অনেকে সুইডেনে পালিয়ে যান।
তুরস্ক সুইডেনের কাছে ওই দুষ্কৃতকারীদের দীর্ঘদিন ধরে ফেরত চেয়ে আসছে। এছাড়া কিছু কুর্দি সন্ত্রাসীও সুইডেনে বসবাস করেন। তাদেরও যেন ফেরত পাঠানো হয় এ দাবি করে আসছে আঙ্কারা।
তবে ‘সুইডেন তুরস্কের উদ্বেগ মেটাতে গুরুত্বপূর্ণ দৃঢ় পদক্ষেপ নিয়েছে’ উল্লেখ করে স্টলটেনবার্গ বলেছেন, দেশটি তার সংবিধান সংশোধন করেছে, তার ‘সন্ত্রাস বিরোধী’ আইনকে শক্তিশালী করেছে এবং তুরস্কের ওপর থেকে অস্ত্র নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করে নিয়েছে।
উল্লেখ্য, গত বছরের ফেব্রুয়ারিতে ইউক্রেনে রাশিয়ার আগ্রাসন ফিনল্যান্ড ও তার প্রতিবেশী সুইডেনকে ন্যাটোর সদস্যপদ পাওয়ার জন্য আবেদন করতে বাধ্য করে। এর মধ্য দিয়ে গত কয়েক দশক ধরে সামরিক এই জোট থেকে দূরে থাকার নীতি পরিত্যাগ করে দেশ দু’টি।
ন্যাটোতে ফিনল্যান্ডের সদস্যপদ পাওয়ার পথে শেষ বাধা ছিল তুরস্ক। কিন্তু গত মার্চের শেষের দিকে তুরস্কের সংসদ হেলসিঙ্কির আবেদন অনুমোদনের পক্ষে ভোট দেয়। তবে সুইডেনের ন্যাটোতে যোগদানের আবেদনে তুরস্কের আপত্তি এখনও বহাল রয়েছে।
মূলত নতুন কোনও দেশ ন্যাটোর সদস্য হতে চাইলে বর্তমান সদস্য দেশগুলোর প্রত্যেক দেশকে এর অনুমোদন দিতে হবে। বাধা কাটিয়ে ফিনল্যান্ডের কপাল খুললেও তুরস্ক ও হাঙ্গেরি এখনও সুইডেনের আবেদন অনুমোদন করেনি।